আমার এক বন্ধু আছে।নাম রাজু।তো আমাদের যত আড্ডা-আনন্দ আছে তার মধ্যমণি ওই রাজু সাহেবই।এত্ত হাসির কথা বলতে পারে যে তা না শুনলে বিশ্বাসই হয়না।ও যে টেম্পো রেটে কথা বলে তা শুনলেই মানুষ হাসতে হাসতে শেষ।ঈশ্বর প্রদত্ত ক্ষমতা নিঃসন্দেহে।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েকদিন পরে আমরা বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছি।তো নির্বাচনের পরে যেটা হয় আর কী, মানে সবাই নির্বাচন এবং নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে অসারশূন্য আলোচনা করছি।এমন সময় মুখে সেই চিরচেনা রহস্যময় হাসি নিয়ে রাজুর আগমন।
রাজুকে পেয়েই জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা দোস্ত, আওয়ামীলীগ তো জিতে গেল।এখন তোর কি মনে হয় কি হবে অবস্থা??
রাজু কিচ্ছু না ভেবেই বলল কী আর হবে,৮ দিনে সপ্তাহ হবে।
আমরা আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কিভাবে কিভাবে?
রাজু মুচকি হেসে উত্তর দিল তাহলে বারগুলোর নাম শোন.........
সোমবার
মঙ্গলবার
বুধবার
বৃহস্পতিবার
শুক্রবার
শনিবার
রবিবার
মজিবর
আমরা শুনে তো হাসতে হাসতে শেষ।
কেন বললাম গল্পটিঃ
কারন আওয়ামী লীগের আগের টার্মে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে পরিমান কপচাকপচি করেছে তাতে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার সাথে সাথেই মানুষ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কৌতুক করতে শুরু করেছে।অথচ বঙ্গবন্ধুর কিন্তু কোন ভূমিকাই নেই এখানে।তাঁর নাম আসার কথাও ছিলনা।অথচ এই আওয়ামী লীগের জন্যেই কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মানুষ কৌ্তুক করছে।কষ্ট হয় কারন বঙ্গবন্ধু এই জাতির পিতা।
হ্যা, বঙ্গবন্ধুকে আমি জাতির পিতা হিসেবে মানি।আমি যে দলের সমর্থকই হয়ে থাকি সেটা ব্যাপার না (নিশ্চিত থাকতে পারেন লীগের না)।আমি বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক মনে করি, করব।মানি তাঁর অনেক ব্যর্থতা ছিল, বিশেষ করে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে।বাকশাল গঠন, নিজের সন্তানদের লুটপাট, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম সহ অনেক।এসবের জন্য হয়ত তাঁর চেয়ে তাঁর আশেপাশের চাটুকারদের অবদান বেশি ছিল।কিন্তু রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সব দায়িত্ব তাঁর উপরেই বর্তায়।তাই আমি বলি এই ক্ষেত্রে তিনি ব্যর্থ। কিন্তু তার ব্যর্থতার জন্য কিন্তু তিনি মাফ পাননি।জীবন দিয়েই মূল্য শোধ করতে হয়েছে তাকে।যে বাঙ্গালীর উপর তাঁর অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আর যেই হোক না কেন, কোন বাঙ্গালী তাকে কোনদিন হত্যা করতে পারেনা, সেই বাঙ্গালীরাই তাকে হত্যা করেছে তাঁর ব্যর্থতার জন্য।সুতরাং তাঁর চরম শাস্তি ওখানেই কার্যকর হয়ে গেছে।
আরেকটা কথা।আমি বি.এন.পি. সরকারের সময় যখন যাদুঘরে যাই তখন দেখি যে সবখানেই জিয়া এবং মুজিবের ছবি পাশাপাশি টানানো।জানি ছবি টানানোতে কিচ্ছু হয়না, বা আসে যায়ও না।কিন্তু এটা সন্মান প্রদর্শনের একটা মাধ্যমও।সারা বিশ্বেই এই নিয়মটা চালু আছে।বিশেষ করে জাতির জনকদের বেলায় তো বটেই, অবিসংবাদিত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতার বেলায়ও।
এখন কথা হচ্ছে কেন আমার খারাপ লেগেছিল দুটো ছবি পাশাপাশি দেখে?কারণ হচ্ছে জিয়াউর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধা।পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি এবং স্বাধীনতার সময়ে স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়ে তিনি আরো উজ্জল।কিন্তু সেই ঘোষনাও ছিল বঙ্গবন্ধুকে নেতা হিসেবে মেনে এবং বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই।এবং নিরপেক্ষ যে কেউই বলবেননা যে জিয়াউর রহমানের অবদান বঙ্গবন্ধুর চেয়ে বেশি ছিল ( অন্তত '৭১ এ)।কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর সমান এবং ক্ষেত্রবিশেষে বেশিও মর্যাদা পেয়াছিলেন কারন তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈ্তিক দলটি এদেশের অন্যতম সেরা একটি দল।যদি তাই না হত তাহলে তিনি এত বড় মর্যাদা কী করে পেতেন?
আমি জিয়াউর রহমানকে খাটো করছিনা।বরং বলছি যে তাঁর স্থান হওয়া উচিত হিল বঙ্গবন্ধুর পরে।হতে পারে একেবারে পরের স্থানটিই।আপত্তি নেই।কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সাথে একই লেভেলে মূল্যায়ন করাটা আমার মনে হয়না যে যৌক্তিক।
এদেশের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্বের জন্য শেখ মুজিবের অনন্য সাধারণ ভূমিকার জন্যেই তিনি এই জাতির পিতা।তাঁর ভুলের জন্য, ব্যর্থতার জন্য আমরা তাকে কঠিন এবং সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছি।তাঁর ভুলের জন্য যদি সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে পারি তবে তার গুনের জন্য কেন তাকে ন্যায্য মূল্যায়ন করবনা?
আমি নিতান্তই এক আমজনতা।নিজের কিছু উপলব্ধির কথা বললাম মাত্র।কেউ যদি আমাকে কোন রেফারেন্স দিতে বলেন বা চ্যালেঞ্জ করেন তার উত্তর দেয়ার যোগ্যতা আমার নেই।ইন্টারনেটের এই যুগে গুগল , বিং বা উইকিপিডিয়ার সৌজন্যে হয়তো অনেক তথ্যই যোগাড় করতে পারব।কিন্তু সে তথ্য বিশ্লেষন করে তার নির্য্যাস নিয়ে আপনাদের চ্যালেঞ্জের উত্তর দিতে আমি হিমশিম খেয়ে যাব, হয়তো পারবইনা।সুতরাং যাদের কাছে লেখাটি খারাপ লেগেছে (জানি অনেকের কাছেই লাগবে) তারা প্লিজ আমাকে কড়া কথায় যাই বলুননা কেন আপত্তি নেই, গালি দিবেননা।ব্লগটাকে আমার গালাগালির স্থান মনে হয়না।সুস্থ বিতর্ক হোক খুব ভালো, কিন্তু নো গালাগালি।
আর মন বেশি খারাপ হলে আঠেরোর্ধোরা ঘুরে আসতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:৪২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



