সত্য প্রত্যাখ্যান করা বা তা গ্রহণ না করা এবং নিজেকে অপরের চাইতে বড় মনে করাটাই হল অহংকার বা দাম্ভিকতা। আমরা অনেকেই নিজেদের অবস্থান, অর্থ-সম্পদ, পোশাক, সৌন্দর্য, শিক্ষা ইত্যাদি নিয়ে গর্ব করি। আর যাদের এসব নেই তাদের করি তুচ্ছ, বলি ক্ষ্যাত-ছোটলোক। কিন্তু ইসলামে অহংকারের কোনোই স্থান নেই।
মহাগ্রন্থ কুরআন আল কারীমে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” [সূরা লোকমান; ৩১:১৮]।
অর্থ- সম্পদ, যশ- খ্যাতি, সাফল্য- ব্যর্থতা এ সবই তো আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। এতে মানুষের কোনো হাত নেই। আমরা এটা চিন্তা করি না, যার অর্থ, সম্মান, লোকবল, শারীরিক সৌন্দর্য কিছুই নেই, এতে তার তো কোনো হাত নেই। আবার এর সব কিছুই যার অঢেল পরিমাণে আছে, এতে সম্পদশালী সুন্দর ওই ব্যক্তিরও তো কোনো কৃতিত্ব নেই। দিনরাত পরিশ্রম করেও সাফল্য অর্জিত হয় না, যদি আল্লাহ না চান। কাজেই অহংকার কেন ?
কুরআন আল কারীমে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ
“(অহংকারবশে) তুমি মানুষ হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না; কারণ আল্লাহ্ কোন উদ্ধত, অহংকারীকে পছন্দ করেন না।” [সূরা লোকমান, ৩১:১৮]
সর্বপ্রথম যে অহংকার করেছিল আল্লাহ ও তাঁর সৃষ্টিজগতের প্রতি সে হল অভিশপ্ত ইবলিস শয়তান। যখন আল্লাহ সুবহানাহা ওয়া তায়ালা তাকে আদেশ করেছিলেন আদম(আ) কে সিজদাহ করার জন্য তখন সে অহংকার করে বসল এবং সিজদাহ করতে অস্বীকার করল।
ইবলিস বলল ,“আমি তো তার চাইতে উত্তম, আপনি আমাকে বানিয়েছেন আগুন থেকে আর তাকে বানিয়েছেন মাটি থেকে। ”
আল্লাহ বলেন, “এবং অবশ্যই, আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, এরপর আকার অবয়ব তৈরি করেছি, অতঃপর আমি ফেরেশতাদের বলেছি, আদমকে সিজদাহ করো, তখন সবাই আদমকে সিজদাহ করলো, একমাত্র ইবলীস ছাড়া, সে কিছুতেই সিজদাহকারীদের মধ্যে শামিল হলো না”
আল্লাহ তায়ালা বললেন, “আমি যখন নির্দেশ করেছি তখন কোন জিনিস তোকে সিজদাহ করতে বারণ করলো ? ইবলিস বললো, আমি তার চাইতে শ্রেষ্ঠ, আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন আর তাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি দ্বারা” [আল-আরাফ; ৭:১১-১২]।
ঔদ্ধত্য ও অহংকার ইবলিসের অনেকগুলো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এর মধ্যে একটি, কাজেই কেউ যদি অহংকার করতে চায় তবে তার বোঝা উচিত সে শয়তানের একটি বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করছে, এবং তাদের মত নয় যারা তাদের প্রভূকে মান্য করেছে ও সিজদাহ করেছে।
অহংকার এমন একটি ঘৃণিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যা কিনা ইবলিস ও তার সহচরদের প্রধান একটি বৈশিষ্ট্য, এরা সেই সব লোক যাদের অন্তর আল্লাহ তায়ালা সিল বা মোহর মেরে দিয়েছেন।
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “যার মনে একটি অণু পরিমাণ ওজনেরও অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। ” একজন উপস্থিত লোক জানতে চাইলো, “ইয়া রাসূলুল্লাহ , যদি কেউ তার নিজের পোষাক ও জুতাকে পছন্দ করে একারণে যে তাকে সুন্দর দেখায়”। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “আল্লাহ তায়ালা নিজেই সুন্দরতম অস্তিত্ব এবং তিনি সৌন্দর্য পছন্দ করেন। অহংকার মানে হল, সত্যকে প্রত্যাখান করা ও মানুষকে ছোট করে দেখা ” [মুসলিম , ৯১]। কাজেই বোঝা গেল যে, অহংকার বা দাম্ভিকতা হল জান্নাতের পথে অন্তরায়।
কুরআন আল কারীমে অন্য এক আয়াতে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ "পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূপৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত সমান হতে পারবে না।"
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ইযযত সম্মান আল্লাহ তায়ালার ভূষণ এবং অহংকার তাঁর চাদর। (আল্লাহ তায়ালা বলেন) যে ব্যক্তি এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে ঝগড়ায় অবতীর্ণ হবে আমি তাকে অবশ্যই শাস্তি দেবো।
(সহীহ মুসলিম,৬৪৪১)।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সুমহান আল্লাহ বলেছেন, “অহংকার আমার চাদর এবং শ্রেষ্ঠত্ব আমার পোষাক। অনন্তর যে এর কোন একটি নিয়ে আমার সাথে কাড়াকাড়ি করবে তাকে আমি জাহান্নামে ছুড়ে মারব। (আহমদ)।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- মহান আল্লাহ বলেন, “শ্রেষ্ঠত্ব, গর্ব ও অহংকার আমারই। আর তা আমার গোপনীয় বিষয়। এতএব, যে লোক এর কোন একটি নিয়ে আমার সাথে কাড়াকাড়ি করে, আমি তাকে জাহান্নামে ছুড়ে মারব।”(তিরমিযী)।
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি অহংকার করলো সে যেন আল্লাহ্তায়ালার চাদর ধরে টানাটানি করলো। আর আল্লাহ্ তায়ালার ইজ্জত এবং সম্মান নিয়ে যে টানা হেঁচড়া করলো, পরকালে আল্লাহ্তায়ালা তাকে চরম অপমানের সাথে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। আর যারা অহংকার করলো ও নিজেকে বড় করে অন্যদের সামনে জাহির করলো, আল্লাহ তাকে টেনে নামিয়ে দিবেন একেবারে তুচ্ছদের মাঝে তুচ্ছতম ও অপদস্ত করে।
অহংকার থেকে বেঁচে থাকার উপায় হল, নিজেকে অন্য সবার মতই মনে করা এবং একইসাথে তাদেরকেও আমার মতই মনে করা । তারাও আমার মত একজন আদি মাতা ও পিতা থেকে জন্ম লাভ করেছে আর তাক্বওয়া হল সত্যিকারের শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি।
আল্লাহতায়ালা কুরআনে বলেন,“নিশ্চয়ই, সেই তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা সম্মানিত যার তাক্বওয়া অধিক”[সূরা হুজুরাত ৪৯:১৩]।
আমরা আল্লাহতায়ালার কাছে অহংকার হতে মুক্তি চাই ও চাই তিনি আমাদের বিনীত করুন ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




