আমার সারা জীবনের স্বপ্ন এই অসহ্য মধ্যবিত্ততা থেকে চিরতরে মুক্তি পাব, চলে যাব স্বপ্নের কোন এক রাজ্যে। যেখানে ঘটিবাটি মেজে, মানুষের বাড়ি ঝাড়ু দিয়ে, লনের ঘাস কেটে, টয়লেট পরিষ্কার করে হওয়া যায় এই দেশের হিসেবে কোটিপতি। সাদা চামড়া দেখলেই আমার মাথা আপনাআপনি শ্রদ্ধা এবং ভক্তিতে অবনত হয়ে আসে, মনে হয় তার পায়ের কাছে বসে থাকাটাই পরম এক সৌভাগ্য। আহা কি সৌভাগ্যবান তারা, কোন রঙ ফর্সাকারক ক্রিম না মেখেই তারা আমার চেয়ে সহস্র গুণ ফর্সা। মেধাতে আমার ধারে কাছে না হয়েও শুধু ঐ দেশে জন্ম হবার কারণে তারা কত আরামের জীবন যাপন করছে, আর আমি কুৎসিত শহরে ষাটোর্ধ বৃদ্ধকেও দেখি রিকশা চালাতে, জীবন তাকে এতটুকুও ছাড় দেয় নি বার্ধক্যের কারণে। ঐ স্বর্গের মত দেশে বরফ পড়ে, সাদা শ্বেত শুভ্র বরফ। ওরা সেই বরফ দিয়ে মূর্তি না ভাস্কর্য বানায়, ওদের দেবদূতের মত শিশুরা বরফ ছোড়াছুড়ি করে খেলে। আমি টিভিতে মুগ্ধ হয়ে এই দৃশ্য দেখি, আর জানালা দিয়ে তাকালে যখন কালো অপুষ্ট রুগ্ন একটি শিশুকে ভ্যান গাড়ি ঠেলতে দেখি তখন আমার নাক আপনা আপনি কুঁচকে আসে, আমাদের দেশের শিশুদের গায়ের রংটাও ওদের ধারে কাছে নয়। আমি বিরক্ত হই। আমি আবার ফিরে তাকাই টিভির দিকে, ওরা ক্রিসমাস ট্রি সাজায়, ওরা ক্রিসমাস কেক কাটে, ওরা নিউ ইয়ারস ইভে ফেটে পড়ে উন্মত্ত উল্লাসে। ওদের সী বিচ অনেক পরিচ্ছন্ন, সেখানে আশ্চর্য সুন্দরী তরুণী - না তরুণী না বলে অপ্সরীই বলা ভালো, বিকিনি নামক অদ্ভুত ছোট এক পোশাক পরে থাকে, তাতে শরীরের অধিকাংশ স্থান উন্মুক্ত থাকে, আমি বুভুক্ষুর মত সে দিকে চেয়ে থাকি। ঐ গোড়ালির বাঁকে কি যেন এক রহস্য লুকিয়ে আছে, ঐ হাটু জোড়া কেঁপে কেঁপে আমাকে যেন আহ্বান করে, ঐ উরু আর উরুসন্ধিতে বিশ্বের সমস্ত কাম একত্রিত হয়েছে। স্তনজোড়া প্লাস্টিক সার্জারী করা কিনা আমি নিশ্চিত হতে পারি না, আমার দেশের তরুণীদের বক্ষ এতটা সুডৌল নয়, নয় এতটা নিখুঁত। আমার মুগ্ধতার পালা যেন ফুরোতে চায় না। ওদের দেশে কখনো কারেন্ট যায় না, যদিও বা ভুলে একদিন চলে যায় ওমনি তা বিবিসি সিএনএনের নিউজের টপে স্থান পায়। আমি ১২ ঘণ্টা লোডশেডিং এ ডুবে থাকি, সর্বক্ষণ কারেন্ট থাকাতে কি বিপুল আনন্দ তা আমি কল্পনাও করতে পারি না। ওরা আমাদের মত ভাঙাচোরা গাড়িতে চড়ে না, ওরা চড়ে বিএমডাব্লিউ, পোরশে, লেক্সাস, ল্যাম্বোরগিনিতে। আমি ওসব গাড়ি টিভিতে দেখি, মুড়ির টিনে ঝুলে ঝুলে যাওয়ার সময়েও ঐ গাড়িগুলোতে চড়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকি। আমার বাসার লাইনে পানি থাকে না, আর ওরা দেখি হটটাবে নগ্ন শরীর ভিজিয়ে বসে থাকে। মাঝে মাঝে মৃদু চুমুক দেয় শ্যাম্পেনের গ্লাসে। আচ্ছা শ্যম্পেন খেতে কেমন? আমার খুব ইচ্ছে করে সারা মাসের বেতনটা এক নিমিষে উড়িয়ে দিয়ে আকণ্ঠ শ্যাম্পেনে ডুবে থাকতে। আমি মদ খেতে চাই। চাই বার্গার কিং , ম্যাকডোনাল্ডস এর বার্গার খেতে, কেএফসির চিকেন ঐ দেশের মধ্যবিত্তের নাগালের ভেতরে, আমাদের মত ঊচ্চবিত্তের খাবার নয়। আমি নাইকি, অ্যাডিডাসের স্নিকার পরে ভোরবেলা জগিং এ যেতে চাই, ৫২ ইঞ্চি পাজমা স্ক্রিনে টিভি দেখতে চাই, ভ্যাকেশনে ঘুরে আসতে চাই ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ।.....
আলোচিত ব্লগ
লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?
মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়
প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন
চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)
সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন
যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।
আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন
তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?
আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন