somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যথা

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘুটঘুটে নিকোষ কালো অন্ধকার। বাড়ির পিছনের ঝোপ-ঝাড়ে জোনাকিরা খেলা করছে। অদূরেই দল বেধে শিয়াল মামারা হুক্কা হুয়া করছে। অর্জুন গাছের শাখায় বসে পেঁচা গুমড়ে কাঁদছে। কলা গাছের পাশ দিয়ে ঝট করে বাদুড়ের উড়ে যাওয়ার শব্দ পাচ্ছি। পিছনের পুকুরে ডাহুক করুণ সুরে কুহু কুহু করে কাঁদছে। আমি আর ইশরা গুমোট অন্ধকার ঘরে শুয়ে প্রকৃতির লীলাখেলা উপলব্দি করছি। ভয়ে ওর গা ছম ছম করছে। অগত্যা কোথাও বের না হয়ে গল্প জুড়ে দিলাম। ছোট হওয়ায় ওর মা ওকে ভাত খাইয়ে দেয়। আমাদের বাসায় আসলে আমিও ওকে মাঝে মাঝে খাইয়ে দেই। ওকে নিয়ে ঘুমিয়ে থাকি।

আমাদের বাড়িতে আসলে আমাকে ছাড়া কিছুই বোঝেনা। একেবারে আমার ন্যাওটা হয়ে গিয়েছে। আমার মত সবাই ওকে আদর, সোহাগ, ভালোবাসা ও ¯েœহ দিয়ে আগলে রাখে। ও খুবই মিশুক প্রকৃতির সোহাগী মেয়ে। সহজেই সবার হৃদয়-মন কেড়ে নিতে পারে। ওর ছন্দময় চলা, প্রাণবন্ত কথা বলা সব মিলিয়ে প্রথম সাক্ষাতেই ওর সাথে আমার বেশ শখ্য গড়ে উঠে। এর পর থেকে ও যেদিনই আমাদের বাড়িতে আসে এক সাথে খাই, ঘুমাই, ঘুরি ও গল্প করি। এভাবেই কাটতে থাকে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ দিনগুলি। আমার সাথে থাকলে ওর আম্মু কোন চিন্তা করেন না। ওর শখ প্রিয় মানুষের সাথে সময় কাটানো, গল্প করা ও ঘোরাঘুরি করা।

কোন এক বর্ষায় ইশরা আমাদের বাড়িতে আসে। আমাকে পেয়ে আনন্দে ওর মুখ হাসিখুশি হয়ে উঠে। ছোট বন্ধুটিকে কাছে পেয়ে আমিও খুশিতে গদগদ। কি রেখে কি করব ভেবে কূল পাচ্ছি না। ওকে প্রস্তাব করলাম চল ডিঙ্গি দিয়ে নদীতে ঘুরে আসি। ভাবে বোঝলাম এমন প্রস্তাবই আমার কাছ থেকে আশা করছিল। মাথা নেড়ে সায় দিল। তড়িঘড়ি করে বলে উঠল তাহলে দেরি কেন, চল শাপলা কুড়িয়ে আনি।

সিয়ামকে সাথে নিয়ে আমরা বের হয়ে গেলাম। আশেপাশে শুধু থৈথৈ পানি আর পানি। দেখে মনে হয় যেন আড়িয়ল বিলে আছি। সহসা আমার হাত থেকে বৈঠা কেড়ে নেয়। কিছুক্ষণ ছলাৎ ছলাৎ ঢেউয়ের তালে তালে নৌকা বেয়ে দেখে। ওর ভিতরে অন্যরকম উত্তেজনা। দুচোখে আনন্দের ঝিলিক ঠিকরে পড়ছে। সিয়াম ইশরার ছোট ভাই। ও-তো খুবই শান্ত-শিষ্ট ছেলে। ছোট হলে কি হবে পড়া-লেখা, কথা-বার্তা, ডাকে-খোঁজে, আচার-ব্যাবহার, চায়-চেহারা সবদিক দিয়েই ভাল। ওকে বেশ ভাল লাগে আমার। ওকে রেখে কি আর কোথাও যাওয়া যায়! সিয়ামের মুখ আনন্দে উচ্ছলতায় দীপ্তি ছড়াচ্ছে। ওকে সাথে নেয়াতে বিস্মিত মুগ্ধ। তবে ইশরাও কিন্তু অনেক সুন্দরী মেয়ে। ওর চেহারা যেমন সুন্দর তার চেয়ে বেশি সুন্দর ওর ব্যক্তিত্ব। খুব সুন্দর সুন্দর সাহিত্য রচনা করতে পারে। বিশেষভাবে ছড়া ও কৌতুক। স্থানীয় পত্রিকায় একাধিক ছড়া ও কৌতুক প্রকাশিত হয়েছে। সবই সম্ভব হয়েছে ওর প্রিয় এক মামা বিভিন্ন পত্রিকায় জড়িত থাকার সুবাদে। মানের দিক দিয়ে কিন্তু কোনটিই ফেলনা নয়। ওর ছড়াগুলি পড়ে কিন্তু ওর এক খালা ও খালু ভেবেই নিয়েছিল এটি কিছুতেই ইশরার লেখা নয়। নিশ্চয়ই ওর মামার লেখা। তারা ভেবেছে কর্তৃপক্ষ ইশরার নাম দিয়ে চালিয়ে দিয়েছে। এই নিয়ে যে কত হাসাহাসি। দশাশই গল্প বিধায় তা না-ই বা বলি।

হেড়ে গলায় দূর থেকে ইশরা ইশরা বলে ডাকছে। আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে। ওর আব্বুই হবে। ওদের বাড়ি যাওয়ার সময় হয়েছে। শরিরটা রি রি করে উঠল। আর কোন সময় পেল না বাড়ি যাওয়ার! একটু পরে গেলে কি হয়। ওর আব্বু খুব জেদি টাইপের মানুষ। আম্মু কিন্তু তারচে বেশি পাজি। অগত্যা কূলে ফিরে এলাম। সাথে রংবেরঙ্গের শাপলা। মোটা তরতাজা শাপলা দেখে ওর আব্বু-আম্মু চুপসে গেল। তাদের চোখে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠল। ইশরাকে বিদায় দিয়ে মনমরা হয়ে বসে রইলাম। এরপর অনেকদিন ওর সাথে দেখা হয়নি। কথা হয়েছে তাও খুব কম।

একদিন ওদের বাড়ি গিয়ে হাজির হই। সবাইকে বিস্মিত করে দেই। ভাবতেও পারেনি আমি ওদের বাড়িতে ওইদিন যাব। কি যে আপ্যায়ন শুরু করে দিল। তা না বলাই শ্রেয়। অনেক গল্প করে চলে আসার জন্য মনস্থির করলাম। ইশরাকে বললাম চল আমাকে আগায়ে দিয়ে আস। মটর বাইকে উঠিয়ে দিলাম জোরে টান। মন ঘুরে গেল। ওকে বললাম আজ আমাদের বাসায় চল? ও বলল, না আজ নয় অন্যদিন যাব। আমার মনকে কিছুতেই মানাতে পারছিলাম না। অনেক বলে কয়ে ওকে রাজি করাই। কথা বলতে বলতে আমরা অনেকদূর চলে এসেছি। এবার ও ঠিকই রাজি হয়েছে। দুজনই ভাবতে থাকলাম কি হতে কি হয়ে গেল। কোনদিন কল্পনাই করতে পারিনি যে ইশরা আমার সাথে আসবে। তাও ওর আম্মুকে না বলেই। মটর বাইকে চলিত অবস্থায় ওর আম্মু কতবার যে কল দিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। টের না পাওয়ায় কল বাজতে বাজতে এক সময় মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়। চিন্তায় অস্থির। আমরা বাড়িতে এসে গেছি। ওর আম্মুকে ফোন দিয়ে বলি আমাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছি সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায় না। ভেবে চিন্তে ওর খালাকে কল ধরিয়ে দিয়ে বলি, কথা বলেন আপনার বোনের সাথে। বিশ্বাস হলে তবেই না সস্তি পাই। অনেক রাগ করে ওর আম্মু। আমার ভয় ধরে যায় এমন দেখে।

আরেকদিন সৈয়দ মোজাম্মেল হোসেন শিক্ষা বৃত্তি ফরম দেয়ার দায়িত্ব পেলাম সমগ্র বিক্রমপুরের স্কুল-কলেজে। অনেক স্কুল ও কলেজে গিয়ে বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। যা আমার অভিজ্ঞাতার ঝুলিকে সমৃদ্ধ করবে নি:সন্দেহে। সিডিউল অনুযায়ী আবুবক্কর সিদ্দিক উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে কাকতালিয়ভাবে ওর সাথে দেখা হয়ে গেল। তাড়া থাকায় কুশলাদি জিজ্ঞেস করে বিদায় নেই। এরপর আর কখনও ওর খোঁজে যাইনি। এরপর কবে শেষ দেখা হয়েছিল ঠিক ধরতে পারছি না। অনেক মিস করি ওকে। জানিনা কোথায় আছে আমার ছোট বন্ধুটি। কিভাবে আছে। আমার কথা ওর মনে আছে কিনা তাও জানি না। তীর্থের কাকের মত চেয়ে থাকি শুধুর ওর পথপানে।

কোন এক অজানা কারণে হয়ত আমার প্রতি ও রেগে আছে। জানি না কেন এমন করছে। আমার মত সাধারণ মনের মানুষের সাথে কোন সম্পর্কই টিকে না কেন? মানুষ আমাকে ভুল বোঝে কেন? কষ্ট দেয় কেন? দূরে সরে যায় কেন? কি দোষ আমার? উত্তর কি কোথাও পাব? মনে হয় কষ্মিন কালেও পাব না। আসলে মানুষ এমনই হয়। যা খুব প্রিয় তা খুব দ্রুতই হারিয়ে যায়। ভালবাসার মানুষ খুব দ্রুতই বদলে যায়। ভাল লাগার মুহূর্তগুলো নিমিষেই ফুরিয়ে যায়।

-আশরাফ ইকবাল নামেই এখন থেকে লেখালেখি করব
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×