০১.
রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডার সমাবেশে দেশের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিবরণ দিতে গিয়ে বক্তা বললেন:
- ক শহরে ক'দিন আগে ইলেকট্রিক স্টেশন খোলা হয়েছে।
দর্শকদের ভেতরে একজন চিৎকার করে বললো:
- আমি আজই এসেছি ওই শহর থেকে। কোনো ইলেকট্রিক স্টেশন নেই সেখানে।
বক্তা তবু চালিয়ে গেলেন:
- একটি রাসায়নিক কারখানা স্থাপন করা হয়েছে খ শহরে।
আরেকজন দর্শকের প্রতিক্রিয়া:
- আমি গতকাল গিয়েছিলাম ওই শহরে। ওখানে কোনো রাসায়নিক কারখানা নেই।
বক্তা বললেন নির্বিকার চিত্তে:
- প্রিয় কমরেডরা, শহরে শহরে অতো ঘুরে না বেড়িয়ে আপনাদের উচিত নিয়মিত পত্রিকা পড়া। তাহলে দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা হবে আপনাদের।
০২.
বনের ভেতর হাঁটছে খেঁকশিয়াল। হঠাৎ শব্দ ভেসে এলো পাশের ঝোপ থেকে:
- কু-কু-রু-কু!
নির্ঘাত মোরগ! উৎফুল্ল খেঁকশিয়াল ঝাঁপিয়ে পড়লো ঝোপের ওপর। খানিকক্ষণ ধস্তাধস্তির শব্দ। একটু পর ঝোপ থেকে বেরিয়ে এলো নেকড়ে। মৃত খেঁকশিয়ালকে ধরে রেখেছে মুখে। সেটাকে মাটিতে নামিয়ে রেখে তৃপ্তির সুরে আপনমনেই বললো সে:
- একটা বিদেশী ভাষা জানার কত গুণ!
০৩.
নিক্সন জিজ্ঞেস করলেন ব্রেঝনেভকে:
- আপনাদের দেশে কেউ ধর্মঘট করে না কেন?
- আমাদের দেশের শ্রমিকরা সরকার এবং পার্টির যে-কোনো সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়।
- হতেই পারে না।
- বিশ্বাস না হলে নিজেই পরীক্ষা করে দেখুন।
এক শ্রমিক সমাবেশে নিয়ে যাওয়া হলো নিক্সনকে। সেখানে তিনি ঘোষণা করলেন:
- কাল থেকে আপনাদের বেতন অর্ধেক করে দেয়া হলো। (প্রচণ্ড হাততালি)। কাল থেকে প্রতি দশ জনের এক জনকে সাইবেরিয়ার শ্রম শিবিরে পাঠানো হবে। (প্রচণ্ড হাততালি)। কাল থেকে প্রতি পাঁচজনের একজনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে। (প্রচণ্ড হাততালি)।
হাততালি থামার পর হতভম্ব নিক্সন সংবিৎ ফিরে পেলেন একজন শ্রমিকের প্রশ্নে:
- ফাঁসির দড়ি কি আমরা সঙ্গে করে নিয়ে আসবো, নাকি তা ট্রেড ইউনিয়ন থেকে সরবরাহ করা হবে?
০৪.
পনেরো বছরের মেয়ের সাথে যৌনতা বিষয়ে আলোচনা করা কি উচিত?
- উচিত, যদি এ-ব্যাপারে নিজের জ্ঞান বৃদ্ধির ইচ্ছে থাকে।
০৫.
বোকা নাকি টেকো হওয়া ভালো?
- বোকা হওয়াই ভালো। অতো বেশি চোখে পড়ে না!
০৬.
সামরিক বাহিনীতে কয়েকমাস কাটানোর পর প্রথম ছুটি কাটাতে নিজের গ্রামের এসেছে একজন সৈনিক। বাবা জিজ্ঞেস করলো তাকে:
- কী অবস্থা সামরিক বাহিনীতে?
- জোড় যার মুলুক তার।
- মানে?
- দেখতে চাও? আরো রাত হোক, উদাহরণ দিয়ে দেখাবো।
ভোর চারটায় পিতা-পুত্র বেরুলো ঘর থেকে, দাঁড়ালো মাঠের মাঝখানে, তারপর ঘন্টা বাজাতে শুরু করলো। ঘুম ছেড়ে উঠে এলো সারা গ্রামের লোকজন। ছেলে চিৎকার করে সবার উদ্দেশ্য বললো:
- আমি আর বাবা এখন যাবো কাঠ কুড়োতে। বাকী সবাই যার যার ঘরে ফিরে যান।
০৬.২
জেনারেলের ছোট মেয়ে আব্দার ধরেছে:
- বাবা, আজকেও হাতি তাড়াও।
- না, মা, এখন তো অনেক রাত। হাতিরা খুব ক্লান্ত, ঘুমিয়ে পড়েছে।
- বাবা, হাতি তাড়াও।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে টেলিফোন তুলে নিয়ে তিনি ফোন করলেন মেজরকে:
- আমার অর্ডার শোনো। ব্যাটেলিয়নের সবাইকে ঘুম থেকে তুলে গ্যাস মুখোশ পরিয়ে পাঁচ কিলোমিটার দৌড়িয়ে নাও।
০৭.
সবজির দোকানে ক্রেতা।
- টমেটো আছে?
- নেই।
- শশা আছে?
- নেই।
- গাজর আছে?
- নেই।
- পেঁয়াজ আছে?
- শুনুন মশাই, এটা সবজির দোকান, ইনফরমেশান ব্যুরো নয়।
০৮.
মাংস এবং মুর্গির দোকানের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে দু'টি মোরগ। প্রথমটি বললো:
- চল, দোকানে ঢুকি।
- কেন, কিছু কিনবি নাকি?
- না, কিন্তু নেংটা মুর্গি দেখতে ইচ্ছে করছে খুব।
০৯.
মানুষের সুখের রকমফের।
কাজের শেষে ঘরে ফিরে এলো জার্মান। স্ত্রী তাকে খেতে দিলো ঝলসানো মাংস আর বিয়ার। ডিনার করে শুয়ে পড়লো সে বউকে জড়িয়ে। তারা সুখী।
ইংরেজ ঘরে এলো কাজের শেষে। স্ত্রীর সাথে ডিনার করে কুকুরকে নিয়ে একটু ঘুরতে বেরুলো সে। তারপর ফিরে এসে বউকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো। তারা সুখী।
কাজের শেষে ঘরে এলো ফরাসী। বউকে পেলো না ঘরে। এক বোতল শ্যাম্পেন নিয়ে সে চললো প্রেমিকার কাছে। তারা সুখী।
কাজের শেষে রাজনৈতিক প্রোপাগাণ্ডার মিটিং-এ বাধ্যতামূলক হাজিরা দিয়ে অনেক দেরি করে ঘরে ফিরলো রুশ এবং তার স্ত্রী- ইভানভ এবং ইভানভা। খুব একচোট ঝগড়া হলো তাদের মধ্যে। তারপর পরস্পরের দিকে পিঠ ফিরিয়ে শুয়ে পড়লো তারা। মাঝরাতে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ।
- কে?
- কেজিবির লোক। দরজা খুলুন।
তিনজন ঢুকলো ঘরে। একজন জিজ্ঞেস করলো:
-আপনার পদবী পেত্রোভ? আপনাকে গ্রেফতার করা হলো।
- আপনারা ভুল করছেন, আমি পেত্রোভ নই। পেত্রোভ থাকে আমার ঠিক ওপরের ফ্ল্যাটে।
একটু পর ইভানভ আর ইভানভা জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখলো, পেত্রোভকে গ্রেফতার করে গাড়িতে ওঠানো হলো। ইভানভ আর ইভানভা শুয়ে পড়লো আবার তারা সুখী।
১০.
জাদুঘরে স্তালিনের মায়ের প্রতিকৃতির সামনে দাঁড়িয়ে এক লোক খুব বিমর্ষভাবে দু'পাশে মাথা ঝাঁকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো:
- কী সুন্দরী মহিলা! কিন্তু সময়মতো কেন যে অ্যাবরশান করাননি!
১১.
বেশ জোড়েসোরেই বললো রাবিনোভিচ:
- শালার অভিশপ্ত জীবন!
সাদা পোশাকধারী কেজিবি এসে বললো তাকে:
- আমার সাথে যেতে হবে আপনাকে।
- আমি তো খারাপ কিছু বলিনি। বলছিলাম পশ্চিমা পুঁজিবাদী দেশগুলোর অভিশপ্ত জীবনের কথা্
- আপনি বললেন আর আমি বিশ্বাস করলাম? অভিশপ্ত জীবন কোথায়, তা ভালো করেই আমাদের জানা আছে। চলুন আমার সাথে।
১২.
ঠোঁটে ভয়ঙ্কর পোড়া দাগ নিয়ে উড়ছে মশা! অন্য এক মশা জিজ্ঞেস করলো তাকে:
- কী করে ঠোঁট পোড়ালি?
- অন্ধকারে জ্বলন্ত সিগারেটকে জোনাকির বউ ভেবে চুমু খেতে গিয়েছিলাম।
১৩.
১৯৭০ সালে ভয়ংকর বন্যায় রুমানিয়ার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলে সাহায্য হিসেবে আমেরিকা পাঠালো দুই মিলিয়ন ডলার, পাঁচ মিলিয়ন ডলার পাঠালো চীন এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন পাঠালো- সাঁতার শিক্ষা পদ্ধতি নামক শিক্ষামূলক পুস্তক।
১৪.
মস্কো অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা পড়তে শুরু করলেন ব্রেঝনেভ:
- ও, ও, ও...
পাশ থেকে তাঁর সহকারী তড়িঘড়ি করে বললেন:
- কমরেড ব্রেঝনেভ, ওগুলো অলিম্পিক রিং, ও অক্ষর নয়!
১৫.
জনতার মাঝে ব্রেঝনেভ।
- কেমন আছেন, কমরেডরা?
- ভালো আছি।
- আরো ভালো থাকতে চান?
- আপনি নির্দেশ দিলে আমরা আরো ভালো থাকবো।
[কৃতজ্ঞতা: মাসুদ মাহমুদ। তাঁর লেখা সোভিয়েতস্কি কৌতুকভ, প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ১৯৯৩, হতে সরাসরি কপিকৃত। অনেক বছর আগে উক্ত বই থেকে সরাসরি কপি করে কয়েকটা পোষ্ট দিয়েছিলাম, কিন্তু সঠিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি নাই যার কারণে আমি লজ্জিত]
সোভিয়েতস্কি কৌতুকভ সংগ্রহ (১৮+)
সোভিয়েতস্কি কৌতুকভ সংগ্রহ (১৮+) ... ২
সোভিয়েতস্কি কৌতুকভ সংগ্রহ (১৮+) ... ৩
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১:০২