somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিয়াল দের বাড়ি

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবির বাড়িটি অনেকের কাছেই হয়তো পরিচিত। এখানে ফারুকী-তিশা-মোশারফ করিম গং একমাসেরও বেশি সময় ধরে থেকেছেন ও ‘টেলিভিশন’ ছায়াছবিটির অনেকটুকু শুটিং সম্পন্ন করেন। আমাদের বাড়ির লাগোয়া হওয়ায় ওদের পুরো শুটিং দলের মধুর অত্যাচার আমাদের যেমন সহ্য করতে হয়েছে, তেমনি আমাদের ও আশেপাশের দশগ্রামের সাধারণ মানুষও ভেঙে পড়ে শুটিং দেখার জন্য। ছোটবেলা থেকেই এটিকে আমরা শিয়াল দের বাড়ি হিসেবে জানি। সামনে খালে বাঁধানো ঘাট, সেটা শিয়াল দের ঘাট। মানুষের নাম কিভাবে শিয়াল হয়? কেন শিয়াল হল সেটা পরে বলছি।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন শিয়াল দেদের মত মানুষদের যখন ঘোর অমানিশা, পদে পদে বিপদ, মৃত্যু যখন ছেলেখেলা স্বাধীনতাবিরোধীদের কারণে, অন্যান্য হিন্দুদের মত শিয়াল দে তখন দেশ ছেড়ে কলকাতা চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেন। সেইসময় আমার দাদুকে যারপরনাই অনুরোধ করেছেন বাড়িটি কিনে নেয়ার জন্য। দাদু শিয়াল দের অনুরোধ উপেক্ষা করে গেছেন। দাদু বলেন, “শিয়াল, তোকে কে কী বলবে? আমরা অন্যদের যেভাবে রক্ষা করছি, তোকেও সেভাবে আশ্রয় দেব, রক্ষা করব, কেউ কিছু বলবে না”। শিয়াল দে ভরসা পায় না। দু'দিন আগেই পালের বাড়ি পুকুরপাড় একসাথে সাতাশজন হিন্দুকে গুলি করে মারল পাকিস্তানী মিলিটারি! শান্তিকমিটি আর রাজাকাররা অহরহ ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের বাড়ি তখন আশপাশের শত হিন্দুর আশ্রয়স্থল। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বড় বড় ডেকচিতে রান্না হতো। দাদুর তখন ব্যবসা মন্দা যাচ্ছিল, মিরকাদিমের এগারটি আড়ত বা গদির প্রায় সবগুলোই বন্ধ। হিন্দুদের আশ্রয় দেয়া ও মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করায় দাদুকে মিলিটারি ক্যাম্পে আটক থাকতে হয় বেশ কয়েকদিন। দাদু সংসারের কথা চিন্তা করে জীবনকে বাজি রাখতে পারেননি, টাকার বিনিময়ে মুক্তি পেয়েছিলেন। প্রচণ্ড পিটুনির ফলে দাদুও অসুস্থ হলেন, মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লেন। দাদুকে সবাই কর্তা বলতো। শিয়াল দে বলেন, "কর্তা, আপনের বাড়ি কেনা লাগব না, শুধু দলিলটা রাইখা দেন"। দাদু শিয়াল দেকে ফিরিয়ে দেন। এদিকে সপ্তাখানেক বাদেই শিয়াল দে লাপাত্তা বা কলকাতা পাড়ি জমালেন। কেউ জানল না। সবাই জানল শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান সামাদ বেপারী বাড়িটি কিনেছেন, দলিলও নাকি আছে। সামাদ বেপারী বিস্তর টাকা-পয়সার মালিক। তার কয়েকমাস বাদেই সেই বাড়ির মালিক হলেন মুন্সি। শোনা গেল যে সামাদ বেপারীর নাকি দেনা ছিল তারই কর্মচারী মুন্সির কাছে, আর সেই দেনা শোধ করতে না পারায় শিয়াল দের বাড়িটি মুন্সিকে লিখে দেন সামাদ বেপারী। মুন্সির সংসারে একডজন মুখ, অভাব যখন চরমে, তখন বর্তমান মালিক জাপান প্রবাসী স্থানীয় শরফুদ্দিনের কাছে বিক্রয় করেন বছর পনের আগে। শরফুদ্দিনের বোন জ্যোৎস্না আমার সহপাঠি ছিল। ওর ছোটভাই আশরাফউদ্দিন আমার ছোটভাইয়ের সাথে পড়ত।
মুন্সির বড় ছেলের নাম দরবেশ, আধপাগল, এখন চেয়ে চিন্তে খায়। বাপ বাড়ি বিক্রি না করলে আজ এইবাড়ির মালিক থাকত! গ্রামে গেলে দেখা হলেই বলবে, “ভাই, এতদিন পর দ্যাশে আইছস। ক্যান আইছস? তোরা তো অহন শিকড় ভুইল্যা গেছস। তোগো পোলাপাইনেরা তো কাউরেই চিনব না। দে, দুইশ টাকা দে”।
শিয়াল দে নেই, শিয়াল দের মালিকানা নেই, তবুও এটি শিয়াল দের বাড়ি হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে, শিয়াল দের ঘাট। ছেলেবেলা শিশু শিয়াল দেকে শুইয়ে রেখে মা স্নান করতে যান ঘাটে। এস দেখেন শিশু নেই! কান্নাকাটি, হৈচৈ, শোরগোল, খোঁজখোঁজ! কোথাও নেই শিশু! কখন কে যেন শুনতে পেল পাশেই পানের বরজের ভেতর থেকে শিশুর কান্নার শব্দ! বরজের ভিতরে শিয়ালের গর্তে শিশুটি, বোকা শিয়াল সবে শিশুটির কাঁধের কিছু অংশ খেয়েছে!
তারপর শিশুটি ঠিকঠিক চিকিৎসায় বেঁচে উঠল।
তারপর? তারপর নাম রাখা হল “শিয়াল দে”।
তারপর? তারপর! “আমার কথাটি ফুরোল, নটে গাছটি মুড়োল...”
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:১৭
১টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×