কিছুদিন আগে একটা প্রেজেন্টেশনে বাশ খাবার পর বুয়েটের একজন শিক্ষককে নিয়ে একটা কবিতা লিখে ফেসবুকে শেয়ার দিয়েছিলাম। কবিতাটা ছিল এইরকমঃ
শিক্ষাগুরু
শিক্ষক তুই বাবার সমান
সন্মান করেই বলি,
আমাদের শিখাস কায়দা নিয়ম
তোর ভেতর এত ফারাক কেমনে হলি?
তুই আমাদের জ্ঞান বিধাতা
তুই জাহাজের পাঞ্জেরী,
তুই যদি হোস কলুষিত
আমরা বইব কোন তরী?
তোর আলোকেই জগৎ দেখি
চোখের পর্দা খুলি,
তুই যদি আজ নির্দয় হোস
কেমনে সেটা ভুলি?
তোরেই অনুকরন করে
আমরা জীবন সাজাই
তোর চরিত্রে থাকলে কালীমা
আমরা কি করব ছাই?
তুই বললে আমরা সেটা
আইন বলেই মানি
ক্ষমতার অপব্যবহার করে
ধ্বংসিস না এ ধরনী।
তোর পায়ের ধূলা মোদের
আশীর্বাদ যেন বিধাতার
তুই যদি হোস মিথ্যাচারী
দুনিয়া হবে ছারখার।
কবিতাটি ফেসবুকে দেয়ায় আমার ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা অনেক শিক্ষকও তা দেখতে পান। পরদিন ডিপার্টমেন্টে গেলে আমি বুঝতে পারি যে ব্যাপারটা ইতোমধ্যে আলোচিত হয়েছে এবং সকল শিক্ষকের কানে চলে গেছে। আমি একটু ভয়ই পেয়েছিলাম যখন আমার দুজন শিক্ষক আমাকে ডাকলেন কথা বলার জন্য। কিন্তু আমি পুরোই অবাক হয়ে গেলাম তখন, যখন তারা আমাকে ঐ লেখাটার জন্য সাধুবাদ দিলেন এবং আমাকে বললেন, ‘আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, এই সীমাবদ্ধতার মাঝে থেকেও আমরা সবসময় তোমাদের ভালোই চাই আমরা কখনোই তোমাদের খারাপ চাই না, এমন লেখালেখি কর কোন সমস্যা নেই, তবে কাউকে উদ্দেশ্য করে নয়, কাউকে শ্রদ্ধা করার দরকার নেই, অপমান করো না’।
এই কথাগুলো শোনার পর নিজেকে খুবই অপরাধী মনে হচ্ছিল, আমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। আসলেই তো যে স্যারদের নিয়ে এমন কথা লিখলাম তারা তো কখনোই আমাদের খারাপ চান না। আমি স্যার এর কাছে ক্ষমা চেয়ে এসে ফেসবুকের পোষ্টটি মুছে দিলাম। রাতের বেলা আমার ডিপার্টমেন্টের আরেক শিক্ষক (পি এইচ ডি করতে দেশের বাইরে আছেন) আমাকে ফেসবুকে নক করে এই ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলেন। তিনি ভেবেছিলেন যে আমার ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকরা আমাকে চাপ দিয়েছে পোস্ট মুছার জন্য। তিনি বললেন তোমার লেখা চালিয়ে যাও, কখনোই মুছবে না। এক সময় দেখবে তোমার কথাগুলো সত্য হয়ছে। আমি অবাক হলাম, তিনি নিজে একজন শিক্ষক হয়ে শিক্ষকদের নিয়ে এমন কথায় সায় দিচ্ছেন।
কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই ব্যাপারটা আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেলো, যখন দেখলাম কিছু শিক্ষক রাজনীতির ছত্রছায়ায় থেকে নিজের লাভের জন্য আমাদের প্রানপ্রিয় বিশ্ববিদ্যলয়কে বলি দিচ্ছে। আর কেউ কেউ এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছেন।
আমাকে ক্ষমা করবেন বুয়েট শিক্ষকগন, আমি আপনাদের ভুল বুঝেছিলাম।
আর আমার উপরোক্ত কবিতাটি সেইসব শিক্ষকনামী লম্পটদেরকে উৎসর্গ করলাম, যাদের জন্য আমাদের শিক্ষকেরা আজ নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম করছেন।