এবার পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেকে পাঠানো হচ্ছে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দুতাবাসগুলোতে। খবরে প্রকাশ, এ জন্য বিদেশে অবস্থিত ৬১ টি দূতাবাসে নতুন করে ৩৬৬ টি পদ সৃষ্টি করা হবে । এজন্য কম করে হলেও সরকারের অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। যা গরীব একটি দেশের অর্থনীতির জন্য মোটেই সুখকর নয়।
আমার জানামতে, বর্তমানে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের মিশনগুলোর লোকবল পর্যাপ্তই আছে। নতুন করে আর খুব বেশী লোকবল বাড়ানো ঠিক হবে না। কারণ, এখন যারা আছে তাদেরকে যদি সঠিক ভাবে কাজে লাগানো যায় তাহলে প্রবাসীদেরকে সঠিক সেবা প্রদান করা সম্ভব। প্রবাসীদের কনসুলার সেবা দেবার জন্য প্রয়োজন সুশিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনী। এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধাবীদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়েই করা সম্ভব। বিদেশে প্রবাসীরা কি কি সমস্যার সম্মুখীন হন, তাদেরকে কারা প্রতারণা করে, দেশে টাকা পাঠাতে তারা কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন, অসুস্থ হলে তারা সেবা পান কিনা, তারা কোন ধরনের অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ে কিনা এই সবই কনসুলার সেবার বিষয়।এই কাজটি সুচারুভাবে করতে পারবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনসুলার বিভাগ। এ বিভাগটিকে আরো বেশী শক্তিশালী করতে হবে।
বর্তমানে বিদেশে অবিস্থত দূতাবাসগুলোর বেশীর ভাগই অলস সময় কাটায় কারণ। মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, ইউরোপে-আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার কটি মিশন ছাড়া বেশীর ভাগ মিশনেই তেমন কোন কাজ নেই। বেশীর ভাগ কর্মচারীই অলস সময় কাটায়। তাই ঢালাও ভাবে সব দেশে পাসপোর্ট অফিসের লোকজনদেরকে পদায়ন করলে প্রশাসন আরো বেশী লোকবলভারে জর্জরিত হবে। তাই নতুন লোক না নিয়ে পুরাতন পদগুলোকে বেশী বেশী কাজ দেয়া উচিত।
যে সব দেশে প্রবাসী বাংলাদেশীর সংখ্যা বেশী যেমন সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়া সেই সব দেশে যাতে প্রবাসীরা দ্রুত পাসপোর্ট পেতে পারে সেই জন্য সেই সব দেশে অবিস্থত মিশনে পাসপোর্ট শাখা গঠন করা যেতে পারে। এতে করে দেশের উপর খরচের বোঝা কমবে।
প্রবাসী শ্রমিকরা যেহেতু একটি দেশেই প্রায় সময় থাকে তাই তাদের পাসপোর্টে র পাতাগুলো অব্যবহৃ থেকে যায় । তাই তাদের জন্য প্রদত্ত পাসপোর্টের মেয়াদ ৫ বছর না করে ১০ বছর করা যেতে পারে। এতে করে তারা তাদের পাসপোর্টটি ১০ বছর ধরে ব্যবহার করতে পারবে। ৫ বছর পর আবার নবায়ন করার ঝামেলা থেকে তারা রেহাই পাবে। দূথাবাসগুলোও পাসপোর্ট নবায়ন করার চাপ থেকে মুক্ত থাকতে পারবে। ফলে অন্যান্য কনসুলার সেবার মান বাড়ানো সম্ভব হবে। বিষয়টি ভেবে দেখা প্রয়োজন।
ঢালাও ভাবে সব দেশে পাসেপার্টে বানানোর মেশিন পাঠানোর যুক্তি কম। কারণ বিদেশে এমন অনেক মিশন আছে যেখানে প্রতিদিন ১টা-২টার বেশী পাসপোর্ট ইস্যু হয় না। সেই সব মিশনে মেশিন না দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েই একটি পাসপোর্ট কেন্দ্র খোলা যেতে পারে। মিশনগুলো আবেদন পত্র ব্যাগ যোগে পাঠাবে। আর পাসপোর্ট কেন্দ্র আবেদনপত্র অনুযায়ী পাসপোর্ট নবায়ন/নতুন পাসপোর্ট তেরী করে ব্যাগযোগে মিশনে পাঠাবে। এতে করে টাকার সাশ্রয় হবে। মনে রাখা দরকার যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। বাংলাদেশে অবিস্থত বিদেশী মিশনসমুহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেই তাদের ভিসা সংগ্রহ করে।
যারা বাংলাদেশে পাসপোর্ট বানিয়েছেন তারা সবাই পাসপোর্ট অফিসের ঘুষ আর টু পাইসের শিকার হন এটা না বললেই চলে। দেশ থেকে বিদেশে দূর্নীতি সম্প্রসারিত হবার সুযোগ প্রসারিত হতে পারে। তাই বিষটি বিবেচনার করার দাবি রাখে।
২৯ মে ২০১২ তারিখে প্রকাশিত ঢাকার ইংরেজি দৈনিক ইনডিপেডেন্ট এর খবর অনুযায়ী, বিদেশে অবস্থিত ৬১ টি মিশনে পাসপোর্ট অফিসের লোক জনকে পাঠানো হবে। আগে এই কাজগুলো করত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা যে খুব একটা খারাপ কাজ করত তা নয়। তবে একটি সীমাবদ্ধতা ছিল যে তাদেরকে কোন রকম প্রশিক্ষণ দেয়া হত না। নিজে নিজে কাজ শিখে তারা প্রবাসী বাংলাদেশীদের সেবায় নিয়োজিত ছিল।
নতুন করে পাসপোর্ট অফিসের লোকদেরকে ৬১ টি মিশনে পাঠাতে হলে নতুন করে ৩৬৬ টি পদ সৃষ্টি করতে হবে। তারপর তাদেরকে পাঠাতে হবে। এই কাজে কম করে হলেও বছরে প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা দরকার হবে। বর্তমান লোকদেরকে দিয়ে কাজ চলতে পারলে কেন এই বিরাট অংকের টাকা খরচের বোঝা জনতার উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে?
আমার ব্যক্তিগত মতামত হচ্ছে-- বাংলাদেশের সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে সব চেয়ে মেধাবী হলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। শুনতে অবাক লাগলেও বিষয়টি ঠিক যে বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জন এমএলএসএস- শিক্ষাগত যোগ্যতায় এম এ পাস হন। অত্যন্ত চৌকষ আর জ্ঞানী না হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি পাওয়া যায় না।
পার্সপোর্ট অফিসে চাকরি জীবন শুরুই হয় ঘুষ দিয়ে। প্রতি দিন ঘুষ না খেলে যাদের ভাত হজম হয় না তারা মিশনে গিয়ে বাংলাদেশীদের সেবা করবেন না অত্যাচার করবেন না ভাবলেই গা শিউড়ে উঠে।
ইংরেজি দৈনিক ইনডিপেডেন্ট এর খবর অনুযায়ী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথেষ্ট দক্ষ আর কর্মঠ নন। তারা উপযুক্ত সার্ভিস দিতে পারেন না। এটা মনে হয় মনগড়া কথা। বাংলাদেশের সব চেয়ে মেধাবীরাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আছেন। এটা সবারই জানা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যথেষ্ট দক্ষ আর কর্মঠ নন এটা মেনে নেয়া যায় না।
এবার আসা যাক মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট আর ভিসা নিয়ে। আমি মনে করি না মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট আর ভিসা তৈরী করা খুব একটা কঠিন কাজ।
যন্ত্রে পাঠযোগ্য/মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের কাজ মূলত ২টি পৃষ্ঠা নিয়ে । কম্পিউটারে/ পিসিতে তথ্য টাইপ করে মেশিনের সাহায্যে পাসপোর্টের ২ টি পাতায় প্রিন্ট নিতে হবে। এই হল মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের কাজ।
আর মেশিন রিডেবল ভিসার কাজ আরো সহজ। পিসিতে নাম, ঠিকানা, পাসপোর্ট ডিটেইলস টাইপ করার পর একটি স্টিকারে তা প্রিন্ট নিতে হবে। এই প্রিন্ট করা স্টিকারটি ভিসার জন্য আবেদনকারীর পাসপোর্টের একটি পাতায় আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিতে হবে। এই হল মেশিন রিডেবল ভিসার কাজ।
নবায়ন করার কাজটি হবে পানির মতো কিংবা আরো সহজ।
পিসিতে কাজ করার ফলে এক জন ব্যক্তি একা করলেও কম পক্ষে ১০০ পাসপোর্ট বানাতে পারবে। যদি বর্তমানে মিশনগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে সামান্যতম প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তাহলে এক জন লোকের পক্ষে প্রতিদিন ১০০টি নতুন পাসপার্ট প্রিন্ট করে বের করা কোন কঠিন কোন কাজ নয়। এই জন্য মিশনগুলোতে পাসপোর্ট অফিস থেকে শত শত লোক আনার কোন দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।পাসপোর্ট আর ভিসার মতো সামান্য কাজ যেখানে জটিল গাণিতিক কোন ব্যাপার জড়িত নেই সেটা তারা কেন পারবে না?
সবার আগে আমাদের প্রয়োজন প্রশিক্ষণ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেহেতু কূটনৈতিক পাসপোর্ট প্রদানের বিষয়টি দেখে তাই পাসপোর্ট/ভিসা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েই সফল ভাবে করা সম্ভব।
তাই আমার ব্যক্তিগত মতামত হল- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে মিশনে পাঠানো হোক। প্রয়োজনে তাদের মাঝে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব জাগিয়ে তোলা যেতে পারে।
আমাদের গরীব দেশ। নতুন করে মিশনগুলোতে নতুন নতুন পদ সৃষ্টি করে পৃথক শাখা তৈরী করলে দূর্নীতি বাড়বে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুন, ২০১২ বিকাল ৪:৫১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




