somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প দা তি ক

১৩ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লিংক--- পদাতিক/১৯



২০
ঊর্মিলার গ্রেফতারের খবর স্থানীয় পত্রিকায় আগেই বেরিয়েছিল। এবার বেরোল গল্প। বস্তির অবৈধ কাজ-কারবার নিয়ে। বেশ সরস, রগরগে। গল্পের কেন্দ্র বিন্দু ঊর্মিলা। ব্যবসাটা তার তেলে ভাজা না অন্য কিছু? পার্শ্বচরিত্রে আরও অনেকে। সুবোধ, কমল, জাহানারা ওরফে শিবানী তো আছেই।

ব্যাস, ওতেই কাজ হয়েছে। মহিলা সংগঠনের মধ্যে শুরু হয়েছে টানা পোড়েন। কেউ বলছে—মানে কী, এভাবে একটা নিষিদ্ধ পল্লী গজিয়ে উঠবে চোখের সামনে—আর আমরা বসে বসে সহ্য করবো? কেউ বলছে—আরে না না, কাগজ একটু বাড়িয়ে বলছে। বস্তি মানেই নিষিদ্ধ পল্লী নয়। হতে পারে, সেখানে কিছু অবৈধ কাজ কম্ম হয়, তাই বলে এতটা ভাবার বা উত্তেজিত হবার মত কিছু নেই। কেউ বলছে—আসলে এই বস্তিগুলো সব বিহারী আর বাংলাদেশীদের ঘাঁটি। ক্রাইম করাটাই ওদের পেশা। রাজ্যটাকে এরা সব মিলে শেষ করছে। নেতা পুলিশ ফিট। না হলে কবেই-তো শালাদের গুলি করে মারার কথা।
মহিলা সংগঠন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের কর্মসুচি স্থগিতও রাখল। এর মধ্যে সুযোগ বুঝে পুলিশ একদিন অনেকগুলো দোকান ভাঙল। মদের বোতল ভাঙল। তাতে জায়গাটা অনেকক্ষণ দেশি মদের গন্ধে আমোদিত হয়ে থাকল। দূর থেকে, আড়াল আবডাল থেকে কেউ কেউ দেখল আর নিজের কপাল চাপড়ালও। কিন্তু কোন ক্ষোভ দানা বাঁধলও না।

জীবিকা আইনি হউক আর বেআইনি হউক, তা বেশি দিন স্থগিত থাকতে পারে না। একটু একটু করে আবার দোকানও খুলতে হলো। সময়ের নিয়মে পরিস্থিতি একসময় কিছুটা শান্ত হয়ে এল। সন্ধের পর ধীরে ধীরে সতর্কতার সঙ্গে মদ বিক্রিও শুরু হলো।
এরমধ্যে একদিন সমীর, মানস, অরিন্দমরাও এল। কিছু কিছু খবর বৃত্তান্ত শুনে নিজেরাও খুব মানবিক মতামত দিল। দোষারোপ করলো মিডিয়ার প্রতি। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে যারপরনাই বিরক্তি প্রকাশ করলো। তবে এর মধ্যেই যতটা সম্ভব দ্রুত কিছুটা পান করে নিল। দেবেনের কথা অনুযায়ী বুঝলো আবহাওয়া ভাল নয়। তাড়াতাড়ি করাই ভাল। ধরা পড়লে পরিণতি যাই হউক বদনাম হবে খুব। আর একবার বদনাম হলে তা মুছে ফেলা খুব মুস্কিল।

বস্তির কেউ পুলিশে ধরা পড়লে সাধারণত বস্তির লোক খুব বেশি মাথা ঘামায় না। এটা তাদের জীবন যাপনের অঙ্গ হিসবেই দেখা হয়। বিশেষ কোন ক্রিমিনাল না হলে পুলিশও জানে কেস দিয়ে খুব একটা কিছু হয় না। মাঝ খানে হয়রানি হয় নিজেদের। তাই স্থানীয় বন্দোবস্থে এক কি দু’দিনের মধ্যেই ছাড়া পেয়ে যায়। স্থানীয় বন্দোবস্থে ঘুষের কথা মুখ ফুটে কেউ যেমন বলে না, তেমনি পুলিশের বিরুদ্ধেও কারোর বিশেষ রা নেই। কিন্তু ঊর্মিলার ক্ষেত্রে ঘটনা একটু অন্য রকম হয়ে গেলো। বস্তির সবাই মনে করে ঊর্মিলা নির্দোষ,স্বামী পরিত্যক্তা, নিরুপায় একজন মহিলা। সে অসৎ নয়। সে অপরাধীও নয়। কার বউ নিয়ে কে পালাবে তার দায় ঊর্মিলার ঘাড়ে কেন আসবে? তার দায় চাপিয়ে তাকে হেনস্থা করাটা ঘোরতর অন্যায়। বিশেষত বস্তির মহিলারা এই ব্যাপারে মুক্ত-কণ্ঠ। তার মধ্যে পারুল, যে ঊর্মিলার অসহায় সন্তানদের সেদিন থেকে আগলে রেখেছে, সে একজন প্রথম সারির প্রতিবাদী। তারা এরমধ্যে একদিন থানায় গিয়ে ঊর্মিলার সঙ্গে দেখা করে এসেছে। তাকে দু’ একটা কাপড় চোপড় দিয়ে এসেছে। চেয়েছিল কিছু খাবার কিনে দিতে, কিন্তু পুলিশ বারণ করেছে। বলেছে নিয়ম নেই। খাবার এখান থেকেই দেয়া হয়।
কথা বলে এসেছে বড় বাবুর সঙ্গে। বড়বাবু বলেছে—আমার কিছু করার নেই রে, বুঝিসই-তো উপরের ব্যাপার স্যাপার। পারুলরা জানে—এগুলা সব মিছা কথা—বড়বাবুর লব্জ কথা। কিন্তু তবু পারুলরা বড়বাবুকেই মিনতি করে বলেছে—ছ্যার, জানেনই-তো আমরা গরীব মানুষ—বাবুদের বাড়িতে ঝি-গিরি করে খাই—এখন ঊর্মিলার ছানাপোনাদেরও তো রাখতে হচ্ছে, খাওয়াতে হচ্ছে—আমরার আর কী করার আছে—আপনি দয়া করেন ছ্যার। বড়বাবু বললেন—ঠিক আছে দয়া করব, কিন্তু তার আগে সুবোধ নামের ছেলেটিকে ধরে নিয়ে আয়। না পারিস-তো বল কোথায় আছে ঐ মেয়েটাকে নিয়ে--। বড়বাবুর কথা শুনে পারুলরা সবাই প্রায় সমস্বরে বলে উঠল—তারে আমরা কই পাব ছ্যার—আমরার উপর এই দায় দিয়েন না ছ্যার--। বড়বাবু মিটি মিটি হেসে এবার বললেন—আচ্ছা, ঠিক আছে, তাহলে বল অন্যের বউ নিয়ে পালানো কাজটা খুব খারাপ না, না? পারুল একটু সাহস পেয়ে আবার বলতে শুরু করল—খারাপ হইব না ক্যান ছ্যার, খারাপ কাজই-তো—কিন্তু, মাফ করবেন ছ্যার, কার বউ এর কথা কইলেন বুঝলাম না। বড়বাবু খুব ঠান্ডা গলায় বললেন—কেন কমলের বউ, চিনিস-না মনে হচ্ছে। মাফ করবেন ছ্যার, চিনব না ক্যান, তয় ঐ মাইয়া কমলের বউ কিনা আমরা কিন্তু জানি না। বড়বাবু এই কথা শুনে চোখ বড় করে তাকালেন, বললেন—কস কি রে! বউ না-তো কী?এক ঘরেই-তো থাকতো শুনেছি। পারুলের দলের সবাই মুখে কাপড় দিয়ে খুক খুক করে হাসলো। তারমধ্যেই পারুল বলল—ছ্যার ছুটু মুখে বড় কথা হইয়া যাইব—অপরাধ নিয়েন না—কমলের এরকম বউ আগেও ছিল—কী জানি কী হয়—পরে আর থাকে না—এরেও এভাবেই নিয়া আসে—শুনছিত মাইয়া বাংলাদেশের—আমরা গরীব মানুষ এতশত খোঁজও করিনা, জানিও না ছ্যার।
পারুলদের চার পাঁচ জনের দলটি বড়বাবুর ঘরে মাটিতে বসে আছে। বড়বাবু একমনে কাজ করে যাচ্ছেন। মাঝে মাঝে ওদের কথায় মিটি মিটি হাসছেন আর ফোঁড়ন কাটছেন। এবার বললেন—হ্যারে, ঐ দিন তোরা নাকি পুলিশদের গালি দিছস--। পারুল চমকে গিয়ে বলে—ছ্যার, মিছা কথা কমু না। গরীব মুখ্যু মানুষ আমরা—ঐ দিন কী বলছি না বলছি, মাথার ঠিক ছিল না— আপনার পা’য় ধরি ছ্যার—হের সোয়ামী থাকতেও নাই, আর বাচ্চাগুলানের কান্দনে আমরার মাথার ঠিক ছিল না—ভুল কইরা ফালাইছি—মাফ কইরা দ্যান ছ্যার—ঊর্মিলারে ছাইরা দ্যান—
বড়বাবু ফাইল গুছিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন—যা এখন, কালকে কোর্টে আসিস—দেখি কী করা যায়। একজন কনস্টেবলকে ডেকে বললেন—এই প্রহ্লাদ, এদের জলধরের দোকান থেকে চা বিস্কুট দিতে বলতো। তোরা এখন ওঠ।
পারুলরা বড়বাবুর ব্যবহারে অবাক। তারা চটপট উঠে পড়লো । থানা চৌহদ্দির এক কোণে জলধরের দোকানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চা বিস্কুট খেলো। চলে যাওয়ার আগে কনস্টেবলকে একবার অনুরোধ করে ঊর্মিলার সঙ্গে দেখা করেও গেল। (ক্রমশঃ)
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:৩০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×