ব্রিটিশ সাংবাদিক গাফ্ফার চৌধুরীর !
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
গাফ্ফার চৌধুরী
আওয়ামী পন্থি লেখক গাফফার চৈাধুরী আলোচিত-সমালোচিত লেখক। তার লেখা দেখলেই পড়ার চেষ্টা করি। তবে তার লেখায় কখনো দেশের মানুষের পক্ষে মনে হয়নি। তিনি সব সময়ে ব্যক্তিগত আক্রোমনে ব্যাস্ত ছিলেন বলে আমার মনে হয়েছে। কয়েক দিন আগে ইত্তেফাক পত্রিকায় বদরুদ্দীন উমরকে বাজে মন্তব্য করেছেন। এরপরও এতোদিন তার বিরুদ্ধে কোন লেখককে দাড়াতে দেখিনি। গত ৬ আগস্ট আমার দেশ পত্রিকায় সঞ্জীব চৈাধুরী তার কথা কিছু জবাব দিচ্ছেন। লেখাটি আমার ভালোই লেগেছে। তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
১
বাংলাভাষী ব্রিটিশ সাংবাদিকের ধৃষ্টতা
বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ধৃষ্টতা ইদানীং মাত্রাছাড়া রূপ নেয়ায় কেউ কেউ হয়তো ভাবতে পারেন তিনি উন্মাদ হয়ে গেছেন। এ ধরনের ভাবনা তাদের, যারা তাকে ভালোমত চেনেন না। যারা গাফ্ফার চৌধুরীকে দীর্ঘদিন ধরে জানেন এবং তার লেখার সঙ্গে পরিচিত, তারা বুঝতে পারেন যে খিস্তিখেউড় করাই হচ্ছে তার লেখার মূল উদ্দেশ্য। এতে লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে খুব বেশি চিন্তা-ভাবনা করতে হয় না। তদুপরি রগরগে রচনার একশ্রেণীর পাঠক আছে। তাই কলামিস্ট গাফ্ফার চৌধুরীর কদরও আছে। এর জোরে তিনি গোটাপাঁচেক পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখছেন এবং তার বিনিময়ে বছরে হাজার হাজার পাউন্ড স্টার্লিং বাংলাদেশ থেকে রেমিট্যান্স আকারে লন্ডনে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে। এটা একটা সাফল্য। লন্ডনে তেলে-ঝোলে খেয়ে তিনি ভালোই আছেন।
সম্প্রতি তিনি একাধিক পত্রিকায় অত্যন্ত অশালীন ভাষায় প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবী ও রাজনীতিবিদ বদরুদ্দীন উমর, বিশিষ্ট কবি ও লেখক ফরহাদ মাজহার, জনপ্রিয় সম্পাদক ও কলামিস্ট শফিক রেহমান এবং আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের চরিত্র হনন করে একের পর এক কলাম লিখে চলেছেন। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন যে, এদের কেউ তার এসব কুিসত লেখার জবাব দেবেন এবং সেই জবাবের পিণ্ডি চটকে তিনি মাসতিনেক গড়গড়িয়ে চালিয়ে যাবেন তার কলম-বাণিজ্য। তেমনটি না ঘটায় তিনি যে হতাশ হয়েছেন তা প্রকাশও করেছেন সাম্প্রতিক এক লেখায়। আসলে গাফ্ফারীয় ভঙ্গিতে লেখাগুলোর জবাব দিতে গেলে যে কোনো ভদ্র মানুষের রুচি ও দীর্ঘদিনের লালিত মূল্যবোধ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তারপরও আমি নিরুপায়। কারণ লেজ ধরে মোচড় দেয়া ছাড়া অন্য কোনো ভাষা বলদ বোঝে না।
সরকার গত ১ জুন আমার দেশ-এর প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়। ওইদিন প্রায় মাঝরাতে পুলিশ গিয়ে আমার দেশ-এর প্রেস সিলগালা করে দেয় এবং মাঝরাতের পর ঝাঁকে ঝাঁকে পুলিশ রীতিমতো অভিযান চালিয়ে আমার দেশ অফিস লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে অফিসে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করে। ব্রিটিশ আমলে, পাকিস্তান আমলে এবং বাংলাদেশ আমলে এমন ঘটনা এই ভূখণ্ডে এর আগে কখনও ঘটেনি। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিক এক যুক্ত বিবৃতিতে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। বিষয়টি নিয়ে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর একটা লেখা ৪ জুন দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত হয়েছিল। সে লেখায় তিনি “কিন্তু ‘আমার দেশ’ পত্রিকাটি ডিক্লারেশন সংক্রান্ত কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া ঠিক হয়েছে বলে আমার মনে হয় না”—জাতীয় মন্তব্য করলেও মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করায় এবং পত্রিকাটি সরকার বন্ধ করে দেয়ায় তার উল্লাস গোপন থাকেনি।
গাফ্ফার চৌধুরী ওই লেখায় ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন শেখ মুজিব সরকার রাষ্ট্রীয় মালিকানায় যে ৪টি দৈনিক পত্রিকা রেখে আর সব সংবাদপত্র বাতিল করে দিয়েছিল সে প্রসঙ্গ টেনে উল্লেখ করেছেন, “বাকশাল শাসন ব্যবস্থায় যখন দেশে সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণের এ ব্যবস্থাটি নেয়া হয়, তখন আমি বাংলাদেশ সংবাদপত্র-সম্পাদক পরিষদের সভাপতি। বঙ্গবন্ধুর কাছে ছুটে গিয়ে বলেছিলাম, ১৯৬৬ সালের ১৬ জুন আইয়ুব-মোনায়েম সরকার দৈনিক ইত্তেফাক বন্ধ করেছিল। বর্তমান বাংলাদেশ সরকার কেন সেই তারিখটিই সংবাদপত্র বন্ধ করার জন্য বেছে নিল? বঙ্গবন্ধু হতচকিত হয়ে বলেছিলেন—তাই নাকি?... যা হোক, আদেশ তখন জারি এবং কার্যকর হয়ে গেছে। আমাদের আর কিছুই করার ছিল না।” লক্ষণীয়, বঙ্গবন্ধুর কাছে যখন ছুটে গেলেন তখন তিনি ‘আমি’—অর্থাত্ একবচন; আর ‘করার যখন কিছুই ছিল না’ তখন তিনি ‘আমাদের’ অর্থাত্ বহুবচন। এটা কি সম্মানার্থে বহুবচন হিসেবে আমরা ধরে নেব? আরও লক্ষণীয় : সংবাদপত্র বন্ধ করার ব্যাপারে গাফ্ফার চৌধুরীর কোনো আপত্তি ছিল না। তার আপত্তি ছিল শুধু ১৬ জুন তারিখটির ব্যাপারে। বঙ্গবন্ধুকে যারা চিনতেন তারা এক বাক্যে স্বীকার করবেন যে সহজে ‘হতচকিত’ হওয়ার বান্দা তিনি ছিলেন না। অবশ্য গাফ্ফার চৌধুরী আসলেই সেদিন বঙ্গবন্ধুর কাছে ‘ছুটে’ গিয়েছিলেন কিনা, গেলেও বঙ্গবন্ধু তার কথা শুনে ‘হতচকিত’ হয়েছিলেন নাকি তাকে ধমক দিয়ে বের করে দিয়েছিলেন—তা যাচাই করার কোনো সুযোগ এখন আর অবশিষ্ট নেই।
এ প্রসঙ্গ টেনে গাফ্ফার চৌধুরী লিখেছেন, “অবশ্য ১৯৬৬ সালে ইত্তেফাক এবং ১৯৭৫ সালে ঢাকার অধিকাংশ দৈনিক বন্ধ করা হয়েছিল রাজনৈতিক কারণে। বর্তমানে আমার দেশ দৈনিকটি বন্ধ করা হয়েছে এবং ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে গ্রেফতার করা হয়েছে অন্য কারণে। বলা হয়েছে, প্রতারণা ও অন্যান্য অভিযোগে মামলা-মোকদ্দমার কারণে এই গ্রেফতার।... যতদূর জানি, মাহমুদুর রহমান খুব সুশীল চরিত্রের লোক নন। তাকে উত্তরা ষড়যন্ত্রের নায়কও বলা হয়। সম্প্রতি রাজনীতি ও সাংবাদিকতার নামে তিনি যা শুরু করেছিলেন, তাকে এক কথায় অনেকে ‘দুর্বৃত্তপনা’ আখ্যা দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা বা অন্য কোনো গুরুতর অভিযোগ থাকলে এবং মামলা-মোকদ্দমা হয়ে থাকলে অবশ্যই তিনি গ্রেফতার হতে পারেন।”
দেখা যাচ্ছে, আমার দেশ যে রাজনৈতিক কারণে বন্ধ করা হয়েছে তা গাফ্ফার চৌধুরী মানতে রাজি নন। মাহমুদুর রহমানকে যে রাজনৈতিক কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে তা মানতেও তার আপত্তি আছে। মামলা-মোকদ্দমার কারণে পত্রিকা বন্ধ ও সম্পাদক গ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে—এই গাফ্ফারীয় তত্ত্ব যদি আমরা মেনে নিই, তবে একই তারিখে রাতে মামলা হলো, গভীর রাতে জেলা প্রশাসন আদেশনামায় সই করলেন, প্রায় মাঝরাতে পুলিশ ছুটল প্রেস বন্ধ করতে, মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করতে—এমন তত্পরতা সরকারি দফতরগুলোতে রাজনৈতিক কারণ ছাড়া সম্ভব, একথা ছাগলেও বিশ্বাস করবে না। এছাড়া এক নিঃশ্বাসে তিনি যেভাবে কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়া মাহমুদুর রহমানকে দুর্বৃত্ত আখ্যা দিয়ে সুশীল চরিত্রের লোক নন বলে মন্তব্য করেছেন, তাতে আসলে গাফ্ফার চৌধুরীর নিজের চরিত্রই ফুটে উঠেছে। অবশ্য তিনি কৌশলে এটাকে ‘অনেকের’ মন্তব্য বলে চালিয়ে দিয়েছেন। আমরা জানি, গাফ্ফার চৌধুরী খালি গলায় গান করেন না। তার সঙ্গে তবলা, হারমোনিয়াম আর ডুগডুগি বাজানোর কিছু লোক আছে। তিনি যে অনেকের কথা বলেছেন তারা সম্ভবত এরাই। দেশে এখন সুশীলদের ঘোর দুর্দিন! গত কয়েক বছরে সুশীল বলে কথিত লোকজন নিজেদের এমনভাবে উন্মোচিত করে ফেলেছেন যে, মাঝেমধ্যে হাসি-তামাশার পাত্র হওয়া ছাড়া তারা এখন প্রায় অস্তিত্বহীন। মাহমুদুর রহমান এই সুশীল গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত নন এটা তার জন্য অসম্মানের নয়। কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বৃত্তপনাই যার জীবিকা, তেমন কেউ যখন মাহমুদুর রহমানকে দুর্বৃত্ত আখ্যা দেয় তখন ‘ভূতের মুখে রামনাম’ আপ্তবাক্যটি মনে পড়ে যায়। রাজনীতি ও সাংবাদিকতার নামে মাহমুদুর রহমান যা শুরু করেছেন তাতে গাফ্ফার চৌধুরী সন্তুষ্ট নন। কিন্তু কী শুরু করেছেন তা তিনি বলছেন না। তাহলে কি আমরা ধরে নেব যে, এ ব্যাপারে আসলে তার বলার কিছু নেই? মাহমুদুর রহমান গত দু’বছরের বেশি সময় ধরে দৈনিক পত্রিকায় স্বনামে লিখে চলেছেন। এসব ‘আপত্তিকর’ একটি লেখারও জবাব গাফ্ফার চৌধুরী বা তার কোনো সাঙ্গাতকে দিতে দেখা যায়নি। এ অপারগতাই কি তার গোস্বার কারণ?http://amardeshonline.com/pages/details/2010/08/06/37584
বাংলাভাষী ব্রিটিশ সাংবাদিকের ধৃষ্টতা
(গতকালের পর)
দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অভিবাসী বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর স্থূল অভব্যতার দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে গিয়ে আমি গতকাল দৈনিক ইত্তেফাকে ৪ জুন প্রকাশিত তার একটি লেখার ওপর কিঞ্চিত্ আলোকপাত করেছিলাম। ওই লেখায় তিনি সম্ভবত নিজের ‘বঙ্গবন্ধুর সাহসী সৈনিক’ পরিচিতিটা ঝালাই করে নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশস্তি কীর্তন করেছেন। তিনি একজন ভালো মা এবং সমালোচনা সহ্য করার রেকর্ড তার ইন্দিরা গান্ধীর চেয়েও ভালো, এসব কথা লিখে গাফ্ফার চৌধুরী কী বোঝাতে চেয়েছেন জানি না। তবে শেখ হাসিনা যে দুই সন্তানের জননী এবং তারও যে একটা মাতৃহৃদয় আছে এটা গোটা জাতি জানে। শেখ হাসিনা ভারত থেকে দেশে ফিরে একেবারে ভগ্নদশায় আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন। সেখান থেকে যেভাবে তিনি দলটিকে সংগঠিত করেন এবং দু’বার ক্ষমতাসীন করেন তার কৃতিত্ব তাকে দিতেই হবে অকুণ্ঠচিত্তে। ইন্দিরা গান্ধী এবং শেখ হাসিনার মধ্যে কে ‘বেশি ভালো’ তা নিয়ে তর্কে যাওয়ার আমাদের দরকার নেই। বহুমুখী মানবীয় সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা একজন সফল রাজনীতিবিদ এবং তার এমন ঘোর দুর্দিন পড়েনি যে গাফ্ফার চৌধুরীর মতো একজন বিতর্কিত বিদূষকের সার্টিফিকেট তার জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তাই মাহমুদুর রহমানের চৌদ্দপুরুষ উদ্ধার করতে গিয়ে হাসিনা বন্দনা কেন— এর সম্ভাব্য উত্তর এই হতে পারে যে, এটা বঙ্গবন্ধুর নামে ফিল্ম বানানোর জন্য তহবিল সংগ্রহের কৌশল।
হাসিনা বন্দনা শেষে গাফ্ফার চৌধুরী আবার আমার দেশ-এর বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে গিয়ে পত্রিকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালু এবং হাসমত আলী হাসুর কিছুটা প্রশংসা করেছেন। লিখেছেন, ‘মোসাদ্দেক আলী ফালু যত বিতর্কিত চরিত্রের লোকই হোন, তার পরিচালনায় এবং আতাউস সামাদের সম্পাদনায় পত্রিকাটি অনেকটা নিরপেক্ষ চরিত্র অর্জন করেছিল একথা আমি অন্তত স্বীকার করব।’ এ কথা এখন তিনি স্বীকার করেছেন; কিন্তু আমার দেশকে ‘ফালুর কাগজ’ আখ্যা দিয়ে তার সে সময়কার কুিসত লেখাগুলো ভিন্ন সাক্ষ্য দেয়। এরপর তিনি লিখেছেন, “গোল শুরু হয় মাহমুদুর রহমান নামক ব্যক্তিটির পত্রিকার মালিকানা ও সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণের পর। দলীয় পত্রিকারও সাংবাদিকতার একটা নীতিমালা মেনে চলতে হয়। কিন্তু মাহমুদুর রহমানের সম্পাদনায় আমার দেশ-এ যা শুরু হয় তা দলীয় সাংবাদিকতাও নয়। তা ছিল নির্লজ্জ অসত্যের বেসাতি এবং পত্রিকাটি হয়ে দাঁড়ায় মিথ্যাচারের রাজনীতির মুখপত্র। আতাউস সামাদ ও তার পরবর্তী সম্পাদককে ছলেবলে সরিয়ে মাহমুদুর রহমান নিজেই পত্রিকাটির সম্পাদক হয়ে বসেন।’
নির্লজ্জ মিথ্যাচার যার পেশা তার কলম থেকে এ ধরনের লেখা বেরিয়ে আসা স্বাভাবিক। আতাউস সামাদের ‘পরবর্তী সম্পাদক’-এর নামটা গাফ্ফার চৌধুরী জানাবেন কি, যাকে মাহমুদুর রহমান ছলেবলে সরিয়ে দিয়েছিলেন? সত্য হচ্ছে, আতাউস সামাদ শুরু থেকে আমার দেশ-এর উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন; সম্পাদক ছিলেন আমানুল্লাহ কবীর। জরুরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পত্রিকার চেয়ারম্যান ও একজন পরিচালক গ্রেফতার হন। এর মধ্যে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পত্রিকার অফিস দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় পত্রিকা চালানো এবং সাংবাদিক-কর্মচারীদের বেতন দেয়া দুরূহ হয়ে ওঠে। এসব নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার একপর্যায়ে আমানুল্লাহ কবীর সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি নেন। তখন সাংবাদিক-কর্মচারীদের একান্ত অনুরোধে এবং মালিকপক্ষের সম্মতিতে আতাউস সামাদ উপদেষ্টা সম্পাদকের পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নিতান্ত স্বাস্থ্যগত কারণে উভয় পদ থেকে অব্যাহতি নেয়ার আগে পর্যন্ত আতাউস সামাদ অত্যন্ত সততা, দক্ষতা ও যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখনও তিনি আমার দেশ পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখছেন। মাঝখানে ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত হয়ে একেবারে কাহিল হয়ে পড়া সত্ত্বেও এই ঘোর দুর্দিনে তিনি আমার দেশকে অনানুষ্ঠানিকভাবে নিয়মিত দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। আমার দেশ প্রায় অচল হয়ে পড়ায় তত্কালীন মালিকপক্ষ পত্রিকাটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। তখন সাংবাদিক-কর্মচারীদের একান্ত চেষ্টায় মাহমুদুর রহমানকে আমার দেশ-এর স্বত্ব কিনে নিতে রাজি করানো হয়। মাহমুদুর রহমান এবং তার বন্ধুরা পত্রিকার দায়িত্ব নেয়ার পরও অবসর নেয়ার আগে পর্যন্ত আতাউস সামাদ স্বপদে বহাল ছিলেন। এক্ষেত্রে ছল-বল-কৌশলের কোনো ভূমিকা ছিল না। তাই আমার দেশ নিয়ে গাফ্ফারীয় আষাঢ়ে গল্প একেবারেই ভিত্তিহীন। আর ‘নির্লজ্জ অসত্যের বেসাতি’, ‘মিথ্যাচারের রাজনীতির মুখপত্র’ ইত্যাদি অভিযোগ করলে প্রমাণ দিতে হয়। গাফ্ফার চৌধুরী সে দায় পুরোপুরি এড়িয়ে গেছেন।
অবশ্য লেখার পরবর্তী অংশে গাফ্ফার চৌধুরীর মর্মযাতনার কারণ জানা গেছে। তিনি আমার দেশ পত্রিকায় ‘হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ মনগড়া, অত্যন্ত মানহানিকর এবং একটি উদ্দশ্যমূলক খবর’ প্রকাশিত হওয়ায় রাগ করেছেন। কিন্তু খবরটি কী ছিল তা প্রকাশ করেননি। কারণ, তাতে থলের বিড়াল বেরিয়ে যাওয়ার যে আশঙ্কা রয়েছে তা তিনিও বিলক্ষণ জানেন। খবরটি মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরনকে বিনা টেন্ডারে বিরাট অংকের একটি কাজ প্রদান করা সংক্রান্ত। এ কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য মোটা অংকের অর্থ লেনদেন হয়েছিল এবং এ অর্থের একাংশ প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা ওয়াশিংটন গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের কাছে হস্তান্তর করেছিলেন মর্মে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার মধ্যে চিঠি চালাচালি হয়েছিল। এ চিঠি চালাচালির সূত্র ধরে আমার দেশ বিনা মন্তব্যে খবরটি ছাপায়। এতে গাফ্ফার চৌধুরীর গায়ে যে ফোসকা পড়েছিল তার তড়পানি দেখেই তা বোঝা যায়। গাফ্ফার চৌধুরী এব্যাপারে মামলা করার জোরালো সুপারিশ করেছেন। তাকে চিন্তা করতে হবে না। তার পরামর্শের আগেই ‘আওয়ামী পরিবার’-এর পক্ষ থেকে কয়েক ডজন মামলা দায়ের করা হয়ে গেছে। বিষয়টি এখন বিচারাধীন। দেখা যাক শেষ হাসি কে হাসে।
গাফ্ফার চৌধুরী অভিযোগ করেছেন, ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তিনি (মাহমুদুর রহমান) আমার দেশ-এর মালিকানা গ্রহণ করেছেন। তিনি মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে যথেচ্ছাচার ও দুর্বৃত্তপনার অভিযোগ এনেছেন। কিন্তু জেলে যাওয়া ছাড়া মাহমুদুর রহমান আমার দেশ দিয়ে কী ‘ব্যক্তিগত স্বার্থ’ উদ্ধার করেছেন তা তিনি বলতে পারেননি। বাংলাদেশের স্বার্থে কলম ধরলে তা যদি ব্যক্তিগত স্বার্থ হয় তবে সেটা ভিন্ন কথা। যথেচ্ছাচারের বেলায়ও তিনি আসল বিষয় এড়িয়ে কয়েকটি বিশেষণ দিয়ে দায় সেরেছেন। এভাবে সত্ সাংবাদিকতা দূরে থাকুক অসত্ সাংবাদিকতাও চলে না। তিনি মাহমুদুর রহমানকে দুর্বৃত্ত বলে গালি দিয়েছেন। নিজে দুর্বৃত্ত বলেই তার পক্ষে এ ধরনের ধৃষ্টতা দেখানো সম্ভব হয়েছে। গাফ্ফার চৌধুরী রেমিটেন্সের মাধ্যমে আসা পাউন্ড স্টার্লিংয়ের বদৌলতে একজন সচ্ছল ব্যক্তি। তারপরও তিনি যুক্তরাজ্য সরকারের লিল্লাহ ভিখারী বলে একজন পাঠক আমাকে টেলিফোনে জানিয়েছেন। না, এটা কোনো গাফ্ফারীয় ভৌতিক টেলিফোন নয়। টেলিফোনকারী আমাকে প্রয়োজনে তার নাম প্রকাশের অনুমতি দিয়েছেন। এভাবে গাছেরটা খেয়ে তলারটাও কুড়ানো হচ্ছে একেবারে সাচ্চা দুর্বৃত্তপনা। খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, গাফ্ফার চৌধুরী ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দিনের সেনা সমর্থিত সরকারকে মুক্তকচ্ছ সমর্থন দিয়েছিলেন। নিজের লেখাকে জম্পেশ করার জন্য তিনি তখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে পর্যন্ত টেনে এনে লিখেছিলেন, ‘এই প্রথম বাংলাদেশের একজন সরকারপ্রধান জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে কবিগুরুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন আবার পাশ উল্টে যাওয়ার পর তিনি জরুরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ‘কঠোর সমালোচক’ বনে গেছেন।
এ প্রসঙ্গে ১৯৬১ সালের কথা মনে পড়ে যায়। সে বছর ছিল রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী। এ উপলক্ষে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানে বিপুল উত্সাহে নানান কর্মসূচি পালিত হওয়ার পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্কের ঝড় ওঠে। সেই মওকায় গাফ্ফার চৌধুরী একদিন দৈনিক ইত্তেফাকে রবীন্দ্রনাথের পক্ষে এবং পরদিন দৈনিক আজাদে রবীন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে কলাম লিখে দুর্বৃত্তপনার চ্যাম্পিয়ন হিসেবে অক্ষয় কীর্তি রেখে গেছেন। দিনের পর দিন করতে থাকা তার এ অপকর্ম নিয়ে এখনও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মহলে সরস আলোচনা হয়।
আলোচ্য লেখায় গাফ্ফার চৌধুরী সালমান রুশদির প্রসঙ্গ টেনে লিখেছেন, “সালমান রুশদির নখাগ্রের তুল্য ব্যক্তি মাহমুদুর রহমান নন। আসলেই সালমান রুশদির সঙ্গে মাহমুদুর রহমানের কোনো তুলনা চলে না। কারণ তিনি আর গাফ্ফার চৌধুরী একই প্রজাতির দুর্বৃত্ত লেখক। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে কুিসত ভাষায় গালাগাল করে বই লিখে তিনি এক সময় পাকিস্তানের প্রিয়পাত্র হয়েছিলেন। তাকে করাচিতে সংবর্ধনাও দেয়া হয়েছে। একের পর এক বিয়ে করা ও বউ ছাড়ায় ওস্তাদ এই বদমাশ স্যাটানিক ভার্সেস লিখে আসলে নিজের কুিসত চেহারাই প্রকাশ করে দিয়েছেন। এহেন সালমান রুশদির পুরুষাঙ্গের চারপাশে গজানো লোমের সমতুল্য ‘প্রতিভা’ গাফ্ফার চৌধুরীর আছে কিনা সেটা আমাদের জন্য কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। আমরা শুধু এতটুকু জেনেই সন্তুষ্ট যে, তারা দু’জন একই গোয়ালের গরু।
Click This Link
১৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?
যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!
যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন
আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র
একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।
কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।
ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।