শৈশবে মেয়েদের সাথে স্কুলে যেতাম-আসতাম। ওদের মায়েরা ওদেরকে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিতো।ওরা সুন্দর করে কথা বলতো এবং প্রাণখোলা হাসি হাসতো। আমাকে সাথে রাখতে তারা কোনো সংকোচ বোধ করতো না। তাদের একজন এখন আমার খালা শাশুড়ী। কিন্তু শাশুড়ী হওয়ার পর তিনি আমার সাথে কথা বলতে সংকোচ বোধ করেন। কেন করেন আমি বুঝতে পারি না। এ দিকে আমার মেয়ের জামাই এর ক্লাশমিট তার খালা শাশুড়ী। আমার মেয়ের খালা বিষয়টা উপভোগ করে। তাদের কথায় এটা বুঝার উপায় নেই যে একদা তারা একই ক্লাশে পড়তো।
আপু খুব আদর করতেন। আপুর বান্ধবীও খুব আদর করতেন। এমন মনে হতো যে আমাকে আদর করাই তাদের কাজ। আর মায়ের আদরের তো তুলনা কোন কালেই হয় না। সেটা সবাই বলে। অবশেষে জীবনে একজন স্ত্রী এলেন। তাকে পেয়ে মনে হয় কিছুকাল ঘোরের মাঝেই কেটে গেল। এখন তো শ্বশুর হয়েছি। তথাপি সে যেন এখনো জীবনে জ্বল জ্বল করছে। ঢাকায় বড় ভাইয়ের বাসায় গেলাম অনেক দিন পর। ভাবীর টেক কেয়ারের কথা বলতে গিয়ে বড় ভাইয়ের চোখে পানি এসেগেল। বড় ভাই সুযুগ পেলেই। আমার নিকট ভাবীর সুনাম করেন এবং আমি তা মনোযোগ দিয়ে শুনি।আমার মনে হয় তিনি কোন কিছুই বাড়িয়ে বলছেন না।
শাশুড়িী মায়ের কথা আর কি বলব, মেয়ের জামাইকে সমাদর করার ক্ষেত্রে তাঁর ছিল বিরল প্রতিভা। আমার স্ত্রীও তাঁর মেয়ের জামায়দের সমাদরে মরিয়া। খানিক আগে কথা হলো, ছোট জামাই আসছে। সেজন্য তাঁর খাটাখাটুনির শেষ নেই।
মেয়েরা তো সেকাল থেকে একাল অবদি তাদের পিতাকে ঘোরের মাঝেই রেখেছে।অবশেষে এভাবেই বিদায়ের কাল এসে যায় কিনা কে জানে? এদিকে জামাই বাবাজীদের আন্তরিকতায় আমি রীতিমত অবাক। বুঝলাম আমার মেয়েদের সাথে হয়ত তারা খুশী আছে।
তথাপী কোন উটকো নারীবাদী, কোথা থেকে কোন সব উটকো কথার জাল বুনে তা’ আজ অবদি আমার বুঝে আসেনি। কাকার প্রতি ভাতিজাদের থেকে ভাতিঝিদের আন্তরিকতা বেশীই মনে হয়েছে। এক ডক্টর বড়ুয়ার সাথে জীবনে প্রথম সাক্ষাৎ হলো, হতেপারে তাঁর সাথে এটা আমার জীবনের শেষ সাক্ষাৎ। তিনিও কথায় কথায় তাঁর বিসিএস শিক্ষা স্ত্রীর কথা তুললেন। বুঝাগেল তিনি স্ত্রী অন্তপ্রাণ। মেয়েরা পুরুষদের প্রতি এমন অন্তপ্রাণ কেন? কারণ পুরুষরাও আসলে তাদেরকে ভালোবাসে। এসব বিষয় সাহিত্য হতে পারে। যেন লোকে বুঝে যে মেয়েদেরকে আসলে ভালোবাসতে হয়। তাদেরকে স্নেহ-শ্রদ্ধা করতে হয়। আর মেয়েদেরকেও এটা বুঝানো দরকার যে পুরুষকেও আসলে মায়ার জালে বেঁধে ফেলা যায়।
আল্লাহ নারী-পুরুষ সৃষ্টি করেছেন এক সাথে পথ চলার জন্য। তাহলে তাদের ডিভোর্স কেন হবে? ডিভোর্স যেন না হয় তার জন্য পুরুষ বেশী সাবধান থাকবে। কারণ বিয়ে করে মেয়েটি তার বাড়ীতে আসে সে বিয়ে করে মেয়েটির বাড়ীতে যায় না। সুতরাং পুরুষ মেয়েটির দোষ না ধরে গুণের সমাদর করবে। তাহলে হয়ত তাদের সম্পর্ক পাকাপোক্ত হবে।
আমার চাচা তাঁর স্ত্রীর কথা খুব বলতেন। সেজন্য আমার জেঠি বলতেন, এমন তসতরী সবার আছে।সুতরাং নারী শুধু নিগৃহিত হয় না, বরং তারা সমাদরও পায়। আর ডিভোর্স হলে দু’জনেই সেকেন্ড হ্যান্ড হয়ে যায়। সেকেন্ড হ্যান্ড মালের দাম কিন্তু অর্ধেক। সুতরাং ডিভোর্স কিছুতেই নয়। দাম্পত্যে উচিৎ কাজ হলো অপর পক্ষকে নিজের মত করে গড়ে তোলা।আমি আশা করবো ব্লগের কেউ ডিভোর্সের ফেকরায় পড়বেন না। নাতালিয়া-হাবিব, ফ্লরিনা-জুবায়েরের মত কাপল তৈরী হোক প্রতি ঘরে।
আমার মেয়েরা বলেছে মেয়ে হতে পেরে তারা খুব খুশী।আজ বাসে আসতে বালিকা বিদ্যালয়ের বালিকাদেরকে দেখে আমার চাঁদের হাট মনে হলো। মহানবি (সা.) কন্যাদেরকে জান্নাত বলেছেন। আমার মনে হয় কন্যারা ঘরে জান্নাতের মতই বিরাজমান থাকে। কল্যাণ হোক সকল কন্যার।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৫৫