
গ্রামে গিয়ে শুনলাম। পিতা পুত্রকে তার স্ত্রীকে পায়ের জুতা মনে করার তালিম দিচ্ছে। আমি এমন পিতার কথা শুনা পুত্রদের স্ত্রীদেরকে তাদের স্বামীদেরকে রোজ তিন বেলা জুটা পিটা করার উপদেশ দিচ্ছি। তাহলে উক্ত স্বামীদের পিতাগণ বুঝবেন তাঁদের পুত্রদেরকে দেওয়া তালিম কোন কাজে লেগেছে? দেশে কঠোর নারী নির্যাতন আইন থাকার পরেও এসব বেকুব এমন সব কথা কি করে বলে বুঝতে পারলাম না।
বাংলাদেশে নির্যাতনের প্রতিকার চাইতে গিয়ে আরো বেশী নির্যাতিত হতে হয়। একটা বিষয়ে মামলা দিতে থানায় গেলাম। প্রথমত পুলিশ কথা শুনতেই রাজি নয়। মামলা নিতেও রাজি নয়। আসামী ধরতেও রাজি নয়। সব কাজেই টাকা লাগবে। কেউ আসামী ধরতে টাকা দিলে অপর পক্ষ আসামী না ধরতে টাকা দিলে আসামী আর ধরা হবে না। আসামী কেন ধরা হচ্ছে না জিজ্ঞাস করলে বলবে আসামী পাওয়া যাচ্ছে না। অবস্থা বুঝে আবার টাকা দিলে আসামী ধরবে। তবে অপর পক্ষ টাকা দিলে আসামী ছেড়ে দিবে। এরপর অনেক টাকা খরচ করে মামলা ফাইল করার পর বাদীর উকিল টাকা খেয়ে শুনানীতে অনুপস্থিত থাকবে, ফলে বিচারক মামলা খারিজ করে দিবে। বাদীর উকিল টাকা না খেলে বিচারক টাকা খেয়ে আসামী খালাস দিয়ে দেয়। এ দেশে টাকা যে দিকে মামলার রায় সে দিকে চলে যায়। বাদী টাকা দিলেও ফল পায় না যদি অপর পক্ষ বেশী টাকা ছাড়ে। যে কাজ এমনিতে হওয়ার কথা সে কাজ ঘুষ দিয়েও না হলে কেমন লাগে? এমনিতে কি আর আমরা দূর্নীতিতে পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে ছিলাম? তো এমন দেশের পিতাগণ তাদের পুত্রদেরকে তাদের স্ত্রীদেরকে পায়ের জুতা বানানোর তালিম দিতেই পারে।
স্ত্রী যদি জুতা হয় তাহলে অবস্থা কি হয়? জুতা তো যে পরিধান করে সেটা তো তার হয়ে যায়। সুতরাং একজনের জুতা অন্য কেউ পায়ে দিয়ে চলে গেলে জুতার কি দোষ? এমন লোকের স্ত্রী অন্য কারো হাত ধরে চলেগেলে দোষটা কার হবে? এক শিক্ষিত লোকের এমন তিন স্ত্রী চলে যাওয়ার পর এখন আর সে স্ত্রী পাচ্ছে না। বেকুব পিতার উপদেশ মানলে পুত্রের স্ত্রী থাকে না। সুতরাং পিতা-মাতা হলেই তাদের সব কথা মানা যাবে না। পিতা-মাতার কথা মানলে যদি ক্ষতিটা আমার হয় তাহলে আমি এমন পিতা-মাতার কথা কেন মানব?
পিতা-মাতা গুরুজন হলেও তাদের উপদেশ গুরু না হয়ে লঘু হলে মানার দরকার নাই। পিতা-মাতার কারণে বহু সংসারে অশান্তি। পিতা-মাতার পক্ষে ওয়াজ বেশী থাকায় অনেক সময় তারা সন্তানের জীবন বিনষ্টে অবদান রাখে। এক পুত্র বধু বলেছে বুড়ো হলে মানুষ বাঁদর হয়ে যায়। শুনেছি সন্তানের রোমাঞ্চের সময় তাদের অনেকে সন্তানের কক্ষের বিদ্যুৎ সর্বরাহ বন্ধ করে দেয়। অথবা অন্যভাবে তুলকালাম বাধিয়ে তাদের রোমাঞ্চ বিনষ্টে তৎপর হয়। এসব কাজকে বাঁদরামী না বলে উপায় কি? আবার কেউ যেন না বলে এতেই প্রমাণিত হয়, মানুষ বাঁদরের বংশধর। আর সেজন্যই বার্ধক্যে এসে তাদের বাঁদরামী প্রকট হয়। সন্তান যখন প্রবল উত্তেজনায় থাকে তখন তারা সামাজিক রীতি নিয়ে হাজির হয়। কি মুশকিল সামাজিক রীতি ক্ষণিক পরে হলে কি হয় না? না তারা কোন ভাবেই সমঝোতায় সম্মত হবে না। আর এ শয়তানীর জন্য বহু পরিবার ভেঙ্গে যায় এবং বহু সন্তান ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়।
বহু কষ্টকরে মেয়ে প্রতিপালন করে বিয়ে দেওয়ার পর সেই মেয়ে কারো পায়ের জুতা হবে এটা মেনে নেওয়া মেয়ের পিতার পক্ষে অসম্ভব। বরং সেই মেয়ে যদি কারো মাথার তাজ হয়। সেটা মেয়ের পিতার জন্য আনন্দ দায়ক হয়। মেয়ের হাসির জন্য মেয়ের পিতা তার শ্বশুর পক্ষের জন্য অনেক টাকা খরচের পরেও যদি মেয়ের হাসি না দেখে তখন তারা চরম অসহায়ভাবে হাতাশ হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৩:৪০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




