ধর্মের অজুহাতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সব ধর্মেই ঘটে, কিন্তু মুসলামান কেউ হত্যা করলে ঘটনাটা যেভাবে প্রচার করা হয়, অন্য ধর্মের লোকেরা হত্যা করলে ততটা প্রচার পায় না।বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবনার সুযোগ রয়েছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে থাকি বলে অন্য ধর্মের বিষয়গুলো আমরা খুব একটা অনুধাবন করি না। একটা ট্রেন্ড তৈরি হয়েছে- অমুসলিম কেউ ধর্মের কারণে খুন করলে সেটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা অন্যকিছু, কিন্তু মুসলিম কেউ ধর্মের কারণে খুন করলে সেটিকে অবশ্যই সন্ত্রাসবাদ বলা হয়।
ফিলিস্তিনে ইসরাইল অন্যায় ভাবে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ মারছে তারা সাধু, আফগানিস্তানের আমেরিকা তথা পশ্চিমারা লক্ষ্য লক্ষ্য মুসলিম মারছে তার সাধূ পাশের দাদারা কাশ্মিরের হাজার হাজার লোক মারছে তারা সাধু, ন্যাড়া বৌদ্ধরা হাজার হাজার রোহিঙ্গা মারছে বার্মায় তারা সাধু! অথাৎ ইহুদী, খ্রিষ্টান, হিন্দু এবং বৌদ্ধরা যখন কাউকে তথা মুসলিমকে হত্যা করে সেটা জায়েজ পক্ষান্তরে মুসলিমরা কাউকে না মারলেও জঙ্গী তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মুসলিমদের গায়ে জঙ্গী তকমা যেমন ইহুদী, খ্রিষ্টান, হিন্দু এবং বৌদ্ধরা লাগাচ্ছে তেমনি মুসলিমরাও মুসলিমদের গায়ে জঙ্গী তকমা লাগিয়ে দিচ্ছে।
প্রমোদ মুথালিক ভারতের হিন্দু জঙ্গী সংগঠন শ্রী রামসেনার সভাপতি। ১৯৬৬ সাল থেকে হিন্দুত্ব প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে যাচ্ছে সংগঠনটি। উগ্র সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, নৈরাজ্য সৃষ্টিসহ নানা কীর্তিকলাপের কারণে কয়েক বছর ধরেই নামটি বেশ আলোচিত। সাপ্তাহিক তেহেলকা প্রতিনিধিকে রামসেনা প্রধান মুথালিক বলছিলেন, সাধারণ মানুষ জানে, আমরা হিন্দুত্বের যথাযথ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য ভিন্ন। হিন্দুত্ব প্রতিষ্ঠার চেয়ে ভারতীয় মুসলিমদের প্রতিহত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আর এ জন্য যা প্রয়োজন, তার সবই করে যাচ্ছি আমরা । 'বিজেপির লাটিয়াল বাহিনী' খ্যাত এই সংগঠনটি সর্বপ্রথম আলোচনায় আসে ২০০৭-এ। বিশ্ববিখ্যাত চিত্রশিল্পী মকবুল ফিদা হুসেনের চিত্রপ্রদর্শনীতে হামলার মাধ্যমে। এরপর নানা কীর্তিকলাপের ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে ম্যাঙ্গালুরের 'পাব' এলাকায় প্রকাশ্য রাজপথে নারীদের ওপর আক্রমণ করে নিন্দিত হয়। ওই বছরই অভিনেতা শাহরুখ খানের 'মাই নেম ইজ খান'এর প্রদর্শনী বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ ও ছবিটির ব্যানার-পোস্টার ছিঁড়ে দেশ-বিদেশে ছবিটির প্রচার বাড়িয়ে আবারও আলোচনায় আসে।
ভারতের হিন্দু মৌলবাদীদের লক্ষ্য সাম্প্রদায়িকতাকে অবলম্বন করে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল। এরা মুসলিম-খৃস্টানের মতে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে বৌদ্ধদের উপরও চড়াও হয়। দাঙ্গা হাঙ্গামা অগ্নি সংযোগ লুটপাট ধর্ষণ প্রভৃতি চালিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে। এসব ঘটনায় মামলা মোকদ্দমা হলেও অর্থ ও রাজনৈতিক শেল্টারের কারণে পার পেয়ে যায়।
হিন্দুত্ববাদের দার্শনিক ভিত্তি হচ্ছে শঙ্করাচার্যের হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদ।১৯১৩ সালে এলাহাবাদে ‘হিন্দু মহাসভা’ ও ১৯২৫ সালে হেডগাওয়ারের উদ্যোগে নাগপুরে ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ’ গঠিত হওয়ার পর হিন্দু মৌলবাদীদের বৃত্ত গড়ে ওঠে। এ বৃত্তকে ঘিরে জনসংঘ (১৯৫১), বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (১৯৬৪), শিবসেনা (১৯৬৬), রামসেনা, ভারতীয় জনতা পার্টি (১৯৮০) এবং বজরঙ্গ দল (১৯৮৪) নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘সংঘ পরিবার’।হিন্দু জঙ্গিদের আরো ঘটনা দেখতে চাইলে এখানে দেখতে পারেন (https://goo.gl/PoS43E। সম্প্রতি ভারত সরকার যে সকল সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছে , তার মধ্যে বেশকয়েকটি হিন্দু উগ্রবাদী সংগঠন রয়েছে (https://goo.gl/gmrW0w , http://goo.gl/XVONl1) ।
একইভাবে ধর্মীয় জঙ্গি রয়েছে অসহিংস বলে পরিচিত বৌদ্ধদের মাঝেও। রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের অত্যাচার সবার জানা। রোহিঙ্গা মুসলিম বিরোধী দাঙ্গার পর থেকেই শ্রীলঙ্কায় ও মুসলমানদের ওপর অত্যাচার বেড়ে যায় । শ্রীলংকার সব মুসলমানকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন বৌদ্ধ জঙ্গি নেতা গালাগোদা আথে নানাসারা। মুসলমানদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে নিজের অনুসারীদের নির্দেশ দিয়েছেন এই বৌদ্ধ চরমপন্থী। জঙ্গি সংগঠন বৌদ্ধবলা সেনার সাধারণ সম্পাদক নানাসারা বলেন, যদি কোনো মুসলমান কোনো সিংহলিজের ওপর হাত তোলে, তাহলে সব মুসলমানকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে। শ্রীলংকাকে মুসলিম শূন্য করা হবে (http://goo.gl/6R8sAo )।
খ্রিষ্টানদের মধেও রয়েছে অসংখ্য ধর্মীয় সন্ত্রাসী গ্রুপ । ক্যাথলিক ক্লু ক্লাক্স ক্লান গ্রুপের নাম শোনেনি এমন খ্রিষ্টান খুব কম আছে। আরো রয়েছে লর্ডস রেসিসটেন্স আর্মি ,এন্টিবালাকা, ক্যাথলিক রিএকশন ফোর্স ,অরেঞ্জ ভলানটিয়ার , খ্রিষ্টান আইডেন্টিটি মুভমেন্ট ইত্যাদি । আরো দেখতে ( https://goo.gl/ExUeI8 ) ।
ইসরাইল রাষ্ট প্রতিষ্ঠা ও ফিলিস্তিনের উপর ইহুদি সন্ত্রাসীদের বর্বরতাও কারো অজানা নয় । এছাড়াও উগ্রতাবাদী ইহুদি গ্রুপ কর্তৃক জঙ্গী হামলার ঘটনাও অহরহ ঘটে থাকে ( http://goo.gl/xKXwfM) ।
বিশ্বজুড়ে সংঘটিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য ঢালাওভাবে মুসলমানদের গালমন্দ করার দিন আর নেই। এফবিআই অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৮০ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার মধ্যে শতকরা ৯৪টি ঘটনার সঙ্গে অমুসলিমরা জড়িত (https://goo.gl/1qhtUd , http://goo.gl/e6dkpg )।
আমরা নিজেরাই নিজেদেরকে জঙ্গী বানাচ্ছি! আমাদের দেশের প্রিন্ট কিংবা ইলেক্ট্রনিকস যে মিডিয়ায় হউক না কেন সকলেরই একই সমস্যা। সমগ্র পৃথিবীর মিডিয়া আজ ইহুদীদের দখলে। এর ব্যাতীক্রম ঘটেনি আমাদের দেশেও। ইহুদী, খ্রিষ্টান, হিন্দু এবং বৌদ্ধদের দোসরা আমাদের দেশের মিডিয়াতেও জেকে বসেছে।
মুসলমান কখনও জঙ্গী নয়, আর জঙ্গীরা কখনও মুসলমান নয়। ইহদী-খ্রীস্টান-হিন্দু-বৌদ্ধরা নির্বিচারে নির্মমভাবে মুসলমানদের উপর নির্যাতন করলেও ওরা কিছুইনা, তাই না?
সংকলিত
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১৯