মেঘ রাশি,
তুমি আমাকে কি দিয়েছ...? কিংবা আমিই তোমাকে কি দিতে পারলাম। সে হিসেব করতে গেলে শিউরে উঠি । আমার ভয় করে নিজেকে একজন প্রতারক ভাবতে আর বিপন্ন লাগে প্রতারিত ভাবতে। আমি তোমার কাছে নিরন্তর তীব্র শিহরণ চেয়েছিলাম।তুমি যেন কি চাইতে...এখন আর মনে পড়ে না। তবে এখন যেটা চাও সেটাকে আর যাই বলা যাক অনব আবেগীয় সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার রসদ বলা যায় না। বেশি দিন টিকবে বলে যেমন করে তুমি একটা টুথ ব্রাশ কেন, তেমনি একটি নির্ভরতা এখন তোমার চাওয়া। নিত্য ব্যবহারে যা ক্ষয়ে যায় প্রতিক্ষনে...
অথচ তোমার নিকট আমি প্রত্যহ একটি আলোড়ন হতে চেয়েছি, হতে চেয়েছি কিছু ছন্ন ছাড়া রোদের শরীর, যেখানে তোমার কালো মেঘের শরীর স্নাত হয়ে শূভ্র হবে শরত আকাশের মতন। আমি চেয়েছিলাম তোমার দিনলিপি প্রতিনিয়ত বদল হবে- হাসবে, কাঁদবে বিদ্রোহ করবে আবার জড়িয়ে ধরে ইউরেকা বলবে। যখন ঘাসের জমীন জলে ভিজে যায় তখন তোমার প্রেম খেলা করবে রংধনুর মতন।
আর তুমি কিনা চাইলে নির্ভরতা!! একঘেয়ে মনোটনাস জীবণ... কিন্তু আমি তোমাকে ভালবেসেছিলাম তাই রোদন রুপসি বৃষ্টির জন্য হাহাকার করে মরেছি একলা বিকেলে, নিথর সন্ধ্যায়। তোমার নির্ভরতার আকুতিময় চোখ আমাকে জীর্ণ করেছে।
এক সময় তুমি যখন কবিতা পড়তে তোমার চোখে ভেরের শিশির দেখা যেত, তুমি যখন উচ্চারণ করতে-“ জোছনাকে সাথে নিলে আমাকেও নিতে হবে” তখন আমি হয়ে যেতাম তোমার সেই সুবো্ধ আকুতি। যেন পাল্টে ফেলা হবে সময়ের সীমানা- অনন্তে থাকবো আমরা দুজন।
তুমি বলতে ৩০০ বছর ধরে ওরা খেতে পায় না কেন? রাস্তার ধারে পড়ে থাকা হাড্ডির স্কাল্পচার...অন্নহীন মানুষদের ব্যর্থ দিনে তুমি চাইতে বিপ্লবী হয়ে যেতে অথচ সামরিক খবরদারির চরম বিপন্ন যুগেও তুমি যখন সংসার স্বপ্নে বুদ হয়ে এড়িয়ে যাও দুঃসময়কে আমার ভীষণ কষ্ট লাগে তোমাকে সমুন্নত দেখতে না পারার গ্লানিতে। আজ একজন আদর্শ মা একজন আদর্শ ঘরকন্যা- এই-ই তোমার মলিন স্বপ্নের স্বর্ণ শিখর। আমি ভালবেসেছিলাম একজন পরিপূর্ন মানুষকে।
ঘর সাজাবার জন্য আদর্শ কয়েদির প্রয়োজন নেই, কাম নিবারনের জন্য মাংসল স্তুপের দরকার নেই, দরকার নেই বাচ্চা বিয়ানো মেশিনেরও। বাজার দরে ওসব পাওয়া যায়। আমার আক্রমনে কষ্ট পেলেও ভুল বুঝনা। তোমাকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে কল্পনা করা আমার অপরাধ ছিল না। আমি একজন আদর্শ সেচ্ছা বন্দিনিকে ভালবাসতে পারিনা। জীবনের অপচয়ে আমি পিড়িত হই।
তোমার ভেতর আজ আর কোন আন্দোলন নেই। প্রতিবাদী মিছিলের স্রোত দেখলে এখন তোমার বিরক্ত লাগে। হেলাল হাফিজের কবিতাও তোমাকে আর জাগাতে পারেনা। তোমাকে আগ্রহী করে শাড়ী আচল, লিপস্টিকের রঙ, স্বর্নালংকারের ডিজাইন, টিভিতে বউ শাশুড়ির যুদ্ধ, কিংবা পাশের বাসার ননদ ভাবির ঝগড়া।
আমার মনে পড়ে যায় তুমি এক সময় লিখতে- “যদি কেউ থাকে অসহায়/ তাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিও/ তার চোখে চোখ রেখে আমি তার বুনো হাহাকার কেড়ে নেবো/ তাকে ফিরিয়ে দেবো কদম ফুলের ছোয়া, বেলি ফুলের ঘ্রাণ ”
তোমার সেই মন আজ কোথায় হারালো। সংসার নামক অশ্লিল জগত কি এতটাই পাল্টে দেয় জীবণের আনন্দময়তাকে??
বড়ই অসহায় লাগে আমার...
মেঘ রাশি, আমি একটি বোঝা বয়ে বেড়াতে অক্ষম, তোমার সাথে আমি আর থাকতে পারছি না। আমার সমস্ত অস্তিত আজ ব্যথাময়, ভীষণ ক্লান্ত লাগে এখন। আমি তোমার একান্ত নিজস্ব সম্পত্তি নই, তোমাকেও তা বানাতে চাইনি কখনো। আমি তোমার আনন্দ আর বিষাদের কারণ হতে চেয়েছি, অশ্রু আর অগ্নির কারণ হতে চেয়েছি প্রত্যহ। তাই তোমার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি , তাতে যদি তোমার মনে বিষাদ জাগে- অভ্যাস পতনের জন্য নয়, আলোড়ন স্তব্দ হবার জন্য , তবে আমি তোমার অভাবে এক ফোটা চোখের জল ফেলবো।
ঘাস ফড়িং এর দল আজ ভোরেও শিশিরে ভিজেছে, আমাদের প্রেম বরং কুয়াশায় ঢাকা থাক। রোদ উঠলেই আমি হারাবো। তুমিও মেঘের শরীর ছড়িয়ে দিও আকাশের গায়ে।
ভালো থেকো মিইয়ে যাওয়া আমার বিষাদ জাগা আলো খেলার আত্মাজন।
ইতি
তোমার ফেলে যাওয়া রোদের দিন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




