যখন কোন জাতি আত্মপরিচয় ও বিশ্বাসের সংকটে পতিত হয়, সে জাতির উপর যে কী ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসে তার বাস্তব দৃষ্টান্ত বর্তমান বাংলাদেশসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশ। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল হিসেবে ১৯৪৭ সালে এ ভূখণ্ডটি ভারত থেকে আলাদা হয়ে পৃথক রাষ্ট্রসত্তা রূপে আত্মপ্রকাশ করেছিল বিধায় বাংলাদেশ জন্মসূত্রে মুসলিম দেশ। এ দেশের মূলভিত্তি ইসলাম। ইসলামকে কেন্দ্র করেই এ দেশের সবকিছু আবর্তিত হবে এটাই স্বাভাবিক। রাষ্ট্রের মূলনীতি, সংবিধান, আইন, বিচার, প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ইত্যাদি ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে প্রণীত ও পরিচালিত হবেÑ এটাই যুক্তি ও বাস্তবতার দাবী। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশ নামক এ দেশটির রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে ইসলামকে অস্বীকার করে। ইহুদী-খৃষ্টানদের আবিস্কৃত গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ এবং নাস্তিক কার্লমাক্স আবিস্কৃত সমাজতন্ত্র এদেশের রাষ্ট্রীয় মূলনীতিরূপে স্বীকৃতি পেয়েছে, আর সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রাণাধিক প্রিয় বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবর্তিত ইসলামকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে কার্যত বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। যে সন্তান বড় হয়ে অর্থ-বিত্ত ও ক্ষমতার জোরে জন্মদাতা পিতাকে অস্বীকার করে সে কুলাঙ্গার। এ দেশের জন্মদাতা ইসলাম। ক্ষমতার জোরে এ সত্যকে যারা অস্বীকার করে তাদের পরিচয় ওই সন্তানের চেয়ে ভিন্ন কিছু হতে পারে কি?
ইরাকের সাবেক রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হোসেন ছিলেন বার্থ পাটির নেতা। এ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা নাস্তিক মাইকেল আফলাক আল্লাহর কুশপুত্তলিকা বানিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, “আজ ইরাক থেকে আল্লাহকে বিদায় করা হলো।” সেই পার্টির কর্ণধার হয়ে প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম তার দীর্ঘ শাসনামলে হাজার হাজার আলেমকে হত্যা করেছেন এবং ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র মাদরাসাসমূহকে সমূলে ধ্বংস করেছেন। জন্মসূত্রে মুসলিম হয়েও তিনি প্রথমে রাশিয়া এবং পরে আমেরিকাকে খুশি করার জন্য ইসলামের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ অনুযায়ী দেশ শাসন করেছেন। ক্ষমতার স্বার্থে নিজ ধর্ম, কৃষ্টি-কালচার সবকিছু ত্যাগ করেও শেষ পর্যন্ত খৃষ্টান প্রভুদের সন্তুষ্ট করতে পারেননি। অবশেষে সেই প্রভুদের হাতেই তার দেশ ধ্বংস হয়েছে, তিনিও ধ্বংস হয়েছেন।
স্বজাতি ও স্বধর্মের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে যারা বিদেশী প্রভুদের মনোরঞ্জনের জন্য ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তাদের কী করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়, তার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত তিউনিশিয়ার প্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদীন বেন আলী। তিনি ১৯৮৭ সালে ক্ষমতায় বসে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। তার নির্মম অত্যচারে বহু আলেম-উলামা নিগৃহিত হন। ইসলামী রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ধর্মীয় নেতাদের কারারুদ্ধ করেন। তিউনিশিয়ার বিশিষ্ট ইসলামী নেতা রাশেদ ঘানৌচিসহ বহু ইসলামী নেতা দেশত্যাগ করতে বাধ্য হন। বেন আলীর জুলুম নির্যাতনের বিরুদ্ধে গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তিউনিশিয়ার বিক্ষুব্ধ জনগণ রাস্তায় নেমে আসে। দীর্ঘ এক মাস তীব্র গণবিক্ষোভের মুখে গত ১৪ জানুয়ারী ইসলাম ও মুসলমানের ঘাতক মার্কিন তাবেদার বেন আলী দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। এর মাধ্যমে তার ২৩ বছরের অপশাসনের অবসান ঘটে। বিদেশী প্রভুদের পদলেহন তার কোন উপকারে আসেনি।
এই তালিকার চলমান উদাহরণ মিশরের ধর্মনিরপেক্ষ প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক। প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত। ইসলামী চেতনা ও মূল্যবোধ ধ্বংসে তিনি ছিলেন আমেরিকার বিশ্বস্ত সেবাদাস। হাসানুল বান্নাসহ হাজার হাজার ইসলামী ব্যক্তিত্বকে তিনি হত্যা করেছেন। সর্বপ্রকার ইসলামী তৎপরতা নিষিদ্ধ করেছেন। তার নির্মম নিপীড়ন-নির্যাতনে বাধ্য হয়ে হাজার হাজার উলামা-মাশায়েখ দেশ ত্যাগ করে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এমন কি এ পাপিষ্ঠ দাড়ি রাখাও নিষিদ্ধ করেছিল। আজ মিশরের জনগণ তার বিরুদ্ধে সোচ্চার। ইতোমধ্যে তার ছেলে দেশ ত্যাগ করে পালিয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, যে আমেরিকাকে খুশি করার জন্য হোসনে মোবারক দীর্ঘকাল ধরে স্বধর্ম ও স্বজাতি বিরোধী ভূমিকা পালন করে আমেরিকার সেবা করলেন, এই দুঃসময়ে সেই আমেরিকা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এ সব ঘটনা থেকে আমেরিকার তাবেদারীতে লিপ্ত মুসলিম দেশসমূহের রাজ-রাজাদের শিক্ষা নেয়া উচিত যে, স্বধর্ম ও স্বজাতির বিরুদ্ধে গিয়ে যারা আমেরিকার তাবেদারি করে, তাদের মর্যাদা আমেরিকার কাছে টয়লেট পেপারের চেয়ে বেশী কিছু নয়। নিজ প্রয়োজনে আমেরিকা এই নীতিভ্রষ্ট মুসলিম নেতাদের কাছে টানে, প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে টয়লেট পেপারের মত এদেরকে নর্দমায় নিক্ষেপ করতে দ্বিধা করে না।
স্বজাতি ও স্বধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ইউরোপ-আমেরিকার পদলেহনের এ ধারার সূচনা করেছিলেন তুরস্কের কুলাঙ্গার কামাল আতাতুর্ক। মুসলিম জাতির সাথে এ চরম বিশ্বাসঘাতকতার করুন পরিণতি তাকে ভোগ করতে হয়েছে। জীবনের শেষ দিন গুলোতে চরম যন্ত্রণায় ছটফট করে কুকুরের মত ঘেউ ঘেউ করতে করতে তার মৃত্যু হয়েছে। মুসলিম নেতাদের মধ্যে তিনিই ছিলেন পাশ্চাত্যের ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদের প্রথম সেবাদাস। মুসলিম বিশ্বের দেশে দেশে চলছে এরকম সেবাদাসদের রাজত্ব। সাদ্দাম, বেন আলী ও হোসনি মোবারকের মত এসব সেবাদাসদের দিন ফুরিয়ে এসেছে। জেহাদী চেতনায় উজ্জীবীত হয়ে গোটা মুসলিম উম্মাহ অচিরেই ঘুরে দাঁড়াবে এবং মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সেবাদাসদের হাত থেকে মুসলিম জাতিকে রক্ষা করবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



