বিরক্তি কাটিয়ে ছুটে চললো আমাদের গাড়ি......তবে এখন গরম পড়ছে গরম কালের মতই...
কিন্তু ধীরে ধীরে যতই পাহাড়ের গভীরে প্রবেশ করছি গাড়ির উর্দ্ধমুখী প্রবনতা আর নিন্মমুখী প্রবনতা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে.....কখনো পাহাড়ের পাশ দিয়ে কখনো পাহাড়ি বনের মাঝ দিয়ে আমেদের গাঁড়ি এগিয়ে চললো একটু একটু করে......আমরাও চারপাশের দৃশ্যে মুগ্ধ.....যেদিকেই তাকাই এবড়ো থেবড়ো সবুজের সারি সারি সমারোহ....যাত্রার আধা ঘন্টা ভালোই ছিলাম সবাই...হাসি ঠাট্রার মাঝেই কেটে যাচ্ছিলো......
কিন্তু এখন সবাই কিছুটা আতংকিত ....কারন গাড়ি এতই খাড়া উঠছে যে সবার পক্ষে গাড়িতে নিজের স্থানটা ধরে রাখাই কষ্টকর হচ্ছে মনে হচ্ছিলো এই বুঝি পড়ে যাচ্ছি.....আবার যখন নামছে তখন এতই খাড়া নামছে যে গাড়ির এপাশ ভেদ করে যেন সম্মুখ ভাগে চলে যাচ্ছি....
দেথেন রাস্তা....
রাস্তাগুলো এখন আর কোন বনের মাঝ দিয়ে নয়....একদম পাহাড়ের পাশ দিয়ে.....একপাশে তাকালে পাহাড় আর অন্য পাশে পাহাড়ি গর্ত....অর্থাৎ একবার যদি কোন মতে পড়ে যায়...তাহলে গাড়ির তো কিছুই পাওয়া যাবেনা...আর মানুষ যে কোথায় যাবে তা আর না বলি........
কয়েকজনের উক্তি শুনলেই বুঝবেন কেন বললাম আতংকিত ভালো লাগা............শুনুন তাহালে.............................................
এরই মাঝে এক সফরসঙ্গীর ফোন বেজে উঠলো.......ফোনটা রিসিভ করার পর ....
জসিম ভাই ঃ হ্যালো
ওপাশ =>=>=>=>=>=>
হ্যাঁ ভালো আছি ...শুধু একটু দোয়া কইরো....
ওপাশে মনে হয় চিন্তিত হয়ে কিছু জানতে চাইছে....
জসিম ভাই ঃ আরে না ভালো আছি শুধু বললাম একটু দোয়া করতে....
ওপাশের চিন্তা মনে হয় আরেকটু বেড়ে গেলো....
জসিম ভাই ঃ আরে দোয়া করতে বলছি এই জন্য যেন ঠিকঠাক মত বেঁচে আসতে পারি
কারন কখনো আকাশে উঠছি কখনো পাতালে নামছি....হাঁড়গুলো যেন আস্ত থাকে.........
আমাদের অট্রহাসি....ওপাশে ভাবি উদ্বিগ্ন....আমরা একটু সমস্বরে বলে উঠলাম ভাবি চিন্তা কইরেন না শুধু দোয়া করেন......
লাইন কাটআপ....
ভাইগনা ঃ মামা আমি সামনের দিকে তাকাবো না......
লোপা ঃ আমার এই পাশটা সবসময় এমন খালি দেখি কেন....আমি ওদিকে তাকাবোই না...
সোমাঃ আমার দম বন্ধ হবার অবস্থা.....
মামুন ঃ রোলার কোস্টারও এর থেকে ভালো.....ও নো...কি রোলার কোস্টার বানাইছে...এইটার কাছে কিছুই না....
ইমরান ঃ হার্টের সমস্যা যাদের আছে তাদের না আসাই ভালো....আমারটার অবস্থা এখন করুন....
আমি ঃ যখনই দেখবেন উপরে উঠছেন....যতখানি উপরে উঠছেন ততখানি বা তারচেয়ে বেশী নিচে নামার জন্য প্রস্তুত থাকবেন....আবার যখন নিচে নামবেন তখন ততখানি বা তারচেয়ে বেশী উপরে উঠার জন্য প্রস্তুত থাকবেন.......
চলার পথে পাহাড়ের ছবি..
ঘর বানাইছে কোথায়..?
এভাবে চলতে চলতে এবার আমরা এমন এক জায়গায় চলে আসলাম যেখানে পুরো এলাকাই অন্ধকারছন্ন.....আমাদের হালকা শীত অনুভত হতে লাগলো....মূলত সূর্যের আলো এখানে পড়ছে না.....সে হারিয়ে গেছে পাহাড়ের মাঝে.....এখানকার মাটিও অনেকটা সিক্ত....কর্দমাক্ত....যতটুকু জানাগেলো এই স্থানটায় সকাল বেলায় যতটুকুন রোদ্র পড়ে বাকি সময় আলোর দেখা পায় না বলেই....এই পথটা এবড়ো থেবড়ো....কর্দমাক্ত.....
ঐ অন্ধকার জায়গাটা পাড়ি দিয়েই আমরা একটু আলোর মুখ দেখলাম
যাক সকল ভয় ভীতি উপেক্ষা করে অবশেষে আমরা চলে এলাম নির্দিষ্ট গন্তব্যে......
আমাদের পিছনে যে পাহাড়ের চূড়াটা দেখেছেন গন্তব্য সেখানেই...
উঠতে শুরু করলাম....একে একে.....সরু পথ বেয়ে.....ক্ষনিক পরেই সবাই হাঁপিয়ে উঠলাম...ক্ষনিক এর বিশ্রামশেষে আবার পথচলা....এর মাঝে ২/৩জন যারা মোটা তাদের অবস্থা বেশী খারাপ......
পাহাড়ি পথে...
গন্তব্য এখনও বহুদূরে....
এখনও উঠছি...
প্রত্যাশিত সেই চূড়া এখনও দূরে...
ঐ দেখেন কত নিচে গাড়ি থেকে যেখানে নেমেছিলাম...
সবার আগেই আমি সাদা পাহড়ের চূড়ায় পৌছে গেলাম........
আর ওপাশ তাকাতেই অনেকটা স্বপ্নের মত মনে হলো.....সাদা, সবুজ. নীল পানি সব মিলে একাকার....এ যেন স্বপ্নের রাজ্য....চারপাশের পাহাড়ের মাঝে বিশাল এক লেক.....এ কেমন করে সম্ভব....এর পানির উৎস সম্পর্কে কারো ধারনা নেই.....পুরোই প্রকৃতির এক লীলা খেলা...
বাকিটা এখান থেকে দেখে নিন....
আবার আর্মি ক্যাম্পে হাজিরা....
সব শেষ করে লেকসিটিতে আসতে আমাদের ৫.০০টা বেজে গেছে
লেক পাড়ের এলাকা যেখানে রাত্রিযাপন করেছিলাম..
আর লেকের ঠান্ডা পানিতে গোসল করার লোভ সামলাতে পারলাম না.....
সিয়াম দিদি জানতে চাইলেন খাবার দিবেন কিনা....ততক্ষনে সবারই ক্ষুধা চলে গেছে....তাই কেউ খেতে রাজি হয়নি....
ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে পড়লাম পাড়া দেখতে....এরই মাঝে পাকা কলার থোড় দেখে খাওয়ার লোভ সামলাতে পরলাম না.....হালি ১ টাকা করে খাওয়া শুরু না করতেই আরেকজন আইসা বলে আরে ওইটা না খাইয়া এটা খান দেখেন কি মিষ্টি.....টাকা দেওয়া লাগবে না.....সবাই তার আমন্ত্রনেও সাড়া দিলাম
খাওয়ার টেবিলে আমরা কজন....
সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এখানো প্রত্যেকটা ঘরে সৌর বিদ্যুৎ আর জেনারেটর দুইটাই আছে....মোট কথা বিদ্যুৎ এর আলোয় আলোকিত প্রতিটি ঘর......রাত ৮টার পর মনে হলো এখানে যেন উৎসব চলছে...কেউ উচ্চ গলায় গান গাইছে আগুন জ্বালিয়ে গোল হয়ে মাঠের মাঝে......কেউ নিজ ঘরে উচ্চ সাউন্ডে গান শুনছে....৯টার দিকে খাওয়ার ঢাক আসতেই আমরা দেরী করিনি....খাওয়ার পাট চুকিয়ে সবাই যখন কটেজে ঢুকে গেলো...তখন আমি বের হলাম প্রকৃতি দেখতে......
রাত বাড়ার সাথে সাথেই শীত ঝেকে বসছে....কিন্তু একটু দুরে গেলেই পাহাড় আর অন্ধকার সেদিকে হাঁটা ধরলাম....উপরের আকাশটা একদম ফকফকা পরিস্কার ....আকাশের নীলটা যেন ঠিকরে বের হয়ে আসতে চাইছে.....আর সেই সাথে তারার যেন মেলা বেসেছে.....ঢাকা শহরে এভাবে কখনো আকাশ দেখার সময় হয়েছে কিনা মনে নেই....আর দেখলেও এত তারার সমাবেশ কখনো চোখে পড়েনি......আর লেকের পানিতে যেন সেই তারার খেলা চলছে.......আমি সত্যি মুগ্ধ নয়নে চেয়ে রইলাম.......
আনমনেই.....
আমি প্রেমে পড়েছি তোমার রুপে
আমার কি করার আছে?
চাই হারাতে তোমার মাঝে
দিলাম হাতটা বাড়িয়ে
একটুকু ছোঁয়া দিয়ে যাও মোরে।..................
ছোঁয়া সে দিয়েছি কিনা সেটার অপেক্ষা আর করলাম না....চলে আসলাম কটেজে....ঘুমের সঙ্গী হতে ...কারন পরের দিন ৫-৬ ঘন্টার পাহাড়ে উঠানামার কাজ করতে হবে....কটেজের অভ্যন্তরে প্রবেশ করামাত্রই জানতে পারলাম ৪সদস্যের দলটি যারা তাজিংডং যাবে তারা সকালে আমাদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাবে...জরুরী কারনে তাদের অফিসিয়াল ছুটি বাদ হয়ে যাওয়ায় তারা পরেরদিনই বান্দরবন হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে।সবার মনটা কিছুটা হলেও খারাপ হলো......
হারাধনের ১২অধমের বাকি ৮ অধম পরিবর্তি দিনের পোগ্রাম ঠিক করে ফেললাম....গাইডকে ২০০০টাকায় ঠিক করলাম ঝাদিপাই ঝরনা পর্যন্ত ।আমরা সকাল ৭-৭.৩০ এর মধ্যে এখান থেকে ক্রেওক্রাডং এবং ঝাদিপাই ঝরনার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবো .....এ পোগ্রাম মাথায় রেখে আমরা ঘুমের জন্য প্রস্তুত.....
(চলবে)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


