somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চলচ্চিত্রে নিও-রিয়্যালিজম এবং দ্য বাইসাইকেল থিফ (Ladri di biciclette)।

২৬ শে জুন, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভিত্তোরিও ডি সিকা

দ্য বাইসাইকেল থিফ

রিকি এবং ব্রুনো

চলচ্চিত্র একটি প্রভাবশালী এবং প্রতিষ্ঠিত মাধ্যম আজকের এই দিনে। শিল্প মাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্রের বয়স তখন ৫০ ছাড়িয়েছে, একটি প্রভাবশালী মাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্র যখন প্রতিষ্ঠিত ঠিক সে সময় ইতালিতে জন্ম নিল চলচ্চিত্রের এক নতুন শিল্পমন্ত্র "নিও-রিয়্যালিজম"। ইতালিয়ান নিও-রিয়্যালিস্ট চলচ্চিত্র মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইতালির প্রতিকূল অর্থনৈ্তিক এবং আদর্শিক প্রেক্ষাপটের প্রতিভূ।চলচ্চিত্রের ইতিহাসে চল্লিশের দশকের শেষে জন্ম নেয় এই শিল্পধারা।এই শিল্পধারার মূল শ্লোগান ছিল "Take the camera out into the streets"।আসল কথা স্টুডিওর মেকী এবং কৃ্ত্রিম পরিবেশ ছেড়ে ক্যামেরা নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়।জীবন যেখানে যেমন তাকে সেখানেই তেমন করে তুলে ধর রুপালী পর্দায়।এরকম নতুন কিছু সৃষ্টির আহবান প্রবলভাবে যে কয়েকজন ইতালীয় পরিচালককে আকৃষ্ট করেছিল, যারা স্টুডিওর সাজানো বাগান ছেড়ে নেমে এসেছিলেন পথের ধুলায় তাদেরই একজন ভিত্তোরিও ডি সিকা (Vittorio De Sica)।আর ভিত্তোরিও ডি সিকার'ই এক অমর সৃষ্টি নিও-রিয়্যালিস্ট চলচ্চিত্র "দ্য বাইসাইকেল থিফ"(১৯৪৮)।এটি বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা একটি চলচ্চিত্র।বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন পত্রিকা, প্রতিষ্ঠান, ফিল্ম ইন্সটিটিউট কর্তৃক নির্বাচিত সর্বকালের সেরা ১০০ চলচ্চিত্রের মধ্যে অন্যতম "দ্য বাইসাইকেল থিফ"।

কাহিনী সংক্ষেপঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইতালি।হতাশায় নিমজ্জিত আরো অনেকের মত এক বেকার এন্টনিও রিকি। একদিন সে হঠাৎ করে বিভিন্ন যায়গায় পোষ্টার লাগানোর একটি চাকরি পেয়ে যায়।কিন্তু এই কাজের জন্য প্রয়োজন একটি বাইসাইকেল।চাকরিদাতাদের কঠিন শর্ত 'বাইসাইকেল যোগার করতে না পারলে চাকরি হবেনা'।যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশে যেখানে হাজার হাজার লোক একটি চাকরির জন্য হন্য হয়ে ঘুরছে সেখানে এরকম একটি চাকরি পাওয়া বিশাল ব্যাপার।কাজেই চাকরি হাতছাড়া করা যাবেনা।"সাইকেল যোগার করা যাবে" এই শর্তে সে চাকরিটি নিয়ে নেয়।কিন্তু ঘিরে ধরে আরেক চিন্তা, কথা তো দিল কিন্তু সাইকেল পাবে কোথায়?এগিয়ে আসে রিকির স্ত্রী মারিয়া।বিয়েতে পাওয়া চাদরগুলো বিক্রি করে সাইকেল কেনা হয়।
কাজের প্রথম দিন সকালে রিকি তার ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে যায়।আর ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, ঐ দিনই সাইকেলটি চুরি যায়।এরপর ছবির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে সাইকেলটি পাওয়া আর না পাওয়ার দোলাচলের মধ্যে।সাইকেল হারানোর বেদনায় রিকির স্ত্রী যখন ক্রন্দনরত তখন এগিয়ে আসে রিকির এক বন্ধু।সে রিকিকে আর তার ছেলেকে নিয়ে সাইকেল উদ্ধারের চেষ্টায় বেরিয়ে সাইকেলটির খোঁজ পায় কিন্তু প্রমানের অভাবে উদ্ধার করতে পারেনা।বন্ধু ফিরে গেলে রাস্তায় রাখা অন্য একটি সাইকেলের দিকে নজর পরে রিকির।ছেলেকে বাসে করে চলে যাওয়ার কথা বলে সাইকেলটির দিকে চুরি করার বাসনা নিয়ে এগিয়ে যায় রিকি।বাসটিতে উঠতে না পেরে ব্রুনো (রিকির ছেলে) যখন পেছনে ফিরে তাকায় তখন তার বাবাকে আবিষ্কার করে জনরোষের কবলে।সৎ কিন্তু দূ্র্ভাগ্যতাড়িত রিকির আসল অবস্থা বুঝতে পেরে সাইকেলের মালিক তাকে ছেড়ে দেয়।লজ্জিত ও অপমানিত রিকি এবং তার ছেলে ব্রুনো জনবহুল রাস্তায় হেঁটে বাড়ি ফিরছে এমন দৃশ্যের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় "দ্য বাইসাইকেল থিফ"।

প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেনঃ

Lamberto Maggiorani - এন্টনিও রিকির চরিত্রে।
Enzo Staiola - ব্রুনো রিকি (রিকির ছেলের ) চরিত্রে।
Lianella Carell - মারিয়া রিকি (রিকির স্ত্রী) চরিত্রে।

পুরস্কারঃ

*১৯৪৯ সালে সেরা চিত্রনাট্যের জন্য Cesare Zavattini অস্কার মনোনয়ন লাভ করেন।
*১৯৪৯ সালে Golden Globe পুরস্কার সেরা বিদেশি চলচ্চিত্র বিভাগে।
*১৯৫০ সালে BAFTA Film Award লাভ।

এছাড়া আরো ১৪ টি পুরস্কার লাভ করে "দ্য বাইসাইকেল থিফ"।

পুরস্কার দিয়ে কখনো মাপা যাবেনা "দ্য বাইসাইকেল থিফ" চলচ্চিত্রের মাহাত্ম্য।একদিক দিয়ে যেমন নিওরিয়্যালিস্ট চলচ্চিত্র তেমনি অন্য দিক দিয়ে তৎকালীন ইতালির সমাজ ব্যবস্থায় যে টানাপোড়েন বিদ্যমান ছিল তার নিখুঁত চিত্র অঙ্কিত হয়েছে দেড় ঘন্টা দৈ্র্ঘের এই চলচ্চিত্রে।সমাজ এবং মানুষের সম্পর্ক,সেখানে অর্থনীতির প্রভাব,পিতা-পুত্রের সম্পর্কের একেবারে গভীরের রুপ,একজন সৎ মানুষের হাহাকার, পরোক্ষভাবে যুদ্ধের কুফল সম্পর্কে নাড়া দেয়া কী নেই এই ছবিতে!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০০৯ রাত ৩:৪০
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×