somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্যালেলিয়া ৩২ এবং কয়েকটি শিশু

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ ভোর ৬:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহাকাশযান রড্রিক ৭ এসে নামলো গ্যালিলিয়া ৩২ গ্রহের এক বিশাল মরুভূমি সদৃশ ভূমিতে। রড্রিক ৭ পৃথিবী থেকে যাত্রা শুরু করেছিলো পাঁচ বছরেও বেশী সময় আগে। পৃথিবী থেকে দুরুত্ব খুব বেশী না হওয়ায় কম সময়েই মহাকাশযানটি পৌছে গেছে এখানে। যাত্রী হিসেবে এসেছে তিনজন মহাকাশচারি। এর মাঝে একজনের নাম রস টেইলর। তিনি মধ্যবয়স্ক এবং এই টিমের লিডার, তিনি একাধারে একজন মহাকাশচারি এবং ম্যাটালার্জিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। অপর দুজন হলেন নাজমুস সাকিব এবং গ্রাহাম ফিন। দুজনের বয়স খুব বেশী নয়। অল্প সময়েই তারা মহাকাশ বিজ্ঞানে পারদর্শিতা অর্জন করায় এই প্রজেক্টের টিম মেম্বার করে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।

গ্যালিলিয়া ৩২ গ্রহের আশেপাশে বড় কোন নক্ষত্র না থাকায় এখানে আলোর পরিমান খুব কম, মহাকাশযান থেকে নেমে তাই চোখে মানিয়ে নিতে কিছুটা কষ্ট হলো তিনজনের। বাইরের তাপমাত্রা এবং চাপ থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য বিশেষ ধরনের পোষাক পরে নিতে হয়েছে তাদের। তাপমাত্রা চাপ বা অন্যান্য ব্যাপারে গ্রহটির সাথে পৃথিবীর তেমন মিল না থাকলেও একটা ব্যাপারে খুব মিল আছে বলা যায়, সেটা হলো এখানেও একটা বায়ুমন্ডল আছে, এবং এই বায়ুমন্ডলে প্রায় ৩১ শতাংশ অক্সিজেন। এই কারনেই ওদের তিনজনের কোন অক্সিজেন মাস্ক পরতে হয়নি। ওরা এখানে এসেছে একটা বিশেষ কাজে। কাজটি হলো, এই গ্রহ থেকে টাইটেমিয়াম ধাতু সংগ্রহ করা। পৃথিবীতে টাইটেনিয়াম ধাতুর ব্যাবহার অনেক বাড়লেও খনিতে টাইটেনিয়ামের অপ্রতুলতা দেখা দিয়েছে। তাই এই গ্রহ থেকে টাইটেনিয়াম সংগ্রহ করে পৃথিবীতে নিয়ে কাজে লাগানো হবে। ওদের আগে পৃথিবী থেকে আরেকটি পাঁচ জনের দল এসেছিলো। তারা পৌছানোর পর এই গ্রহে টাইটেনিয়ামের প্রাচুর্যের কথা পৃথিবীতে সিগ্নাল হিসেবে পাঠিয়েছিলো। সাথে ডরমিটল নামক আরেকটি বিশেষ ধাতুর আধিক্যের কথাও বলা ছিলো সিগ্নালে। তবে সেই ধাতুর বৈশিষ্ট সম্পর্কে কিছু বলার আগেই কোন এক কারনে সিগ্নাল বিচ্ছিন্ন হয়। পরে আর কোনভাবেই তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে এটি অনেক আগেই জানা ছিলো যে এই গ্রহে মানুষের বেঁচে থাকার মত অনেক উপাদানই বিদ্যমান। তাই টাইটেনিয়াম সংগ্রহ করার জন্য পৃথিবী থেকে পুনরায় মানুষ প্রেরণ করা হলো।

রস টেইলর ধাতু নির্নায়ক যন্ত্রের সাহায্যে দেখতে পেলো যে এখানকার মাটির প্রায় ২০ শতাংশ টাইটেনিয়ামে গঠিত। আরেকটি ধাতু ডরমিটলের কথা সিগ্নালে বলা হয়েছিলো সেটিরও পরিমান প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। সাকিব বলল, যেহেতু ডরমিটলের পরিমান এখানে অনেক বেশী, তাই টাইটেনিয়াম সংগ্রহের পুর্বে এর বৈশিষ্টগুলোও আমাদের জেনে নেয়া উচিৎ। ফিন সাকিবের কথায় সম্মতি জানিয়ে বলল, আমাদের পুর্বে আসা টিমও এই ধাতুর ব্যাপারে কিছু বলার আগেই সিগ্নাল বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো, তাই আমাদের উচিৎ হবে আগে এই ধাতুটির প্রপার্টি জেনে তারপর অন্য কাজ করা। রস তাদের সাথে একমত হলো, এবং তারা কিছু নমুনা সংগ্রহ করে তাদের মহাকাশযানের ভেতরের ল্যাবের দিকে চলল। যাবার পথে সাকিব অদ্ভুত একটা জিনিস খেয়াল করলো, একটি মানবশিশু তাদের খুব কাছে দিয়েই হেটে চলে গেলো। শিশুটির বয়স বড়জোর দেড় বছর হবে, তবে তার হাটা চলার ভঙ্গি একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মতই। এই গ্রহে মানবশিশু, এটা কিভাবে সম্ভব? এটা ভাবতে ভাবতেই মৃদ্যু আলোতে হারিয়ে গেলো শিশুটি। সাকিব তার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না, সে কি দেখলো এইটা? সে ভাবলো এইটা একটা ইলিউশন। পৃথিবীতে তার নিজের এক বছর বয়েসী বাচ্চাটিকে সে রেখে এসেছে, তাই হয়তো তার কথা মনে পরে ইলিউশন হচ্ছে। সে আরেকবার ভাবলো, এতদিনে তার বাচ্চাটির বয়স ছয় বছর হয়ে গেছে। অনেক বড় হয়ে গেছে সে। তারপরেও সাকিব রস এবং ফিনকে তার এই ঘটনাটি বলল। তারা দুজনেই হেসে ব্যাপারটিকে উড়িয়ে দিলো। ফিন বলল, মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে নানান রকম স্বপ্ন দেখে, আর আপনি তো জেগে জেগেই অসাধারন সব স্বপ্ন দেখে যাচ্ছেন।

মহাকাশযানের ভেতরের ল্যাবটি খুবই ছোট, কিন্তু ধাতুর বৈশিষ্ট নির্নয়ের জন্য সকল প্রকার উপাদান ল্যাবটিতে আছে। রস প্রথমে পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে এতক্ষনে তারা যা করেছে তার হুবুহু বর্ননা সিগ্নাল আকারে পাঠিয়ে দিলো। তারপর ল্যাবে গিয়ে ডরমিটলের বৈশিষ্ট নির্নয়ের কাজে লেগে গেলো। সাকিব এবং ফিন তাকে সাহায্য করতে লাগলো। দীর্ঘক্ষন গবেষণার পর রস ফিন এবং সাকিবকে ডেকে বলল, তোমরা কি খেয়াল করেছো যে আমাদের সকলের পরিহিত কাপড় আস্তে আস্তে বড় হয়ে যাচ্ছে, তারমানে আমরা ধীরে ধীরে ছোট হয়ে যাচ্ছি। সাকিব এবং ফিন খেয়াল করলো আসলেও তাই, তাদের কাপড় চোপড় খুব ধীরে ধীরে ঢোলা হয়ে যাচ্ছে। ফিন জিজ্ঞাসা করলো, এমনটি কেন হচ্ছে? রস বলল, আমি এতক্ষণ ডরমিটলের বৈশিষ্টগুলো বের করছিলাম। ডরমিটলের অন্যতম বৈশিষ্ট হচ্ছে এটি জীবদেহের সংস্পর্শে আসলে মাইটোসিস কোষ বিভাজনের বিপরিত কাজটি ঘটায়। মানুষ যেমন ছোট্ট ভ্রূণ থেকে মাইটোসিস বিভাজনের মাধ্যমে আস্তে আস্তে বড় মানুষে পরিনত হয় একটা পর্যায়ে মাইটোসিস খুব নিয়ন্ত্রিত ভাবে ঘটে তখন মানুষ একটা স্টাবল পজিশনে চলে আসে। তেমনি ডরমিটলের সংস্পর্শে আসার পর মানুষের এই মাইটোসিস বিপরিতভাবে ঘটতে থাকে, কোষ বিভাজন না হয়ে কোষ নষ্ট হতে থাকে এবং মানুষ আস্তে আস্তে ছোট হতে থাকে, তবে একটা পর্যায়ে গিয়ে স্টাবল হয়। সাধারনত মাইটসিস ঘটতে কয়েক বছর সময় লাগলেও এর বিপরিত প্রক্রিয়া ঘটে খুব কম সময়ের মধ্যে। রস আরো বলল, সাকিব আসলে ঠিকই দেখেছে, ওর দেখা মানবশিশুটি আসলে আমাদের আগে যারা এখানে এসেছিলো তাদেরি একজন। খুঁজলে হয়ত আমরা বাকি চারজনকেও আমরা পেয়ে যাব।

কয়েক ঘন্টা পর মহাকাশযান রড্রিক ৭ থেকে তিনটি দেড়-দুই বছর বয়সী শিশু বের হলো, গ্যালিলিয়া ৩২ গ্রহের মৃদ্যু আলোতে তারা খুঁজতে শুরু করলো বাকি পাঁচটি শিশু নভোচারীকে।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

লিখেছেন আবু ছােলহ, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৮

ব্লগ লিখেছি: কথাটার পরে ভাসছে ১১ বছর ১১ মাস... কথাটা

গুগল থেকে নেয়া ছবি।

সামুতে মাল্টি নিক নিয়ে অনেকেই কথা বলেন। অনেকের কাছে মাল্টি যন্ত্রণারও কারণ। শুধু যন্ত্রণা নয়, নরক যন্ত্রণাও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×