প্রথম ম্যাপিং:
কাজের প্রথম দিন স্যার রোবটিক্স ল্যাবে যেতে বললেন। ২ টা টার্ম বুয়েটে পার করলেও দৌড় ছিল শুধু ফিজিক্স, ক্যা্মিস্ট্রি, বড়জোর এম সি এল ল্যাব পর্যন্ত। আমি মনে মনে তাই রোবটিক্স ল্যাব এর কথা শুনে খুশী হয়েছিলাম। ল্যাব এ গিয়ে দেখা হল বনি ভাইয়া, রাসেল ভাইয়া আর রাকিব ভাইয়াদের সাথে। তখন বুঝলাম যে যতটা অকাজের কাজ মনে করছি তেমন মনে হয় না। ল্যাব এর পিসিতে নেট এর স্পীড দেখে আর ভাল লাগল। ফ্রী ফ্রী নেট ইউজ করার মজাই আলাদা…
তো আমরা দুই গ্রূপ হয়ে কাজে বেড়িয়ে গেলাম। আমি আর আমার বন্ধু সাজ্জাদ ছিলাম একসাথে।আমাদের এলাকা ছিল বুয়েট-নিলখেত-সিটি কলেজ-রাইফেলস স্ক্যায়ার-বসুন্ধরা-শেরাটন-শাহবাগ-বুয়েট। কাজ তেমন কিছু না। যে জায়গাগুলো মার্ক করতে চাই সেখানে গিয়ে জিপিএস মেশিন এর একটা বাটন চাপা। ব্যাস নিয়ে নিলাম ওই জায়গার longitude,latitude, altitude সহ সব geo-data..
পুরান ঢাকা ম্যাপিং:
এর মধ্যেই ম্যাপিং নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। নেট এ গুতাগুতি করে অনেক কিছু দেখলাম। গোগল ম্যাপ থাকতেও কেন ওপেন স্ট্রীট ম্যাপ, কিভাবে এডিট করতে হয়, ডাটা কি কাজে লাগে ইত্যাদি অনেক কিছু। এটুকূ বুঝলাম বাংলাদেশের মত দেশে কেন এটা দরকার। যাক ওপেনস্ট্রীটম্যাপ কেন, কি কাজে লাগে, কিভাবে ব্যাবহার করব এটা নিয়ে আরেকদিন কথা বলব। আজকে গল্পই বলি।
পুরান ঢাকা ম্যাপ এ কিছু নতুন মানুষের সাথে দেখা হল। AIUB-এর ইয়াদ, ০৫ ব্যাচ এর শাকিল ভাইয়া, ০৭ এর আদিল ভাইয়া, নিজের ক্লাসমেট আর বাইরের কিছু ইউনিভার্সিটির বন্ধুদের সাথে। কিভাবে জিপিএস মেশিন ইউজ করতে হয় এ সম্পরকে ছোট্র লেকচার (
চট্রগ্রাম এ যাত্রা শুরূঃ
চট্রগ্রাম এ ওপেন স্ট্রীট ম্যাপ এর একটা গ্রুপ আগেই ফরম হয়েছিল। কিন্তু কাজ তেমন কিছু হয়নি। গত মে’২০১১ তে আমরা OSM পক্ষ থেকে চিটাগং যাই। সেখানে তওহীদুল আলম স্যার ও যোবায়দা আখতার লিলি ম্যাডাম এর সহযোগীতায় আর চুয়েট এর বন্ধুদের অংশগ্রহনে একটি ওয়ার্কশপ আয়োজন করা হয়। ওয়ার্কশপ টি নিয়েছিলাম আমি ও সুবরামী মৌটুসী। আমরা আমাদের বন্ধুদের হাতে কলমে দেখাই কিভাবে জিপিএস দিয়ে ডাটা নিতে হয়, কিভাবে এডিট করতে হয়, কিভাবে ওএসএম এ আপলোড করতে হয়, কিভাবে JOSM দিয়ে ম্যাপ আঁকতে হয়। ওইদিন ই চুয়েট এ OSM এর গ্রুপ কাজে লেগে যায়। এখন যদি কেও OpenStreetMap এর সাইট দেখে তাহলে দেখতে পাবে চুয়েট ক্যাম্পাস এর পুর্ণ একটি ডিজিটাল ম্যাপ। আস্তে আস্তে এই কার্য চিটাগং এর দিকে যাবে। যখন ভাবি এর শুরুটা আমরা করে দিয়ে এসেছিলাম তখন সত্যি খুব ভাল লাগে।…
এতকিছু কেন?
কেউ হয়ত ভাবছেন এতকিছু কেন? আর আমিইবা কেন ওপেন স্ট্রীট ম্যাপ এর আপডেট এর কাজ করছি।এটাতো সরকারের করার কথা। আমি আগেও একবার বলেছি আমাদের সরকারের উপর এখন আর ভরসা করতে পারিনা। সরকার যখন ডিজিটালাইজেশন এর কথা বলে আমি মনে মনে ভাবতে চেষ্টা করি কাদের মুখে কথাটি বেশী শুনি। আর তাদের মুখগুলো যখন চিন্তা করি তখন আমার এ্কটি গল্প মনে পরে। গল্পটি এরকম,
এক অজ্ঞ এলাকাতে এক বড় হুজুর গেলেন তাদের জ্ঞান শিক্ষা দিতে। অনেকদিন তাদের অনে্ক কিছু শিখানোর পর হুজুর নিজের এলাকাতে বেড়াতে গেলেন। যাওয়ার আগে বলে গেলেন, এলাকাবাসি শোন সবাই। কয়েকদিন পর দেখবে একটা নতুন চাঁদ উঠেছে। চাঁদ দেখলে তোমরা রোযা রাখবে। তো কিছুদিন পর আকাশে চাঁদ দেখা গেল। সেদিন সন্ধায় এলাকার পাহাড় বেয়ে কিছু বাচ্চাসহ হাতি নেমে এল। এলাকাবাসি বাচ্চাগুলো সহ হাতিগুলো ধরে রেখে দিল। কিছুদিন পর হুজুর এসে জিজ্ঞাসা করলেন, এলাকাবাসি তোমরা রোযা রেখেছ তো। এলাকাবাসি বলল, জি হুজুর, শুধু রোযা না, রোযার বাচ্চাও রেখেছি।হুজুর অবশ্য তাদের ভুল ভেঙ্গে দিয়েছিলেন।
আমাদের সরকার কিছুদিন পর যদি বলে, আমরা শুধু ডিজিটালাইজেশন না, ডিজিটালাইজেশনের বাচ্চাও করব আমি অবাক হব না। কারন তাদের নাকমুখ সব বন্ধ। কোন বড় ডিজিটাল হুজুর তাদের ভাল বুদ্ধি দিলে তারা মন্রে করে এই হুজুর বিরোধীদলীয়।আর তাদের নিজেদের ডিজিটাল হুজুর তাদের সৎ বুদ্ধি দেয় না। তারা হাতি জবাই করে খাওয়ার কথা ভাবে। এলাকাবাসির জ্ঞান না থাকলে তাদের কি আসে যায়।
তাই বলে আমরা কি হাল ছেড়ে দিব। হ্যা আমি মনে করি অবশ্যই দিব যদি দেখি কোন আশা নেই। তার আগে তো কিছু করা যায়। আমি অবশ্য নিজের সুবিধার জন্যই OSM এ কাজ করি। নিজে লোকেশন বেজড সার্ভিস নিয়ে কাজ করি যার জন্য ডিজিটাল ম্যাপ আবশ্যক।তাছাড়া ম্যাপ এর ভেতরের বিষয়গোলো বুঝতে পারি যেটা আমার কাজে দেয়। এই পর্যায়ে কেউ হয়ত লাফ দিয়ে বলতে পারেন, কেন গোগল ম্যা্প আছেনা!!! অনেকেই হয়ত ইতোমদ্ধেই গোগল ম্যাপ এর সীমাবদ্ধতার কথা জানেন। ও এস এম এর সুবিধা এক কথায় বললে এটা ওপেন সোর্স।বাকি বিষয় নিয়ে আমরা আরেক লিখায় কথা বলব।
আমি নাহয় স্বার্থপর, নিজের সুবিধার জন্য OSM এ আছি। কিন্তু অবাক হই যখন জুনিয়র ব্যাচমেটদের দেখি যারা অনেকে হয়তো জানেও না লোকেশন বেজড সার্ভিস কি, এটা আর কি কি কাজে লাগবে। আমার ডাইহার্ট দেশপ্রেমিক বন্ধুরা যখন স্বাধী্নতা দিবসে ফেসবুকে কঠিন দেশপ্রেমের স্ট্যাটাস দেয়, দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবিরা চ্যানেলে গোল আর চতোস্কোন টেবিল বৈঠক করে দেশকে কঠিন ষড়যন্ত্রের হাত থেকে উদ্ধারের জন্য, তাদের এ আলোচনা শুনতে শুনতে যখন অন্যরা ঘুমিয়ে পড়ে তখন আমার এ বন্ধুরা হয়তো জিপিএস ইউনিট নিয়ে ম্যাপ এর কাজে বের হয়।তাদের হয়তো কেউ আমার মত স্বার্থে্র জন্য কাজ করে, কেউ হয়তো আনন্দ পায়, কিন্তু কেউ হয়তো কোনদিন জানবেই না তাদের আপলোড করা ডাটা কত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে ব্যাবহার হচ্ছে, কত মূমূর্ষ রোগী বেঁচে যাচ্ছে ঠিক সময়ে ঠিক বাহন পেয়ে, হসপিটাল খুঁজে পেয়ে, কত টাকা জমা হচ্ছে সরকারের কোষাগারে ট্যুরিজম থেকে, পুরান ঢাকার কত জানমাল বেঁচে যাবে ভূমিকম্পের মত কঠিন দূর্যোগের সময় আরো কত কী। আমার পক্ষ থেকে আমার এসব বন্ধুর জন্য রইল লাল সালাম।
আমার নিজের প্রাপ্তি্র লিস্টটা অনেক বড়। সবচাইতে বড় প্রাপ্তি হচ্ছে সত্যিকার অর্থে কিছু ভাল আর হৃদয়বান মানুষের সংস্পর্শে আশা, তাদের সাথে কাজ করা। কল্লোল স্যার, ফেরদাউস স্যার, তাউহীদ স্যার আর লিলি ম্যাডামদের সাথে কাজ করা। এজন্য আমার চুয়েট ক্যাম্পাস এ গিয়ে কখনোই মনে হইনি আমি আমার বাসা থেকে অনেক দূরে। বন্ধুর মত আমাদের সাথে আচরন করেছেন স্যার আর ম্যাডামরা। আর আমার সিনিয়র ভাইয়াদের সহযোগিতা দেখে মাঝে মাঝে আমার গর্ব করে বলতে ইচ্ছা হয় আমি বুয়েটিয়ান।
সবশেষে OSM এর একটি সাফল্যে্র কথা বলে শেষ করি। OSM ব্যাবহার করে ইতোমদ্ধেই আমরা আমাদের প্রথম স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন ‘লোকেশন বেইজড ইনফরমেশন সিস্টেম’ তৈরি করেছি। এটা তৈরি করেছি আমি এবং সুবরামী মৌটুসী। এটা চুয়েটে ‘ইন্টার ইউনিভারসিটি প্রোজেক্ট শো-২০১১’ তে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।এ সম্পর্কে আরেকদিন কথা হবে। দেখা হবে আরেকদিন লোকাল ট্রেনে…
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১১ ভোর ৫:৪০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



