একটা তিক্ত সত্য আর একটা সহজ স্বীকারক্তির মন খারাপের গল্প বলছি।
ব্লগে অনেকদিন বসা হয়না, আজ হঠাৎই একটা ঘটনায় কিছুটা অস্থিরতা জাগানো অনুভূতি নিয়ে লিখছি। চিকিৎসক পেশার কারনেই আমাকে ভিন্ন ভিন্ন পেশা আর শ্রেণীর মানুষের কাছাকাছি আসতে হয়। আজ আমার এক রোগীর গল্প বলছি....
নাম: মো: আব্দুস সালাম
বাড়ী: বরগুনা, পাথরঘাটা, চুনুরিয়া গ্রাম।
পেশা: চোরাই কাঠের ব্যবসা (সুন্দরবনের সুন্দরী কাঠ)
কর্মক্ষেত্র সম্মন্ধে তার এই নির্বিকার স্বীকারক্তিতে কিছুটা বাকরুদ্ধ হয়ে যাই। এই কাজের আইনগত বাধার ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করায় তার সহজ উত্তর ছিলো,"এইডাতো বাপ-দাদার পেশা আর আইনের লোকেরাই কয়েক বান্ডিল টাকা নিয়া এইডা করতে দ্যায়।"
আব্দুস সালামের কর্মজীবন একজন সাধারন গাছ কাটার কর্মী হিসেব শুরু হলেও এখন সে নিজেই একটা চোরাই কাঠের ব্যবসার দল পরিচালনা করে। প্রতিমাসে সুন্দরবনের আঞ্চলিক বনকর্মকর্তার কাছে সে পৌছে দেয় পাঁচশত টাকার নোটের চারটা বান্ডিল (২ লক্ষ টাকা) যার বিনিময়ে তার দলকে সংশ্লিষ্ট ফরেষ্ট রেঞ্জে দেয়া হয় দশ দিনের গাছ কাটার অনুমতিপত্র(?)। এমনকি বনবিভাগের অফিস থেকেই প্রতি দলকে একটা করে ওয়ারলেস সেটও দেয়া হয়, হঠাৎ সরকারের উচ্চপর্যায়ের কোন লোকদেখানো সারপ্রাইজ ভিজিটের ব্যাপারে সাবধান করার জন্য। প্রতিমাসেই তার দল প্রায় ৫০০-৬০০ গাছ কেটে আনে। আর আমাদের মহান বনকর্মকর্তা ও পুলিশ বাহিনীর ছত্রছায়ায় এবং মহান কালো সাংবাদিকতার আড়ালে তা বিক্রিও হয়ে যায় বিনাবাধায়। প্রতিমাসে বনবিভাগ, পুলিশ এবং স্থানীয় সংবাদপত্র প্রতিবেদককে খুশি করতে তার খরচ হয় প্রায় দশ লক্ষ টাকা, তারপরও লাভ থেকে যায় ১৫-২০ লক্ষ টাকা।
এমন শত শত আব্দুস সালাম প্রতিদিনই এভাবে বন উজার করেই চলেছে। আর তারই সুযোগ নিয়ে আমাদের সমাজ রক্ষার দায়িত্বে থাকা কিছু মানুষ ঘুমায় টাকার বালিশ আর টাকার বিছানায় ।
হয়তো এভাবেই একদিন পৃথিবীর সপ্ত প্রাকৃতিক আশ্চর্যের একটা শেষ হয়ে যাবে। আমরা নিজেরাই পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য বলেই হয়তো.....
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১০ সকাল ১১:২৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




