আইডিয়া-কৃতজ্ঞতাঃ লেখা আমার, তবে নামকরণের আইডিয়া শ্রদ্ধেয় আশরাফুল আলম সোহেল ভাইয়ের, ইফ ইটস এবাউট এন আইডিয়া সোহেল ভাই ইজ দ্য বেস্ট পার্সন অন দিস আর্থ...
"Patriotism is the last refuge of the scoundrel." - Samuel Johnson
অধ্যাপক গোলাম আযম পিএইচডির রায় হল। লোকটি আর দশজন রাজাকারের চেয়ে আলাদা। ১৯৭১এ তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান গোলাম ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী গোলামদের সর্বাধিনায়ক ছিলেন।
বসনিয়া-হার্জেগোভেনিয়ায় মুসলিম নিধনযজ্ঞের হোতা ছিলেন স্লোবোদান মিলোসেভিচ। মিলোসেভিচ নিজে একটা মানুষকে খুন করেননি, ধর্ষণ করেননি, তবু তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো। কারণ বসনিয়া জেনোসাইডের পুরো পরিকল্পনাটা তিনি করেছিলেন।
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে কোন কোন অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে আর কোন কোন অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, তার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তিনি ১৯৭১এ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোলামদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। অতএব মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের জন্য ধর্ষণের জন্য লুটপাটের জন্য অগ্নিসংযোগের জন্য তিনি দায়ী। শুধুমাত্র এই বিবেচনাতেই তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত ছিলো।
সেটা দেওয়া হয়নি কেন? আপনাদের সবার নিশ্চয় মনে আছে কয়েকদিন আগেই মার্কিন কূটনীতিকের বাসায় আওয়ামী লীগের নেতারা জামায়াতের নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকের ফলাফলই যে এই রায় তা শিশুও বুঝবে।
আওয়ামী লীগ খুব ভালো করে জানে, বিএনপির ঘাড়ে না চড়ে জামায়াতের মতো মুক্তিযুদ্ধবিরোধী হিংস্র সাম্প্রদায়িক ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ একটি দলের পক্ষে কখনোই আসলে এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব না, কখনোই না। কিন্তু আওয়ামী লীগের পলিটিকাল প্রোপাগাণ্ডার শতকরা নব্বইভাগ এই অবাস্তব জুজুই তৈরি করে। জামায়াত এককভাবে ক্ষমতায় আসলে শরিয়া আইন হবে গো, সব কতল হয়ে যাবে গো, এইসব মায়া কান্না। দাঁড়িপাল্লা খারাপ, নৌকা ভালো, অতএব নৌকা মার্কায় ভোট দিন। কিন্তু শহিদ জননী জাহানারা ইমামের আন্দোলনে সবচেয়ে পরে এসেছিলো আওয়ামী লীগ, বিদায় নিয়েছিলো সবার আগে, এবং শহিদ জননীর লাশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে পৌঁছানোর আগেই শেখ হাসিনা মওদূদ আর নিজামীকে সাথে নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন। আওয়ামী লীগ কখনোই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল ছিল না, সে জাস্ট তার যাবতীয় লুণ্ঠন আর সন্ত্রাস থেকে জনগণের নজর অন্যদিকে সরিয়ে রাখতে জামায়াত জুজু ব্যবহার করে, আর লুণ্ঠন সন্ত্রাসে আওয়ামী লীগের মিরর ইমেজ বিএনপি তো জামায়াতকে কোলে নিয়ে বসে আছে। বিএনপি-জামায়াত যেমন ইসলাম নিয়ে ব্যবসা করে, আওয়ামী লীগও তেমনই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যবসা করে, এবং এরা এদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ আর ইসলামকে বাইনারি অপজিশন বানিয়ে ফেলেছে!!!
আওয়ামী লীগ ১৯৭১এও মুক্তিযুদ্ধের কতোটা পক্ষের শক্তি ছিলো, সেটা জানতে মঈদুল হাসানের 'মূলধারা ৭১' ও আহমদ ছফার 'অলাতচক্র' পড়তে পারেন, কাজে আসবে।
হয়তো এখনো অনেকে বিশ্বাস করেন যে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের হেফাজতকারী। ভালো, "বিশ্বাসে মিলায় কৃষ্ণ, তর্কে শুধু বেজে ওঠে বাঁশি!" সে-ক্ষেত্রে আমরাও আপনাদের মতো সারা বিশ্বের বিস্ময়দের দিকে পরিহাসছলে "তবুও আওয়ামী লীগ?" প্রশ্নটা ছুঁড়ে দেব, মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্খার হক ও ইনসাফভিত্তিক একটি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জনগণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণে সক্ষম রাজনৈতিক শক্তি বিকশিত করার কাজটা চালিয়ে যাবো, এবং খুব শীঘ্রই আপনারা হয় আমাদের সাথে যোগ দেবেন নয় ইতিহাসের আস্তাঁকুড়ে নিজেদেরকে আবিষ্কার করবেন।
জুলাই ১৬, ২০১৩
জিগাতলা, ঢাকা।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:৫১