somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাসপাতালের নার্স

১৫ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ৮:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চক্ষু মেলিতেই দেখিলাম সোনালী চুলের এক নীল নয়না আমার মুখের ঠিক এক বিঘৎ উপরেই ডাগর ডাগর নয়ন মেলিয়া চাহিয়া রহিয়াছে। এতই কাছে তাহার মুখ যে আমার মুখের চামড়ায় তাহার গরম নিঃশ্বাসের উত্তাপ অনুভব করিতে পারিতেছিলাম। গোলগাল ফর্সা মুখে ডাগর ডাগর নীল নয়ন দুখানা যেনো আমার জন্যই ব্যকুল হইয়া রহিয়াছে। ভাবিলাম, গতকল্যই পটল তুলিয়া সরাসরি বেহেস্তে দাখিল হইয়াছি বলিয়া এই হুরখানা আমার জন্য বরাদ্দ হইয়াছে। কিন্তু, একি! হুরপরী ইংরেজীতেই আমার কুশল পুছ করিতেছে। মনে করিলাম, ইংলিশ দেশে পটল তুলিয়াছি বলিয়া বলে হয়ত ইংরেজীতে বাতচিৎ চালাইতেছে। বেহুঁশ অবস্হা হইতে হুঁশ ফিরিলে বাংলা সিনেমার নায়কেরা যেভাবে বলে তেমনি আমিও শুধাইলাম, কোথায় আমি? নীল নয়না হাসিয়া উত্তর দিলো, তুমি হাসপাতালে। তাহার রিনি-ঝিনি ঝকঝকা দাঁতের হাসি দেখিয়া বুকের মাঝে মোঁচড় মারিয়া উঠিলো। মনে পড়িলো, গতকল্য সাঁঝবেলায় তল পেটে প্রচন্ড ব্যাথা লইয়া হাসপাতালে ভর্তি হইয়াছিলাম।

আগের দিনই শ্বাশুড়ি আম্মা দুই মাসের ইংল্যন্ড সফর শেষ করিয়া বাংলাদেশ রওনা হইয়া গিয়াছে। শ্বাশুড়ি আম্মার প্রস্হান উপলক্ষে তিনদিনের ছুটি লইয়াছিলাম। প্রত্যুষেই মোবাইলে কল পাইলাম উনি সহি-সালামতে দেশে অবতরণ করিয়াছেন। ব্যস্ত থাকিলে মন খারাপ ভাব কম হইবে বলিয়া বউ গিয়াছে ডাক্তারী করিতে। কন্যাকে স্কুলে পাঠাইবার নিমিত্তে তৈয়ার করিবার সময় আচমকা টের পাইলাম তল পেটে চিন চিন করিয়া ব্যাথা শুরু হইয়াছে। গুরুপাক খাইবার দরুণ অম্বলের বেদনা মনে করিয়া বিশেষ পাত্তা দিলাম না। কন্যাকে স্কুলে নামাইয়া বাসায় ফিরিতেই দেখি চিন-চিন ব্যাথা ক্রমান্বয়ে বাড়িতেছে। ঔষধের বাক্স খুলিয়া নিজেই ডাক্তারী ফলাইলাম। ফল বিশেষ হইলোনা বরং ব্যাথা আরো বাড়িলো। অবশেষে না পরিয়া জ্বালামুখী মোবাইলে কল দিলাম। সাধারনতঃ সে অপারেশন থিয়েটারে থাকিলে ফোন ধরেনা। এইবারও তার ব্যতিক্রম হইলোনা। একখানা ভয়েস মেইল রাখিয়া যথেষ্ট মনে না হওয়ায় অবস্হা বর্ণণা করিয়া এসএমএস করিয়া দিলাম। এই করুণ অবস্হার মাঝেও আবার স্কুল হইতে কন্যাকে লইয়া আসিয়াছি। অবশেষে বিকাল চারটায় জ্বালামুখী কলব্যাক করিয়া কহিলো, "ও লো মিনসের বুঝি ঢং বাড়িয়াছে"।ক
কাতর কন্ঠে কহিলাম, "ওহে আমি সত্য সত্যই মরিতে বসিয়াছি।" টেলিফোনে লক্ষণ শুনিয়া গিন্নী সহসাই ঘরে আসিয়া পড়িলো। হাসপাতালের আবাসনে থাকিবার দরুণ ঘর হইতে হাসপাতালের দুরত্ত্ব পাঁচ মিনিটের অধিক ছিলোনা বলিয়া রক্ষা। গৃহে আসিয়াই গিন্নী আমারে বগলদাবা করিয়া আবার হাসপাতালে রওনা হইলো। ইমারজেন্সী-তে ডাক্তার শুধাইলো, ব্যাথা কি খুব বেশী? দাঁতে দাঁত চাপিয়া কহিলাম, ওহে মোটেই ব্যাথা নাই। চল বাহিরে গিয়া স্নো-ফাইট করিয়া আসি। গিন্নী, অবস্হা দেখিয়া ডাক্তারকে কহিলো, কিছু মনে লইয়োনা, অতিরিক্ত ব্যাথায় সে পাগলপাড়া হইয়া গিয়াছে। খাচ্ছর ডাক্তার হাসিয়া উত্তর দিলো, তাহা হিলে একখানা সাইক্রিয়াট্রিস্ট খবর লাগাই। বুঝিলাম, বড়ই খতরনাক খচ্চরের হাতে পড়িয়াছি। মুখ বেকাঁ করিয়া কহিলাম, "ভাইডি আমারে বাঁচা। কতা দিতাসি আর ফাইজলামী করিবনা।" এরপরে ডাক্তার কহিলো, "ব্যাথা কমাইবার ব্যবস্হা করিতেছি। তবে আজিকে রাত হাসপাতালে থাকিতে হইবে।" ইহার পর আর কিছু মনে নাই। তবে পরে শুনিয়াছি, আমাকে নাকি মরফিন মারিয়া বেঁহুশ করিয়া রাখিয়াছিলো। মরফিন মারার পরে আমি নাকি বহুত পাগলামী-ছাগলামী করিয়াছি যাহা আমার নিজেরই মনে নাই।

সক্কাল বেলায় হুঁশ ফিরিতেই নীল নয়নার সহিত আমার ঘটনার শুরু। যাহা হউক নীল নয়না আমারে ধরিয়া শোঁয়া হইতে উঠাইলো। আহা মরি মরি কি সুখ। ব্যাথার আগা-মাথাও নাই এক্কন। মনে হইলো পরাই সুস্হ হইয়া পড়িয়াছি। বিছানা হইতে নামাইতে নামাইতে জানাইলো তাহার নাম ক্লারা। সিস্টার না কহিয়া তাহাকে ক্লারা কহিলেই বেশী আমোদিত হইবে। কহিলাম তাই সই, তোমার মতো রূপবতী'র ব্রাদার হইতে আমার মনে খচ খচ করিবে। ক্লারা কল-কল হাসিতে ভাংগিয়া পড়িয়া কহিলো, ওহে মানুষ তুমি দেখি বড়ই রসিক। যাহা হউক প্রাতঃকার্য সম্পাদন করিলাম। ক্লারা নাস্তা আনিয়া বড়ই যত্নের সহিত খাওইয়া দিলো। বড়ই চেষ্টা করিয়া মনে করিবার চেষ্টা করিলাম জ্বালামুখী কবে এমন যত্ন করিয়াছে। নইলে কি আমার হাসপাতালে ভর্তি হইতে হয়!

নাস্তার পর ক্লারা কহিলো, তোমার বাচ্চাখানি বড়ই সুন্দর ঠিক তোমার বউয়ের মতোই দেখিতে। চমকাইয়া শুধাইলাম, আমার বউ-বাচ্চাকে তুমি কিভাবে চিনো? সে কহিলো, বারে তোমার বউ আমাদের ডিপার্টমেন্টের ডাক্তার। মনে মনে জ্বালামুখীর বুদ্ধির প্রশংসা করিলাম, সে না থকিলেও যাতে আমার উপর নজর রাখিতে পারে তাই নিজের বিভাগে ভর্তি করাইয়াছে। তার মানে লুলামী করিলেও সাবধানে করিতে হইবে। কিন্তু অতি সুন্দরী ক্লারার দিকে নজর পড়িতেই সাবধানবানী ভুলিয়া গেলাম। দাঁত বাহির করিয়া বিগলিত হাসি দিয়া কহিলাম, তোমার সাথে আমার কেনো আর আট বছর দেখা হয় নাই? সে অবাক হইয়া কহিলো, কেনো? লুল হাসি দিয়া কহিলাম, তাহা হইলে আমি তোমারে বাংলাদেশের রাণী বানাইয়া রাখিতাম। ক্লারা দেখিলাম বেশ মজা পাইয়া গিয়াছে। জানিতে চাহিলো বাংলাদেশের রাণীটা কি করে। উত্তরে কইলাম, কি করেনা ওইটা খিলে বরং সহজ হইবে। ইত্যবসরে বউয়ের বান্ধবী লোরেটার লাগি মুখস্ত করা ইংলিশ জুক্স ছাড়িয়া দিলাম। ক্লারা তো মহা খুশী। এমন আমোদ নাকি কোনো রোগী তাহাকে তাহাকে দেয় নাই। ভাবিলাম একবার বলি চল আমরা দুইজন বন্ধু হই। জ্বালামুখীর মুখ মনে পড়ায় তাহা হইতে বিরত রহিলাম। নইলে পরে কখনো বেদনা উঠিলে নির্ঘাৎ আমাকে রাস্তায় বরফের উপর ফেলিয়া রাখিবে। ক্ষণ পড়ে ক্লারা কহিলো, তাহার ডিউটি শেষ হইয়াছে, সে চলিয়া যাইবে। মন খারাপ হইয়া গেলো। কি আর করা বিরস বদনে তাহাকে বিদায় দিলাম। তবে যাইবার পূর্বে সে আমাকে একখানা হাগ করিয়া গেলো। আহা মরি মরি!

সেই সাঁঝেই ঘরে ফিরিলাম। পরেরদিন ডিউটি হইতে গিন্নী ঘরে আসিয়া কহিলো, ওহে মিনসে তোমার বাংলাদেশের রাণী তোমার কথা শুধাইয়াছে। কুঁ কুঁ করিয়া বেদনায় মরিতেছিলা আর ওই অবস্হায়ও লুলামী না করিয়া থাকিতে পারো নাই। বুঝিলাম, কাহিনী লিক হইয়া গিয়াছে। মিন মিন করিয়া কহিলাম, "আরে মরফিনের ঘোরে কি না কি বলিয়াছি, আমার রাণী তো শুধু তুমি। তুমি না থাকিলে তো কবেই পটল তুলিতাম"।
জ্বালামুখী মুখ আরো শক্ত করিয়া কহিলো, "মনে থাকে যেনো।" বিপদ হইতে রক্ষা পাইয়াছি বটে। তবে ভাবিয়া বাহির করিলাম, ক্লারাকে বন্ধুত্বের প্রস্তাব না দিয়া ভালোই করিয়াছি। পাছে যদি লুল মনে করিতো
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১০:২৪
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×