সেদিন শিল্পকলা একাডেমির উল্টাদিকের রাস্তা টা দিয়ে হেটে আসছিলাম, দুদকের সামনে যখন আসলাম তখন রাত ৩টা। ভিসার কাজ শেষ করতে করতে দেরী হয়ে গেল। সামনের মাসেই অস্ট্রেলিয়ার ফ্লাইট। আমার পরম আরাধ্য অস্ট্রেলিয়া...
এ রাস্তায় তো প্রতিদিন-ই একটা লাইট জ্বালানো থাকে। আজ এত ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখে কিছুটা বিচলিত হলাম। বাসা আমার দেখান থেকে কাছেই। অনেকটা ভয় পেয়ে উল্টাদিকের চিপা রাস্তা অবলম্বন করার সিদ্ধান্ত নিলাম, যাতে এলাকার ভিতর দিয়েই বাসায় পৌছতে পারি। কানে হেডফোন টা ছিল, ইমেজিন ড্রাগন্স এর গান শুনতে শুনতে গাজী টেলিভিশন এর অফিস টার সামনে আসতেই পেছন থেকে কে যেন বলে উঠলো, "কিরে? অস্ট্রলিয়া তাহলে চলেই যাচ্ছিস?" আমি বিচলিত হলাম!! মনে মনে সূরা ফাতেহা আওড়ালাম আর ডানে বামে তাকাতে লাগলাম...
-আরে মফিজ আমারে দেখতে পাইলে কি আমি রাতের আন্ধারে আসি নাকি?
-আ আ আপনে কে??
-আমি কে তুই চিনবি না। গত হইসি ৬৪ বছর আগে...
-মা মা মানে??
-আমার নাম জানতি তুই শালা। তোর বাপ আমার কথা তোরে অনেক বলসে। তুই তখন শিহরিত হইতি। এখন মনে আছে কি না জানি না।
-আপনে ক্যাডা?
-আমি বরকত, আবুল বরকত... পলাশির মোরে আমার নামে একটা ছোট্ট জাদুঘর আছে।
-মানে??
-তোর বাপ আমার সাথে পড়তো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, পলিটিকাল সাইন্সে...
-আমার কাছে কি চান? আমার বাপ তো মইরা গেসে...
-হুম!! এর জন্যই তো আমার আসা, তোর বাপ মরসে ১০ বছর হয় নাই। তাই ফেরেশতা রা ছাড়পত্র দেয় নাই। নাইলে সে ই আসতো তোরে ঠ্যাঙ্গাইতে...
-কিসের ছাড়পত্র?
-তোরে ঠ্যাঙ্গানোর... তোর বাপ আমার সাথে একুশে ফেব্রুয়ারি তে মিছিল করসিল, আমি গুলি খাইসিলাম, তোর বাপ অনেক আহত হইলেও গুলি খায় নাই... আমি তো একাত্তরের আগেই গত হইলাম, তোর বাপ তো একাত্তরে পঙ্গু হইসে আর তুই তার ছেলে হইয়া অস্ট্রেলিয়ায় যাইতেসস? ইংলিশ গান ছাড়া শুনস না?? তোরে কি ঠ্যাঙ্গানো উচিত না??
-আ আ আমি কি করবো?
-তোর বাপ রে যে আমরা এপারে পচাই এটা জানস?
-কি জন্যে পচান বরকত চাচা??
-তোর মহৎ কর্মের জন্য। তোর বাপ এত কিছু কইরা গেল, একটা ভাষা দিয়া গেল, একটা দেশ দিয়া গেল আর তুই ব্যাটা আরেক দেশে যাওয়ার জন্যে ........................
.................. ঠিক তখনই ফজরের আজান দিল। ঘুমটা ভেঙ্গে গেল আমার... আজকে অস্ট্রেলিয়া এম্বাসিতে ভিসা দেয়ার কথা। কিন্তু কালকে রাত্রের ঘটনা টা মনে পরতেই বাবার রাখা ছবিটার উপর চোখ পরলো। সত্যই কি আমার সবসময় মাথা উচু করে রাখা বাবা কে আমার জন্য সবাই অপমান করে?? নাহ, এই দেশের জন্য আমার বাবা এত কিছু করলো। আমিও যা করবো এই দেশেই করবো...
ভাষা শহীদ দের প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যে ছোট্ট একটূ কল্পনা মাত্র

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



