স্বপ্ন শহরের রাজপুত্র শামসুর রাহমান
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
দিনটা হরতালের। তাতে কী, ফুল-পাখি-গাছপালা-প্রজাপতি সকলেই তো দিব্যি নিজ নিজ কাজ করে যাচ্ছে, তাদের তো কোনো হরতাল নেই; তাহলে আমার থাকবে কেন? প্রতিদিনকার মতো আজও আমার কাছে ভোরবেলাটা মিষ্টি, দুপুরটা উত্তপ্ত রোদের মধ্যেও কমলা রঙের আর বিকালটা অবশ্য সবুজ লালের মিলিত বর্ণের।
এর মধ্য থেকেই যেন একটি মুহূর্তকে বেছে নিয়ে শহরের নির্জন বা হৈ-হল্লা মুখর গলি দিয়ে রিক্সার টুংটাং বেল শুনতে শুনতে যাত্রী হয়ে কোথাও যাচ্ছি। এমন সময় চোখে পড়লো : রাস্তার পাশে একটা গাছ মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো কিন্তু গাছটার মাথার ডালপালা অনেকখানি কেটে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কী কারণে কাটা হলো, এটা একটু মন দিয়ে তাকালেই টের পাওয়া যায়। কারণটা হলো : ওই গাছটা বেড়ে ওঠায় একটা পণ্যের বিজ্ঞাপন তার মুখ দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছিলো।
কিন্তু গাছতো প্রতিবাদহীন; গাছ যেন যীশুখ্রিস্ট বা মহাত্মা গান্ধির মতো নীরবে মানুষের সমস্ত পাপের শাস্তি একাই হজম করে কর্পোরেট পৃথিবীর মানুষদের মুক্ত করতে চাইছে। গাছের এ কর্তন আমি বা আমরা কি মেনে নিতে পারি?
আমরা তো স্বপ্ন দেখি সুন্দর একটা শহরের, যেখানে গাছ থাকছে তার নিজস্ব অধিকার নিয়ে। কেমন সে শহর, তা নিয়ে ভাবতে গেলেই মনে পড়ে যায় শামসুর রাহমানেরই কবিতার কয়েক লাইন-
হেঁটে যেতে যেতে
বিজ্ঞাপন এবং সাইনবোর্ডগুলো মুছে ফেলে
সেখানে আমার প্রিয় কবিতাবলীর
উজ্জ্বল লাইন বসালাম;
প্রতিটি পথের মোড়ে পিকাসো মাতিস আর ক্যান্ডিনিস্কি দিলাম ঝুলিয়ে।
[ হরতাল ]
২.
শামসুর রাহমান একসময় লিখেছিলেন ‘যদি বেঁচে যাই একদিন আরো/লিখবো’। তিনি সত্যি সত্যি লিখে গেছেন সারা জীবন। কবে প্রথম তার নাম শুনেছিলাম এটা ঠিক মনে করতে পারি না। তবে এইটুকুন বলতে পারি তার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল একটি ছোটকাগজকে উপলক্ষ্য করেই।
পলাশ দত্ত, আমি ও সাইফুল শামীম একটি ছোটকাগজ সম্পাদনা করতাম। নাম প্রাণ-স্রোত। এর দ্বিতীয় সংখ্যায়ই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আবুল হাসানকে নিয়ে একটি সংখ্যা করার। তখন আবুল হাসানের কবিতা সমগ্র ঘাটতে গিয়ে আমাদের চোখে পড়ে, ওই বইয়ের শুরুতেই শামসুর রাহমানের দু’পৃষ্ঠার একটি ভূমিকা। পলাশ আর আমি সিদ্ধান্ত নেই শামসুর রাহমানের আবুল হাসান বিষয়ে সাক্ষাৎকার নেওয়ার। পরে ১৯৯৮ সালের কোনো একদিন আমরা সদ্য কৈশোর পেরুনো দুই তরুণ হাজির হই প্রথমবারের মতো শামসুর রাহমানের শ্যামলির বাসভবনে। সেই যে প্রথম যাওয়া, এরপর বহুবার গিয়েছি তার বাসায়।
মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রথম দিকে তিনি আমাকে আপনি আপনি বলে সম্বধন করতেন। তার এই অতি বিনয়ী আচরন, আমার জন্য খুবই অস্বস্তিকর ছিল। আমি একদিন যখন বললাম ‘রাহমান ভাই, আমাকে তুমি করে বইলেন।’ এরপর মুচকি এক হাসি দিয়ে তিনি আমাকে তুমি করে বলতে শুরু করেন।
শামসুর রাহমানের সাথে একটা বিষয়ে আমার মিল আছে, তা হচ্ছে আমাদের উভয়েরই জন্মদিন ২৩ অক্টোবর। আমার জন্মেরও ৪৮ বছর আগে ১৯২৯ সালে তিনি এ পৃথিবীতে এসেছেন। রাহমান ভাইয়ের জীবদ্দশায় দেখতাম তার জন্মদিনটা বেশ ঘটা করেই বিভিন্ন দৈনিকের সাময়িকীগুলো পালন করতো। ওই বছরগুলিতে আমি আমার জন্মদিনটা কাটাতাম বেশিরভাগ সময় শহরের রাস্তায় কিংবা চিড়িয়াখানায় একা একা ঘুড়ে। আমার কেন যেন তখন রাহমান ভাইয়ের কথাই মনে পড়তো।
মনে পড়ে একদিন সকাল সাড়ে দশটা কি এগারোটায় তার বাসায় বসে আছি, তিনি হঠাৎ জানতে চাইলেন নতুন কোনো কবিতা আছে কিনা। আমি পকেট থেকে কয়েকটি কবিতা বের করে তাকে শোনাচ্ছিলাম, পরে তিনি আমার হাত থেকে কবিতাগুলি নিয়ে দেখছিলেন। কবিতায় আমার কয়েকটি বানান ভুল ছিল, তিনি তা ঠিক করে দিচ্ছিলেন। এমন সময় তার এক ভক্ত তরুনী এসে হাজির। তরুণীটি সম্ভবত রাজশাহীতে বাস করতেন। তার ইচ্ছা ছিল রাহমান ভাইকে কবিতা দেখানোর। তরুনীটি যেই কবিতা বের করলেন, রাহমান ভাই সাথে সাথে বললেন, ওকে দেখাও। ও ভালো কবিতা লেখে, আমার চেয়েও ভালো কবিতা বোঝে...।’ আমি সেদিন খুব বিস্মিত হয়েছিলাম, আচমকা তার এই মন্তব্য শুনে।
[কালের খেয়া, ২২ অক্টোবর ২০১০]
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে
তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না
সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন
লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা
ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।
মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না
নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন