somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যাদের মর্যাদা আমেরিকার কাছে টয়লেট পেপারের চেয়ে বেশি নয়

০৪ ঠা মার্চ, ২০১১ সকাল ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যখন কোন জাতি আত্মপরিচয় ও বিশ্বাসের সংকটে পতিত হয়, সে জাতির উপর যে কী ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসে তার বাস্তব দৃষ্টান্ত বর্তমান বাংলাদেশসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশ। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল হিসেবে ১৯৪৭ সালে এ ভূখণ্ডটি ভারত থেকে আলাদা হয়ে পৃথক রাষ্ট্রসত্তা রূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল বিধায় বাংলাদেশ জন্মসূত্রে মুসলিম দেশ। এ দেশের মূলভিত্তি ইসলাম। ইসলামকে কেন্দ্র করেই এ দেশের সবকিছু আবর্তিত হবে এটাই স্বাভাবিক। রাষ্ট্রের মূলনীতি, সংবিধান, আইন, বিচার, প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ইত্যাদি ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে প্রণীত ও পরিচালিত হবেÑ এটাই যুক্তি ও বাস্তবতার দাবী। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশ নামক এ দেশটির রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে ইসলামকে অস্বীকার করে। ইহুদী-খৃষ্টানদের আবিস্কৃত গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ এবং নাস্তিক কার্লমাক্স আবিস্কৃত সমাজতন্ত্র এদেশের রাষ্ট্রীয় মূলনীতিরূপে স্বীকৃতি পেয়েছে, আর সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রাণাধিক প্রিয় বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবর্তিত ইসলামকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে কার্যত বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। যে সন্তান বড় হয়ে অর্থ-বিত্ত ও ক্ষমতার জোরে জন্মদাতা পিতাকে অস্বীকার করে সে কুলাঙ্গার। এ দেশের জন্মদাতা ইসলাম। ক্ষমতার জোরে এ সত্যকে যারা অস্বীকার করে তাদের পরিচয় ওই সন্তানের চেয়ে ভিন্ন কিছু হতে পারে কি?
ইরাকের সাবেক রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হোসেন ছিলেন বার্থ পাটির নেতা। এ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা নাস্তিক মাইকেল আফলাক আল্লাহর কুশপুত্তলিকা বানিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, “আজ ইরাক থেকে আল্লাহকে বিদায় করা হলো।” সেই পার্টির কর্ণধার হয়ে প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম তার দীর্ঘ শাসনামলে হাজার হাজার আলেমকে হত্যা করেছেন এবং ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র মাদরাসাসমূহকে সমূলে ধ্বংস করেছেন। জন্মসূত্রে মুসলিম হয়েও তিনি প্রথমে রাশিয়া এবং পরে আমেরিকাকে খুশি করার জন্য ইসলামের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ অনুযায়ী দেশ শাসন করেছেন। ক্ষমতার স্বার্থে নিজ ধর্ম, কৃষ্টি-কালচার সবকিছু ত্যাগ করেও শেষ পর্যন্ত খৃষ্টান প্রভুদের সন্তুষ্ট করতে পারেননি। অবশেষে সেই প্রভুদের হাতেই তার দেশ ধ্বংস হয়েছে, তিনিও ধ্বংস হয়েছেন।
স্বজাতি ও স্বধর্মের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে যারা বিদেশী প্রভুদের মনোরঞ্জনের জন্য ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তাদের কী করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়, তার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত তিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদীন বেন আলী। তিনি ১৯৮৭ সালে ক্ষমতায় বসে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। তার নির্মম অত্যচারে বহু আলেম-উলামা নিগৃহিত হন। ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ধর্মীয় নেতাদের কারারুদ্ধ করেন। তিউনিশিয়ার বিশিষ্ট ইসলামী নেতা রাশেদ ঘানৌচিসহ বহু ইসলামী নেতা দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন। বেন আলীর জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তিউনিশিয়ার বিক্ষুব্ধ জনগণ রাস্তায় নেমে আসে। দীর্ঘ এক মাস তীব্র গণবিক্ষোভের মুখে গত ১৪ জানুয়ারী ইসলাম ও মুসলমানের ঘাতক মার্কিন তাবেদার বেন আলী দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। এর মাধ্যমে তার ২৩ বছরের অপশাসনের অবসান ঘটে। বিদেশী প্রভুদের পদলেহন তার কোন উপকারে আসেনি।
এই তালিকার চলমান উদাহরণ মিশরের ধর্মনিরপেক্ষ প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক। প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। ইসলামী চেতনা ও মূল্যবোধ ধ্বংসে তিনি ছিলেন আমেরিকার বিশ্বস্ত সেবাদাস। হাসানুল বান্নাসহ হাজার হাজার ইসলামী ব্যক্তিত্বকে তিনি হত্যা করেছেন। সর্বপ্রকার ইসলামী তৎপরতা নিষিদ্ধ করেছেন। তার নির্মম নিপীড়ন-নির্যাতনে বাধ্য হয়ে হাজার হাজার উলামা-মাশায়েখ দেশ ত্যাগ করে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এমন কি এ পাপিষ্ঠ দাড়ি রাখাও নিষিদ্ধ করেছিল। আজ মিশরের জনগণ তার বিরুদ্ধে সোচ্চার। ইতোমধ্যে তার ছেলে দেশ ত্যাগ করে পালিয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, যে আমেরিকাকে খুশি করার জন্য হোসনে মোবারক দীর্ঘকাল ধরে স্বধর্ম ও স্বজাতি বিরোধী ভূমিকা পালন করে আমেরিকার সেবা করলেন, এই দুঃসময়ে সেই আমেরিকা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এ সব ঘটনা থেকে আমেরিকার তাবেদারীতে লিপ্ত মুসলিম দেশসমূহের রাজ-রাজাদের শিক্ষা নেয়া উচিত যে, স্বধর্ম ও স্বজাতির বিরুদ্ধে গিয়ে যারা আমেরিকার তাবেদারি করে, তাদের মর্যাদা আমেরিকার কাছে টয়লেট পেপারের চেয়ে বেশী কিছু নয়। নিজ প্রয়োজনে আমেরিকা এই নীতিভ্রষ্ট মুসলিম নেতাদের কাছে টানে, প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে টয়লেট পেপারের মত এদেরকে নর্দমায় নিক্ষেপ করতে দ্বিধা করে না।
স্বজাতি ও স্বধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকার পদলেহনের এ ধারার সূচনা করেছিলেন তুরস্কের কুলাঙ্গার কামাল আতাতুর্ক। মুসলিম জাতির সাথে এ চরম বিশ্বাসঘাতকতার করুন পরিণতি তাকে ভোগ করতে হয়েছে। জীবনের শেষ দিন গুলোতে চরম যন্ত্রণায় ছটফট করে কুকুরের মত ঘেউ ঘেউ করতে করতে তার মৃত্যু হয়েছে। মুসলিম নেতাদের মধ্যে তিনিই ছিলেন পাশ্চাত্যের ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের প্রথম সেবাদাস। মুসলিম বিশ্বের দেশে দেশে চলছে এরকম সেবাদাসদের রাজত্ব। সাদ্দাম, বেন আলী ও হোসনি মোবারকের মত এসব সেবাদাসদের দিন ফুরিয়ে এসেছে। জেহাদী চেতনায় উজ্জীবীত হয়ে গোটা মুসলিম উম্মাহ অচিরেই ঘুরে দাঁড়াবে এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সেবাদাসদের হাত থেকে মুসলিম জাতিকে রক্ষা করবে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×