পাঠ প্রতিক্রিয়াঃঃঃ
জীবন অভিজ্ঞতার অনন্য কাব্যিক বয়ানঃ
♦♦ জীবনের ভুল এডিট করা যায় না♦♦
জীবন আসলে কী --- এ নিয়ে আমাদের তত্ত্বের শেষ নেই। হাজার বছরের উপাত্ত দিয়েও আমরা জীবনের সুনির্দিষ্ট কোনো সজ্ঞা দাঁড় করাতে পারি না; পাঠ্যক্রমের কোনো বিষয়ের মতো কাউকে বলতে পারি না---জীবন মানে এই। জীবন কি স্থান ও কালের আপেক্ষিকতায় বাঁধা কোনো বিষয় না স্বতন্ত্র-স্বাধীন, এ নিয়েও আছে দার্শনিক সংশয়। তবে যে বিষয়ে আমরা একমত হতে পারি তা হচ্ছে, জীবন কী---তা আমরা বুঝতে পারি আমাদের যাপিত জীবনের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে। এবং ঠিক সেখানে গিয়েই উপলব্ধি হয়, জীবনের সুনির্দিষ্ট একটি কাঠামো অাছে, যাকে অবজ্ঞা করার চেষ্টা মোটেই উচিত নয়। সেখানে ঠিক এবং বেঠিকের একটি মানদণ্ড আছে, যা দিয়েই নির্ধারিত হয় ফলাফল।
আমাদের সভ্যতার বিকাশধারায় মানুষ কেবলমাত্র ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উপরই নির্ভর করে চলে নি। তাদের আরো একটি যে বিষয় পথ দেখিয়েছে, তা হচ্ছে---বিশ্বাস। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের বাহিরে বললে, পূর্বতনদের অভিজ্ঞতার উপর ভর করে সামনের সমস্যা মোকাবিলা করার শিক্ষা আমরা অামাদের শেখানো শিক্ষা থেকেই লাভ করার চেষ্টা করি। এবং তার উপর নির্ভর করে ভারমুক্ত হই।
আমাদের এই ক্ষুদ্র তাত্ত্বিক আলোচনার অনন্য নিদশর্ন কাজী রিয়াজুল ইসলাম স্যারের কাব্যগ্রন্থ --"জীবনের ভুল এডিট করা যায় না"। এ গ্রন্থের বিভিন্ন কবিতায় তাঁর ষাটোর্থ জীবনের নানা অভিজ্ঞতার বিভিন্ন বিষয় ওঠে এসেছে। তাঁর আশা-আকাঙ্ক্ষার ভ্রান্তি, প্রাপ্তি- অপ্রাপ্তি ---যা প্রত্যেক মানুষের জীবনের সমান্তরাল এবং যা ঘটে গেছে তার ব্যত্যয় আর ঘটবে না কোনো দিন। তাঁর নিজের ভাষায়ঃ
এমন কোনো স্থুল কাগজ নয় এই জীবনের ক্যানভাস/
যেখানে একবার কিছু লিখলে-আঁকলে তা পুনর্বার/
করা যাবে এডিট কিংবা ডিলিট-ব্রাস,/
বা দুঃখ প্রকাশসহ হাতজোড়ে ক্ষমা চেয়ে প্রত্যাহার।
এ কাব্যগ্রন্থের প্রায় প্রত্যেকটি কবিতাই উত্তর পুরুষদের জন্য দিকনির্দশনা মূলক এবং কয়েকটি রোমান্টিক কবিতা, যা চিরন্তন মানবিকবোধকে নাড়া দিয়ে যায়।
বাসন্তী, নিশ্চয় তোমারো সেই টিকার দাগ আজো আছে---যায়নি মুছে,/
সেদিকে কখনো কি চোখ যায়, কিছু কি পাও হৃদয়ের দেরাজে খুঁজে?
এই দু'টি লাইন প্রত্যেক মানুষের বিস্মৃত কোনো স্মৃতিকে নাড়া দিয়ে যায়।
এ কাব্যগ্রন্থটি বাংলা কবিতার ভাণ্ডারে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন বলে আমাদের বিশ্বাস।