ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। এখন আর বৃষ্টি হলে রোমান্টিকতা কাজ করে না। আগে একটা সময় এই কিছুদিন আগেও বৃষ্টি আসলে বুকের ভেতর একটা শীতল পাথর অনুভব করতাম। পাথরে অনেক সুখ ছিল, ছুয়ে দিলে গরম হৃদয় মুহুর্তেই বরফশীতল হয়ে যেত।
রবিনের আসার কথা, বেশ কিছুক্ষণ আগে বেড়িয়েছে। কয়েল আনতে পাঠিয়েছি, রাতের শেষে ঘুমাতে গেলে মশার কামরে ঘুমানো যায়না। দুইদিন হল মশা একটু বেশিই। আমি অপেক্ষা করছি রবিনের জন্য, ওদিকে রবিন অপেক্ষা করছে আজগরের ঘুম থেকে উঠার জন্য।
আজগর, এই আজগর দরজা খোল...
কে? আজগর ভাই নাই। আমি শহীদুল, কি লাগবো কন দেই চিপা দিয়া।
কয়েল দে এক প্যাকেট, আর পাঁচটা বেনসন দিস।
বেনসন নাই, কয়েল আছে আল্প কয়টা, দাড়ান দিতাছি...।
করিম ঘুমাতে পারছেনা। রাতে প্রতিদিন বউ কাছে থাকত যদি তাহলে ভাল হত। কিন্তু ঢাকায় তো আর বউ নিয়ে আসা যায়না তাই ঢাকাতেও তার বউয়ের প্রক্সি দরকার। ইদানিং ঢাকা শহরের হোটেলগুলো রেস্ট্রিকটেড হয়ে গেছে। তারা সব কিছু স্বীকার করেনা, পরিচিত কিছু কাস্টমার ছাড়া মেয়ে বের করেনা। করিম কোন পরিচিত কাস্টমার না, এই মুহুর্তে করিমের রবিনকে প্রয়োজন।
রবিন ভাই, হ্যালো আমি করিম।
আপনারে বিকালে মাঠে দেখছিলাম। আমি জানতাম আপনি ফোন করবেন। আমি এখন অসব করিনা, সরি।
না ভাই, আমারে শুধু একটু চিনায়ে দিলেই চলবে।
না পারবোনা, প্লিজ।
ভাই প্লিজ লাগে, আপনি ছাড়া আমার বলার মত কেউ নাই।
এমনিতেই আজ খুব মন ভালো হয়ে আছে। অনেকদিন পর একটা চাকরির অফার পেয়েছি। স্যালারি যাই হোক, চাকরি তো। সহজ স্বাভাবিক চাকরি। কিছুটা অদ্ভুত হলেও অনেক চার্মিং। আমি এসব চ্যালেঞ্জই নিতে চাই সাথে বিনোদন। রাতে ডিউটি, একটা বাইক দিয়েছে বস। যখন তখন চলে যেতে মানা নেই কোথাও। কাস্টমার ঠিক হলেই ফোন। নির্দিষ্ট কোন ধরা বাধা সময় নেই। মাত্রই বস ফোন দিয়েছে, ক্লায়েন্ট আসছে বাসায়। আমি যাচ্ছি, রাতটা সেখানেই কাটানো মন্দ হবেনা। তৃষ্ণাকে আমার ভালোই লাগে। নতুন এসেছে, এখনও নতুনই।
বাসায় সবকিছু গোছানোই ছিল। আমি ফ্রেস হলাম, কিছু ফল ফ্রিজ থেকে বের করে টি টেবিলে রাখলাম। দুজন ছিল রফিক আর আজাদ ওদের বাইরে চলে যেতে বললাম। আমার কথা ওরা শুনে, বস বস লাগে নিজেকে। এখন বাসায় শুধু সিদ্দিক আর ওরা তিনজন। সিদ্দিকের কোন কাজ নেই ফরমায়েস খাটা ছাড়া।
এই সিদ্দিক দরজা খুলে রাখ।
আচ্ছা।
আমি হাটছি ওদের রুমের দিকে। ওরা আমাকে দেখেই হাসে শুধু, কেন হাসে বুঝিনা। কলিং বেল বাজছে, আমিও খুব গম্ভীর হয়ে বিছানায় বসলাম।
রবিন ও করিম ভাই আমার কাস্টমার। খুব ভাল লাগছে কিন্তু গম্ভীরতা বন্ধ করা যাবেনা। আমি মুচকি হাসি দিয়েও দিতে পারছিনা। বসের ফোন, সব কিছু ঠিকঠাক আছে কিনা সেটা তার জানা দায়িত্ব। করিম ভাই ভেতরে চলে গেলেন। সিদ্দিক কিছু বুঝছেনা। রবিন আমার সামনে।
নে ফল খা, কয়েল কিনেছিস?
হ্যা, গেইটে রেখে আসছি।
তাকা আমার দিকে! কি হল তাকা! ধুর ব্যাটা এটা কিছু হলো? আমরা কেউই মাল্টিন্যাশনাল কম্পানিতে জব করিনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১২:৩৩