somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে আল্লাহ কেন তাদেরকে কষ্ট দিচ্ছেন?

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আল্লাহর বিষয়ে মানুষের প্রশ্নের অন্ত নেই।এর মধ্যে একটি মোক্ষম প্রশ্ন হলো, মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে আল্লাহ কেন তাদেরকে কষ্ট দিচ্ছেন? আল্লাহ তাদেরকে পৃথিবীতে না পাঠালে তাদেরকে এত কষ্ট করতে হতো না।কিন্তু কেউ যখন কোন প্রতিষ্ঠানের চাকুরী গ্রহণ করে তখন সে প্রতিষ্ঠান তাকে তাদের কাজে যেথায় পাঠায় সেথায় যেতে সে বাধ্য থাকে।তার এ কথা বলার অধিকার থাকে না যে আমাকে কেন ও যায়গায় পাঠানো হচ্ছে? আর চাকুরী করলে কষ্ট না করে উপায় কি থাকে? অনুরূপ কেউ কারো প্রভুত্ব গ্রহণ করলে, প্রভু তাকে যেমন চালায় তার তেমন চলতে হয়। কাজের জন্য প্রভু তাকে যেথায় পাঠায় তাকে সেথায় যেতে হয়। তার এটা বলার অধিকার থাকে না, প্রভু তাকে অমুক স্থানে পাঠালেন কেন? আর প্রভুর কাজ করতে গিয়ে কষ্ট হলে সে কথা কি বলতে হয়? কাজ করতে গেলে কষ্ট একটুতো হয়েই থাকে। তো মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানোর পূর্বে আত্মার জগতে মানুষ সহ সকল প্রাণীর আত্মাকে আল্লাহ জিজ্ঞাস করেছেন, ‘আলাছতু বি রাব্বিকুম-আমি কি তোমাদের প্রভু নই?’ ‘কালু বালা-তারা বলল, হ্যাঁ’।তার মানে তখন সবাই আল্লাহকে প্রভু হিসেবে স্বীকার করেছে। তো আল্লাহর প্রভুত্ব কবুল করে মানুষ পৃথিবীতে এসে এখন কষ্ট হয়, এসব বললে কেমন কি হয়?

আত্মার জগতে আত্মার সাথে আল্লাহর কি কথা হয়েছে সে সব কথা এখন আত্মাদের মনে নেই। আর মনে থাকেইবা কেমন করে? প্রত্যেকের আত্মা ভ্রুণে প্রবেশ করানো হয়েছে। এরপর পত্যেক আত্মা নব জাতক হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছে। তাদের ভিতর এসব স্মৃতি থাকলে কি অবস্থা হতো! এখন প্রত্যেককে আল্লাহ তাঁর নবির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন যে কারো প্রতি বিন্দুমাত্র অন্যায় করা হবে না। তথাপি হাসরের মাঠে কেউ যদি আল্লাহকে জিজ্ঞাস করে বসে যে কেন তাকে মানুষ বানিয়ে বিপদে ফেলা হয়েছে? তখন তাকে তার কথার যথাযথ জবাব আল্লাহ প্রদান করবেন। আল্লাহ বলেছেন, কেউ জাহান্নামের যোগ্য এটা নিজে থেকে না মেনে নেওয়া পর্যন্ত আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন না। এ জন্য শেষ বিচারে তিনি পঞ্চাশ হাজার বছর ব্যয় করবেন।

‘আলাছতু বি রাব্বিকুম-আমি কি তোমাদের প্রভু নই?’ ‘কালু বালা-তারা বলল, হ্যাঁ’-আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে আত্মার জগতে আত্মাদের ক্ষেত্রে অনেক কিছু ঘটেছে। কিন্তু সে সব স্মৃতি নিয়ে তারা জন্মাতে পারেনি কারণ তারা জন্মগ্রহণ করেছে নব জাতক হিসেবে। আর নব জাতকের পুরনো স্মৃতি থাকা সঠিক নয়। আল্লাহ বেঠিক কাজ করেন না। সে জন্য আত্মার পুরনো স্মৃতি স্থগিত করে আত্মাকে নব জাতক হিসেবে পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে।

আত্মা থেকে কেউ মানুষের দেহ আর কেউ ছাগলের দেহ পেয়েছে। কেউ পেয়েছে মুসলমানের সন্তানের দেহ আর কেউ পেয়েছে অমুসলীমের সন্তানের দেহ। কিন্তু কেন? আত্মার এমন ভাগ্য নির্ধারিত হলো কিসের ভিত্তিতে? এটা কি লটারির ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়েছে? কিন্তু লটারির চেয়ে যোগ্যতায় ভাগ্য নির্ধারণ অধিক ন্যায় সঙ্গত। আল্লাহর ন্যায় বিচারী না হয়ে উপায় নেই। কারণ তিনি অসীম। অন্যায় ঘটে বিবেকগত ঘাটতির কারণে। কিন্তু অসীমে ঘাটতি থাকতে পারে না। কাজেই কাজটা যেহেতু অসীম আল্লাহর সুতরাং এটা অনিবার্য সত্যে যে এতে অন্যায় সংঘটিত হয়নি।সংগত কারণে আত্মার জগতে ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছে যোগ্যতার ভিত্তিতে। আর যোগ্যতা হলো কাজ। একটা কাজ সম্পর্কে আমরা জানি, সেটা হলো আল্লাহর প্রভুত্বের স্বীকৃতি।আত্মারা এ স্বীকৃতি প্রদান করেছে জেনে ও বুঝে।

আল্লাহর প্রভুত্ব সম্পর্কে জানা ও বুঝা দু’টি কাজ। আল্লাহর প্রভুত্ব জানা বুঝা ও এর স্বীকৃতি প্রদান সংক্রান্ত কাজের যোগ্যতা সমান হওয়াও ন্যায়ের জন্য জরুরী।আত্মার সহযোগী রিপু ও বিবেক নামক দু’টি আত্মার কথা জানা যায়। নির্বাহী আত্মা বিবেকের সাথে যোগ হলে বিবেক প্রবল হয় আর ইতি বাচক কাজ হয়। নির্বাহী আত্মা রিপুর সাথে যোগ হলে রিপু প্রবল হয় এবং নেতিবাচক কাজ হয়।কাজের ইতি নেতি সঞ্চয় প্রাপ্যতার কারণ হতে পারে।যার জন্য সংশ্লিষ্ট আত্মা দায়ী। এর ভিত্তিতে ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে থাকলে সেটা অবশ্যই ন্যায় সঙ্গত।আল্লাহর ক্ষেত্রে ন্যায় হওয়া অনিবার্য সত্য।

যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে প্রাপকের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় বলে আল্লাহর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।তাহলে বিষয়টা দাঁড়াল প্রাপ্যতা যোগ পছন্দ সমান ভাগ্য। আর এ অনিবর্য সত্যের কারণে ভাগ্যের জন্য সকলে নিজেরাই দায়ী।কিন্তু আত্মার জগতের স্মৃতি এখন কারো মধ্যে নেই।সে জন্য তারা মনে করছে তাদের জীবন ও ভাগ্য বুঝি তাদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে চাপিয়ে দেওয়া। তবে আত্মার জগতের স্মৃতি যখন তাদেরকে ফেরত দেওয়া হবে তখন তারা বুঝবে কোন কিছুই তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া নয় বরং তাদের প্রাপ্যতার সবটার দায় মূলত তাদের নিজেদের। আর কোনভাবেই তাদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন অবিচার করা হয়নি।

মানুষ কিভাবে মনে করতে পারে যে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে? অথচ তাদের প্রত্যেকের সাথে আল্লাহর সম্পর্ক একই রকম। সংগত কারণে তারা যে যা পেয়েছে এর জন্য তার নিজের কি দায় বা সংশ্লিষ্টা থাকতে পারে সকলের সেটা অনু সন্ধান করা উচিত। ইবলিশ শয়তান মনে করেছে আল্লাহ আদমের পক্ষ্যে পক্ষ্যপাতিত্ব করেছেন। সে এটা ভাবেনি আল্লাহ এটা কেন করবেন? এ ভাবে সে আল্লাহর সাথে অন্যায় করেছে।আর আল্লাহ সম্পর্কে অন্যায় ধারণা পোষণ করায় তার বিপথে চলার পথ তৈরী হয়।

মানুষ যদি মন দিয়ে দেখে তাহলে তারা দেখবে আল্লাহর কোন কাজ অহতুক নয়। আর এভাবে অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে তারা আল্লাহর গুণের পরিধি অবগত হবে। যা থেকে তারা বুঝতে পারবে আল্লাহ কি করতে পারেন আর কি করতে পারেন না। ইবলিশ আল্লাহ সম্পর্কে চিন্তার সে স্তর পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি। কারণ তার নিকট আল্লাহর গুরুত্ব ততটুকু ছিল না। তো আল্লাহর প্রতি তার গুরত্বহীনতাই তাকে ডুবিয়েছে। আল্লাহর থেকে কিছু পাওয়ার জন্য সে কিছু কাজ করেছে।সে স্বার্থের পিছনে ছুটেছে, সে সত্যের পিছনে ছুটেনি। ফলে সে সত্য থেকে দূরে সরে মিথ্যার কোলে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। সে জন্য সে মনে করতে পেরেছে আল্লাহ অন্যায় করতে পারেন। সে জন্য সে আল্লাহর কাজকে অন্যায় সাব্যস্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। যা সঠিক ছিল না। কারণ আল্লাহ অসীম। অসীমে ঘাটতি থাকে না। আর বিবেকের ঘাটতি ছাড়া অন্যায় সংগঠন হয় না। আল্লাহর মধ্যে বিবেকের ঘাটতি থাকা সম্ভব নয়। কাজেই তাঁর পক্ষ্যে অন্যায় করাও সম্ভব নয়। এর সরল সত্য ইবলিশ বুঝতে পারেনি। আর এখন সেটা ইবলিশের চেলারা বুঝতে পারে না। আর আল্লাহ অন্যায় করতে পারেন না এটা বুঝতে না পেরে তারা আল্লাহকে দোষারোপ করার চেষ্টা করে।

মানুষকে কেন পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে? এর কারণ অনুসন্ধান করলে মানুষ এতে আল্লাহর কোন দায় খুঁজে পাবে না। যদি তার অনুসন্ধান সঠিক থাকে। আর অনুসন্ধান বেঠিক হলে এর থেকে সঠিক কিছু আশা করাই বোকামী। কাজেই প্রত্যেকে তার নিজের মঙ্গলের চিন্তা ও চেষ্টা করুক এটাই সবার সঠিক কাজ।

বিঃদ্রঃ ‘ইসলামের সঠিকতার অকাট্য প্রমাণ’ গ্রন্থের একটি অধ্যায় হিসেবে লেখাটি লেখা হয়েছে।

উৎসর্গঃ ব্লগার রাজীব নুর খান

প্রাথমিক কথা

ভিন্ন চিন্তা

নাস্তিক্যবাদ

আস্তিক্যবাদ

কোরআন অবশ্যই আল্লাহর বাণী

হজরত মোহাম্মদ (সা.) অবশ্যই আল্লাহর নবি

সব নবি কেন এক এলাকার?

নাস্তিক কেন উন্নত হয়?
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৩৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×