somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নেই কোন অনুশোচনা তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও বিচার নেই ঢাবিতে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাতে দেড় বছরে রেকর্ড ১২ শিক্ষক লাঞ্ছিত

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আওয়ামী ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হাত থেকে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষকরাও ছাড় পাচ্ছে না। বর্তমান সরকারের দেড় বছরের শাসনামলে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেকর্ড অন্তত ১২ জন শিক্ষক লাঞ্ছিত হয়েছেন। মাত্র দেড় বছরে এত শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন লাঞ্ছিতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুরোপুরিই ব্যর্থ হয়েছে। শিক্ষকদেরকে লাঞ্ছিত করার পর তাদের মধ্যে নেই কোন অনুশোচনা। বরং তারা গর্ব করে বলে ‘‘আমরা ছাত্রলীগ নেতা’’। আমাদের দ্বারা সবকিছুই সম্ভব। সর্বশেষ গত ১০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন পাঁচজন শিক্ষক।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার সাথে সাথে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা তাদের সেই বিধ্বংসী, আক্রমণাত্মক রূপ ধারণ করে। তারা ধারাবাহিকভাবে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধ ভর্তিবাণিজ্য, সাধারণ ছাত্রদের ওপর অমানবিক নির্যাতন, মনোরঞ্জনের জন্য ছাত্রীদেরকে বিভিন্ন মন্ত্রী এমপিদের বাসায় পাঠানোসহ অনেক অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে দেখিয়েছে। তাদের এই অবিশ্বাস্য, অমানবিক কর্মকান্ডের কারণে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের শীর্ষস্থানীয় অনেকেই মুখে মুখে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলছেন। অথচ অনেকের অভিযোগ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় অনেকেই পরোক্ষভাবে ছাত্রলীগকে এখনো নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
জানা যায়, গত ১০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে ফুটবল টুর্ণামেন্টের সেমিফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। খেলায় পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ অংশগ্রহণ করে। এ সময় পালি বিভাগ ইতিহাস বিভাগের কাছে ৩-০ গোলে হেরে যায়। হেরে যাওয়ায় পালি ও বুদ্ধিস্ট বিভাগের অধিনায়ক ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনু বিজয়ীদের ওপর চড়াও হন এবং রেফারির বাক-বিতন্ডায় সাথে জড়িয়ে পড়েন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হাতে প্রহৃত এবং লাঞ্ছিত হন ইসলামের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান, প্রভাষক একেএম ইফতেখারুল ইসলাম খান, মোহাম্মদ মাহামুদুর রহমান ও পালি বিভাগের অধ্যাপক ড. বিমান চন্দ্র বড়ুয়া।
এদিকে প্রহেলা বৈশাখে বিশেষ খাবার পবিবেশন করার সময় এএফ রহমান হলে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আবদুস সাত্তার এবং আবাসিক শিক্ষক এম আসাদুজ্জামানকে লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগ ক্যাডার রেজা সেকান্দার ও তার বাহিনী। এ সময় দুই শিক্ষককেই হল অফিসে তালা ঝুলিয়ে কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে প্রক্টরের সহায়তায় তাদেরকে মুক্ত করা হয়। একপর্যায়ে প্রভোস্ট আবদুস সাত্তারকে পদত্যাগ করাতে বাধ্য করে ছাত্রলীগ। এদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, একই হলের নতুন প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমানকেও লাঞ্ছিত করেছে ছাত্রলীগ শীর্ষ ক্যাডার রেজা সেকান্দার।
এ বছরই ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হাতে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ফজলুল হক মুসলিম হলের সাবেক প্রভোস্ট অধ্যাপক মোজাম্মেল হক। ছাত্রলীগ ক্যাডাররা তাকেও প্রভোস্টের দায়িত্ব থেকে সরে যেতে বাধ্য করে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু হলের ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট ড. বায়তুল্লাহ কাদেরীকে দীর্ঘদিন ধরে পদত্যাগ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করছে। গত মে মাসে তার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন দাবি নিয়ে কয়েকদফা আন্দোলনও তারা করেছে। হলের ভেতরে ও বাহিরে তারা হল প্রভোস্টের বিরুদ্ধে আপত্তিকর পোস্টারও ছাপিয়েছে। একপর্যায়ে বায়তুল্লাহ কাদেরী প্রভোস্ট পদ থেকে অব্যাহতি চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ স্থানীয়দের নির্দেশে সিদ্ধান্ত বদলে ফেলেন।
এদিকে গত ২৭ জুলাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হাসান ফরায়েজিকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মেরে রক্তাক্ত করে ছাত্রলীগ। জানা যায় হাজী মুহাম্মদ মুহসিন হলের ছাত্রলীগ ক্যাডাররাই তার ওপর এ বর্বর হামলা চালায়।
এছাড়াও গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ভর্তি পরীক্ষার সময় বাণিজ্য অনুষদের ব্যবস্থাপনা বিভাগের এক শিক্ষক সূর্যসেন হল ছাত্রলীগ সভাপতি সাঈদ মজুমদারের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন। এদিকে ২০০৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগ নেতা ভূ-তত্ত্ব বিভাগের ছাত্র খায়রুল হাসান জুয়েলের হাতে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছিলেন ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষক ড. এম ইলিয়াস আলী। এজন্য সে সময় তাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এছাড়াও বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ পর্যন্ত আরো অনেক শিক্ষক নানাভাবে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাতে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনার তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মুজিব-বাদী ছাত্রলীগ ক্যাডারদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।
ছাত্রলীগের ক্যাডারদের হাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গায়ে হাত দেয়ার ঘটনা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। এর কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম, ঐতিহ্য ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। যা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। যারা শিক্ষকদেরকে লাঞ্ছিত করে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না নিলে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতেই থাকবে। ছাত্রলীগের ব্যাপারে সুষ্ঠু পদক্ষেপ নিতে তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পশ্চিমা ইসলামবিদ্বেষ থেকে বাংলাদেশের ইসলামপন্থি রাজনীতি

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৬


আমি যখন কানাডায় বসে পাশ্চাত্যের সংবাদগুলো দেখি, আর তার পরপরই বাংলাদেশের খবর পড়ি, তখন মনে হয় - পশ্চিমা রাজনীতির চলমান দৃশ্যগুলো বহু পথ পেরিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহে আলো-ছায়ায় প্রতীয়মান... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×