স্বাদের ফেইসবুক আর ফেইসবুক নাই, সে এখন ফেইসবুক থেকে পেইজবুক হয়ে গেছে । পচা ডাস্টবিনে এতো ব্যাঙের ছাতা নাই যত পেইজ আছে ফেইসবুকে । কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া যার বেশিরভাগই চরম ফালতু । আর এইসব পেইজের এডমিন নামক উজবুকদের কান্ডঞ্জান দেখলে মাঝে মাঝে মনে হয়ে এদের ধরে ধরে কোরিয়ায় এক্সপোর্ট করে দেই । সবচেয়ে সাম্প্রতিক যে ঘটনাটি ঘটল তাদের বিখ্যাত কমেন্ট-লাইক ভোট চেয়ে সেটা হচ্ছে হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুর পর । উনার কবর নিয়ে যখন টানাহেঁচড়া চলছে তখন এক পেজের এডমিন পোষ্ট দিয়ে বসল “ যারা যারা হুমায়ুন আহমেদের কবর নূহাস পল্লীতে চান তারা লাইক দেন আর যারা বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চান তারা কমেন্ট করুন...!!!” তাদের ভাব দেখলে মনে হয় পুরো দেশ ওরা লীজ নিয়ে নিছে, লাইক দিলে ওরা একটা ব্যবস্থা নিবে আর কমেন্ট দিলে অন্য ব্যবস্থা । ওদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আমার ব্যাপক কৌতূহল, এই চিড়িয়াদের জীবন চক্রে লাইক ও কমেন্টের প্রভাব কিরকম পড়তে পারে সেটা নিয়ে গবেষণা করেছেন মহাঞ্জানী ‘ফয় সালস্তয়’। তাঁর গবেষণার ভিত্তিতে ওদের জীবন চক্রের একটা রূপ রেখা দাড় করানো হলও, এবং প্রত্যেক ধাপে ওদের স্ট্যাটাস কি হতে পারে তার একটা কল্পরুপ তুলে ধরা হলো-
জন্মের সাথে সাথে স্ট্যাটাস –
এরা জন্মগ্রহণের সাথে সাথে স্ট্যাটাস দিবে- “ আমাকে আপনার কি মনে হয়, ছেলে না মেয়ে? মেয়ে হলে লাইক দিন আর ছেলে হলে কমেন্ট করুণ”। এর প্রতিক্রিয়ায় আত্মীয়স্বজনের মাঝে কেউ কেউ লাইক দিয়ে আবার কেউ কেউ কমেন্ট দিয়ে ওদের জেন্ডার নির্ধারণ করেন । তবে ত্যাঁদড় টাইপের কেউ কেউ লাইকের সংখ্যার চেয়ে কমেন্ট কম হয়ে গেলে একাই কয়েকটা কমেন্ট করে দুইটার ব্যবধান শূন্য বানিয়ে দেয় । যার ফল সরূপ বেশিরভাগ পেইজ এদমিনেরদের স্বভাব হয়ে যায় কমন জেন্ডারদের মতো ।
স্কুলে যাওয়ার আগে স্ট্যাটাস-
স্কুলে ভর্তি করার আগের ওরা স্ট্যাটাস দেয়- “আমাকে কি গার্লস স্কুলে দেওয়া হবে, না কম্বাইন্ড স্কুলে দেওয়া হবে? গার্লস স্কুলে হলে লাইক দিন আর কম্বাইন্ড স্কুলে হলে কমেন্ট করুণ”। এবারও যদি কেউ দয়াপরবশ হয়ে দুইটার সমন্বয় ঘটিয়ে ফেলে তখন দেখা যায় সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে তাদের মাদ্রাসায় দিয়ে দেওয়া হয় । যে কারণে জোকসের পেজে প্রায়ই বয়ানের স্রোত দেখা যায় ।
ক্লাসে ঢোকার সময়-
দেরী করে স্কুলে গিয়ে গিয়ে দেখলও স্যার ক্লাসে এসে গেছেন তখন তাদের স্ট্যাটাস হবে – “স্যার আমি কি ক্লাসে ঢোকতে পারি? রাজি থাকলে লাইক দিন আর রাজি না থাকলে কমেন্ট করুণ”। এই কারণে এদের প্রায়ই বারান্দায় কান ধরে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়, তাই এদের বেশীরভাগ স্ট্যাটাসের জন্মস্থান হয় স্কুলের বারান্দা না হয় বাথরুম।
প্রেম নিবেদনে স্ট্যাটাস-
“আমি তোমাকে ভালোবাসি, রাজি থাকলে লাইক দাও আর রাজি না থাকলে কমেন্ট কর”। এসব ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায় চরম বিরক্ত প্রেমিকা পাদুকা খুলে ওদের ওয়ালে(কপাল) চিকা মেরে দেয় ।
বিয়ে করতে চেয়ে বাবা-মার ওয়ালে-
বাবা-মা আমার বিয়ে করার খায়েশ হইসে, আমি বিয়ে করতে চাই । রাজি থাকলে লাইক দিন আর রাজি না থাকলে কমেন্ট করুণ”। কুলাঙ্গার ছেলেকে কড়া ভাষায় তিরস্কার মিশ্রিত কমেন্ট করে তাঁরা বুঝিয়ে দেন বিয়ে তো ছাড়, এরকম ভাদাইম্মাগিরি করতে থাকলে ঘর থেকেই রিমুভ+ব্লক করতে দেওয়া হতে পারে ।
বিয়ে করার পর বাসরঘরে বউকে উদ্দেশ্য করে-
অনেক কষ্ট করে কাঠখড় পোড়িয়ে বিয়ে করার পর বাসরঘরে বউকে উদ্দেশ্য করে ওদের স্ট্যাটাস-“আমি কি তোমাকে ছোয়ে দেখতে পারি? রাজি থাকলে লাইক দাও আর রাজি না থাকলে কমেন্ট কর”। লাজুক বউ লাইক বাটন তো আর খুঁজে পায় না আবার কমেন্টও করলে ব্যাপারটা নেতিবাচক হয়ে যায় তাই আবালদের বাসরটাও নির্বাসিত থেকে যায় ।
বাচ্চাকাচ্চা হওয়ার পর বউকে উদ্দেশ্য করে-
বাচ্চাকাচ্চা হওয়ার পর বউকে উদ্দেশ্য করে স্ট্যাটাস- “ও বউ পুলা কার মতো হইসে? আমার মতো মনে হইলে লাইক দাও আর তোমার মতো মনে হইলে কমেন্ট কর”। অতি উচ্ছ্বাসে বউয়ে মুখ ফসকে বের হয়ে যায় তোমার বন্ধু সুলেমানের মতো!!!
বৃদ্ধ বয়েসে ছেলেপুলেদের উদ্দেশ্যে-
শেষ বয়েসে ছেলেপুলেদের উদ্দেশ্য করে ভালোবাসা পরীক্ষা করতে স্ট্যাটাস-“বাবারা আমার তো দিন প্রায় শেষ, তোমরা কি আমাকে আরও কয়েক বছর দেখতে চাও? দেখতে চাইলে লাইক দাও আর না চাইলে কমেন্ট করো”। উদ্বিগ্ন ছেলেমেয়েরা কমেন্ট করার মানে ভুলে গিয়ে সমস্বরে বলে উঠে ‘না না বাবা তোমাকে আমরা এতো তাড়াতাড়ি ডিএক্টিভেট হতে দিব না’ । কিন্তু বেকুব পেইজ এডমিন এটাকে ভোট হিসেবে অর্থাৎ রাজি না থাকার ইংগিত মনে করে হৃদযন্ত্রের রিংপিস্টনে গোলযোগ বাধিয়ে ফেলে অধিক শোকে পটল তুলে ফেলে ।
মারা যাওয়ার পর ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে-
মারা যাওয়ার পর ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে তাদের স্ট্যাটাস হবে “হে ঈশ্বর আমি কি স্বর্গে যাব না নরকে যাব? স্বর্গে হলে লাইক দিন আর নরকে হলে কমেন্ট করুণ”। এই পর্যায়ে ঈশ্বর পর্যন্ত বিরক্তির চরম সীমায় পৌঁছে যান, যার ফল স্বরূপ তাদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে স্বর্গ-নরকের মাঝামাঝি অর্থাৎ ভূত বানিয়ে আবার পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন । এই অতৃপ্ত প্রেতাত্মারাই আমাদের দেশের ইন্টারনেট স্পীড বাড়তে দেয় না! যতই সার্ভিস প্রোভাইডাররা হেনতেন মেগাবাইট পার সেকেন্ড বলে ফাল পাড়ুক না কেন আরও একটি গবেষণায় দেখা গেছে এই ভুতরা ইন্টারনেট স্পীডের ৯০% ইউজ করে ভূতবুক চালায় আর ভূতুড়ে বিল দিতে হয় আমাদের।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


