somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাস্কর্য অপসারণ ক্ষোভ–বিক্ষোভ

২৭ শে মে, ২০১৭ সকাল ১০:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিতর্কিত গ্রিক দেবী থেমিস এর আদলে নির্মিত এই ভাস্কর্য স্থাপন প্রকল্পটির সিদ্ধান্ত কবে গৃহীত হয় এবং সে ব্যাপারে কোনো দরপত্র হয়েছিল কি না, তা জানা যায়নি। এটি স্থাপনের ব্যয়ই বা কত ধার্য করা হয়েছিল, তা-ও অজানা। এ ব্যাপারে সরকার থেকে একটি স্পষ্ট বক্তব্য থাকা দরকার, যেহেতু টাকাটা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যাচ্ছে। এটি বসানো ও সরানো—দুটোর কারণই সাধারণ মানুষের কাছে অস্পষ্ট। ভাস্কর শিল্পী মৃণাল হক একটি প্রস্তাবনা পেয়েছিলেন লিলি ফোয়ারাতে সুন্দর ওয়াটার ড্যান্স নির্মাণ করার জন্য। শিল্পী নিজেই এই প্রকল্প দেন সংশ্লিষ্টদের। সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষের মৌখিক আদেশে তিনি ১৭-১৮ লাখ টাকা খরচ করে ভাস্কর্যটি তৈরি করে সেখানে স্থাপন করেন। এখন পর্যন্ত বিলও পাননি।

গত ১১ এপ্রিল গণভবনে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সরকারি স্বীকৃতি ঘোষণার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এই ভাস্কর্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘সত্য কথা বলতে কি, আমি নিজেও এটা পছন্দ করিনি। কারণ, গ্রিক থেমিসের মূর্তি আমাদের এখানে কেন আসবে? এটা তো আমাদের দেশে আসার কথা না।’

ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে গত বছরের ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশের মূল ফটক বরাবর লিলি ফোয়ারায় ভাস্কর্যটি বসানো হয়। দেড় মাসের মাথায় এটিকে গ্রিক দেবীর মূর্তি দাবি করে অপসারণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের দপ্তরে লিখিত আবেদন জানান আওয়ামী ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী। এরপর ৬ ফেব্রুয়ারি হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফী বিবৃতি দিয়ে ভাস্কর্যটি অপসারণের দাবি জানান। দাবি আদায় না হলে তাঁরা কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেন। হেফাজতের সর্বশেষ বিবৃতিতে রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই ভাস্কর্যটি অপসারণের দাবি জানানো হয়।

শিল্পী মৃণাল হক দাবি করছেন এটি থেমিসের মূর্তি নয়, বাঙ্গালী নারীর মূর্তি? প্রশ্ন হচ্ছে- এই নারীর অবদান কী? নারীর সাথে বিচার বিভাগের সম্পর্কটা কই? ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্র ইউনিয়ন, ব্লগার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, গণজাগরণ মঞ্চ, ছাত্র-শিক্ষক-লেখক-শিল্পী-সংস্কৃতিক কর্মী ও নাগরিকবৃন্দসহ বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রঙিন পানি ছিটিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে আহত হয়েছেন ১০ জন, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪ জনকে।

হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দল ও সংগঠন ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলার দাবি জানিয়ে আসছিল। তাদের দাবির সাড়ে তিন মাসের মাথায় এটি সরানো হলো। দাবি আদায় হওয়ায় রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সামনের সড়কে ‘শুকরিয়া’ আদায় করে মিছিল করেছে ধর্মভিত্তিক দল ও সংগঠনগুলো। দেশের ১০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি এক বিবৃতিতে বলেছেন, সরকার কার্যত ধর্মান্ধ মৌলবাদী অপশক্তির কাছে নতি স্বীকার করেছে। ধর্ম অন্ধ বলতে কিছুই নেই। এটা নিরেপেক্ষ দাবিদারদের ফন্দি। দুনিয়ার কেউ নিরেপেক্ষ নন।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আছেন নানান পেশার মানুষ। চলচ্চিত্র নির্মাতা থেকে শুরু করে লেখক, বুদ্ধিজীবী ও অন্যান্য পেশার মানুষ। সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, সংগীতজ্ঞ সন্‌জীদা খাতুন, অভিনেতা হাসান ইমাম, নাট্যাভিনেতা রামেন্দু মজুমদার, শহীদজায়া পান্না কায়সার, নাট্যকার মামুনুর রশীদ, শিল্প সমালোচক মফিদুল হক, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ। উল্লেখিত প্রত্যেকটি ব্যাক্তি মুরতাদ। ধর্মদ্রোহী। ধর্ম নিয়ে সমালোচনা ওদের একটি কাজ। শুধুমাত্র ইসলাম নিয়েই যত মাতামাতি। নাস্তিক হওয়া খারাপ কিছু না তবে দ্রোহিতা খারাপ। ব্লাশফেমি আইন সব দেশেই প্রযোজ্য। এই আইনের বিকল্প নেই। বাক স্বাধীনতা ম্যানে ধর্ম দ্রোহিতা নয়। মুসলিম প্রধান দেশে সংখ্যাগুরু দাবি বাস্তবায়িত হবে বা হওয়া উচিৎ। এটাই নিয়ম।

পবিত্র রমজান মাস আসার আগে আগেই সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলা হোক, সেটা চেয়েছে সরকার। নতুবা এই ইস্যুতে রোজায় ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো মাঠ গরম করতে পারে—এমন তথ্য ছিল সরকারের কাছে, যা সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। সরকার ও আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।এমনটাই রিপোর্ট করেছে প্রথম আলো।

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত সরকার ধর্মীয় গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের মতো পরিস্থিতিতে পড়তে চায় না। ভোটের রাজনীতি মাথায় রেখেই সরকার ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে অবস্থান নেয়। এইটা ভাবার দরকার নেই যে, সরকার উদার নীতিতে ইসলামের পক্ষে নিয়ে এই মূর্তি সরিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেছেন, ভাস্কর্য সরানোর বিষয়টি সরকারের এখতিয়ারে নেই। এটি সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত। যদি সুপ্রিম কোর্টের একক সিদ্ধান্ত হয়েই থাকে যাবতীয় ব্যায়ভার জাতীয় সম্পদ।

যাই হোক সকলকে বোকা বানাতে হোক বা ধর্মীয় অনুভূতি হতে হোক কিংবা ভোটের লক্ষেই হোক সিদ্ধান্তটি বেশ হয়েছে। পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নেই যেখানে ধরমনিরেপেক্ষতা আছে, সবাই ধর্মের পক্ষে। চীন, জাপান, মিয়ানমার, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ভারত, পাকিস্থান, মিসর, তুরস্ক সবাই ধর্মের পক্ষে। রাষ্ট্র কক্ষনো ধর্ম নিরেপেক্ষ হতে পারেনা। উদার হয় বা কট্টর হয়। ভারতে কেউ পুজার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারবেনা। কয়েকটি রাজ্যে প্রকাশের সাথে গরু জবেহ করতে পারবেন না। মিয়ারমারে গৌতম বুদ্ধের মূর্তির বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারবেন না। যিশুর বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে পারা যাবে না। এটাই রাষ্ট্র। এটাই নিয়ম। খামাখা প্রগতিশীল সাজা ও ধর্ম নিরেপেক্ষ দাবি করা বোকামি। ধর্মদ্রোহিতা পিতা পরিচয়হীন জারজ সন্তান। ধর্মহীন হওয়া ব্যাক্তির একান্ত ইচ্ছার ব্যাপার, ধর্ম গ্রহণে চাপ বা দবরদস্তি করা যাবে না। তবে যে কোন ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করা মস্তবড় অপরাধ। ধর্ম ছাড়া মানুষ ভালো হয় তা মুটেও সম্ভব নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৭ দুপুর ২:১৩
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×