somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মন খারাপের এক রাত্রি ও সূর্য

২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত দুইটা বেজে পনের মিনিট রুমে পিনপতন নীরবতা জ্ঞানী মুখ বুজে হাজার পাতার এক বিকট দর্শন বই নিয়ে বসে আছে। রুমে কোন ছিটকিনি নেই বলে রাতে যে কোন সময় যে ইচ্ছা আসতে পারে। এ রুম যদি সারাদিন খোলাও থাকে তারপরও কোন চোরের সাহস হবেনা একটা দেশলাইয়ের কাঠি নিয়ে যাওয়ার। অনেক্ষন ছাদে বসে থাকার পর সূর্য রুমের দিকে রওনা হল, ওর গায়ে একটা অভারঅল চোখে কালো রোদ চশমা আর পিঠে একটা বইয়ের ব্যাগ। রাতে রোদ চশমা পরে ঘুরে বেড়ানো ওর একটা স্বভাব এটা মোটামুটি সবাই জানে। জীবনে যত টাকার চশমা কিনেছে সে টাকা দিয়ে অনায়াসে একটা ফ্যাক্টরি দেওয়া যেত।

রুমে ফিরেই কোন দিক না তাকিয়ে সোজা বারান্দায় চলে এল এসে দেখল কয়লা গুইগুই করে কান্নাকাটি করছে। সূর্য অনেক চেষ্টায় ও কোন কথা বের করতে না পেরে ওর পাশে দাড়িয়ে থাকল। কিছুক্ষণ পর জ্ঞানী বলল রোমান্স ইমোশন যোগ বিয়োগের কান্না। মানুষ হচ্ছে সব থেকে বোকা ইমোশোনাল প্রানী যারা কিছু না বুঝেই হাসে আবার কিছু না হলেও কেঁদে অস্থির হয়। অদ্ভুত মানুষ জ্ঞানী, এ কথা বলেই আবার নিজের কাজে মন দিল। সূর্য যা বোঝার বুঝে নিয়ে কয়লার মাথায় হাত রেখে বলল দেখ " পুরুষের মন বলে কিছু থাকতে নেই, সেখানে কান্না তো মহাপাপ, একান্তই কাদতেঁ ইচ্ছা হলে হাউমাউ করে কিছুক্ষণ কেদে জগতে মন দে " এ কথা শেষ করেই কয়লাকে ছাদে নিয়ে আসল। কয়লাকে বলল আমি কিছু জানতে চাই না, শুনতে চাই না আমি শুধু বলব তুই কিছুটা সময় চাদের দিকে চেয়ে থাক ভাল লাগবে। সূর্য ছাদের এক প্রান্তে বসে বসে ব্যাগ থেকে নোট বের করে লিখতে বসল।

প্রায় আধাঘন্টা পর কয়লা সূর্য কে ডেকে বলল আমার খুব কাদতে ইচ্ছা করছে, সূর্য বলল এখনো বসে আছিস কেন? হাউমাউ করে কেঁদে ফেল কোন লজ্জা নেই কেঁদে ফেল। সারাদিন যে চাপা কষ্ট মনের মধ্যে নিয়ে বসেছিল তা এবার কান্নায় তা দূর হবে এই ভেবে সূর্য মনে মনে শান্তি পেল। সূর্যের অনেক অভিযানের সাথী কয়লা তাই ওর বিপদে আপদে সূর্য সব সময় পাশে এসে দাড়ায়। সূর্য বলল দেখ আকাশের প্রতিটি তারার একটা নাম আছে আর যাদের নাম নেই তারা অপেক্ষা করে কেউ একজন তাদের একটা নাম দিবে এবং মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে তাকে দেখবে। কয়লা কান্নার দমক বন্ধ করে বলল তুই কি একটা পাগল নিকষকালো আকাশে তারা কই আর তুই তারা দেখছিসই বা কি করে। সূর্য হেসে বলল চোখ বন্ধ করে মনের চোখ দিয়ে আকাশের দিকে তাকালেই তারা দেখতে পাবি। বাইরের দুচোখ দিয়ে সব দেখা যায় না ওর সীমাবদ্ধতা আছে কিন্তু মনের চোখের কোন সীমাবদ্ধতা নেই, যেমন নেই আকাশের, মনকে আকাশের মত বড় কর দেখবি সব জ্বালা যন্ত্রনা দূর হয়ে গেছে। কয়লা সূর্য কে বলল তা তোর তারা কোনটা সূর্য বলল ওই যে এন্ড্রোমিডার পাশ দিয়ে হালকা বায়ে সরে কালপুরুষের পিছনে যে তারা ওটাই আমার ওর নাম সপ্তর্ষী, আমি খুব ছোট বেলা থেকেই ওকে চিনি, গল্প করি কথা বলি।

কয়লা অবাক হয়ে বলল তাহলে সপ্তর্ষী কোণ মেয়ের নাম না? সূর্য বলল নারে এটা কোন মেয়ের নাম না যদি এই নামে কোন মেয়ে থেকেও থাকে তাহলে তার সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলা ভীষন অন্যায় হবে। কয়লা বলল মানুষ অনেক খারাপ কেবল কষ্ট দেয় আজ সারাদিন কেউ জানতে চাইনি কেন আমার মন খারাপ কেবল তুই ছাড়া। সূর্য বলল আমিও জানতে চাইনি, আমার জানার ও কোন দরকার নেই। কয়লা আরো অবাক হয়ে বলল তাহলে আমাকে ছাদে নিয়ে এলি কেন? সূর্য বলল দেখ তুই যদি এমন কাউকে ভালবাসিস তাহলে তাহলে কেবল সুখ না কষ্ট কেও মেনে নিতে হবে জীবন অনেক জটিল আমরা কেবল সুখের পিছনে ছুটছি কিন্তু ভুলে যাচ্ছি দুঃখ ও আছে যা আসবেই। সূর্যের কথাগুলো কয়লা মন দিয়ে শুনছে ও এখন অনেকটা স্বাভাবিক। সূর্য বলে চলল জীবন যেখানে দুঃখ লিখেছে সেখানে সুখ ও আছে সেটা খুজে নিতে হয় মানুষের দোষ ত্রুটিকে ক্ষমা করতে শিখতে হয়, কথা কম বলতে জানতে হয়, মানুষের অন্তরকে স্পর্শ করে দেখতে হয় বাইরে নয়। কয়লা বলল মানুষের মন কেন খারাপ হয় মনের উপর কি নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত ছিল না মানুষের? সূর্য ওর দিকে তাকিয়ে বলল সব কিছুতে নিয়ন্ত্রন থাকতে নেই বা সব সময় নিয়ন্ত্রণ দিয়ে দিতে নেই। মনের উপর নিয়ন্ত্রন দিয়ে দিলে আজ জগতে ভালবাসা, আদর, মমতা বা স্নেহ বলে কিছুই থাকত না রে। হ্যা অবচেতন মন নিজেই সময়ের প্রয়োজনে সময়ের সাথে চেতন মনের উপর নিয়ন্ত্রণ দিয়ে দেয়। এই যেমন তুই যখন কাউকে মন থেকে ভালবাসতে যাবি তখন মনের উপর কোন নিয়ন্ত্রন থাকবেনা, শত চেষ্টায়ও নিয়ন্ত্রণ আসবেনা আর সেটা আসাও ঠিক না। আবার যখন তুই কারো সাথে ভালবাসায় থাকবি, কারো হাতে হাত রাখব্‌ বা কারো সাথে একসাথে চলবি তখন দেখবি তার অগোচরেও তুই তার বিশ্বাস নষ্ট করতে পারবিনা। এটাই হল মনের অনিয়ন্ত্রন ও নিয়ন্ত্রণ। কয়লা সূর্যের কথা শুনে বুঝল গত কদিনে সে অনেকগুলো ভুল করেছে, সে সূর্যকে কিছু বলতে যাচ্ছিল সূর্য ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল আমি আগেই বলেছি আমি কিছু জানতে বা শুনতে চাই না, আমি খুশি তুই বুঝে গেছিস এখন তোর কি করা উচিত। মুহূর্তের নীরবতা ভেঙ্গে কয়লা বলল আমি কি এখন তাহসিনাকে একটা ফোন দিব? সূর্য হেসে বলল এতক্ষনে বুঝেছিস আচ্ছা তুই কথা বলে নিচে আয় আমি গেলাম।

কয়লা তাহসিনার সাথে কথা বলে চলেছে সূর্য খুশী মনে চেয়ে দেখল বন্ধুর মুখের হাসি। রাতের প্রায় শেষ প্রহর চলছে দুই একটা পাখি জানান দিচ্ছে নতুন একটা দিন আসত চলেছে। সূর্য ঘড়ির দিকে একবার তাকিয়ে হালকা একটা হাসি দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল তুমি সব থেকে রহস্যময়

আকাশের বুকে এক সূর্যের আগমনে অন্য সূর্য প্রস্থান করে চলে গেল গন্তব্যহীন পথের দিকে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১:৩১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×