somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নবজাগরণের সূচনা : প্রাতিচ্য এবং এপার-ওপার বাঙলা বাংলাদেশে নবজাগরণ- ভাঙা গড়ার অলিক স্বপ্ন।

২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৯:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নবজাগরণের সূচনা : প্রাতিচ্য এবং এপার-ওপার বাঙলা
বাংলাদেশে নবজাগরণ- ভাঙা গড়ার অলিক স্বপ্ন।

ছোটবেলায় রাষ্ট্র, সরকার, সার্বভৌমত্ব এমন অসংখ্য বিষয়ের কঠিন কঠিন সংজ্ঞা মুখস্ত করেছিলাম যেখানে মূর্ত ও বিমূর্ত দুটি প্রত্যয় খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যাই হোক, নবজাগরণ বিষয়ে নিজের কিছু কথামালা রচনার প্রাক্কালে প্রত্যয় দুটি আবার মনে পড়ে গেল। নবজাগরণ যেহেতু বিমূর্ত একটি ধারনা, তাই আমার চিন্তাচেতনার সত্যতা যেমন কোন র্নিদিষ্ট মানদন্ডে বিচার করা অসম্ভব, তেমনি আমার চিন্তাচেতনার সাথে পাঠকের দ্বিমত পোষণ করা ও অস্বাভাবিক কিছু নয়।

ইউরোপে যখন নবজাগরণের হাওয়া বইতে শুরু করে, অখন্ড ভারতবর্ষে তখনও নবজাগরণের ছোঁয়া লাগেনি। আরো স্পষ্ঠ করে বলা যায়, ইউরোপে রেনেসা এসেছে পঞ্চাদশ শতাব্দীতে আর আমাদের ভারতবর্ষে তা এসেছে চারশ বছর পরে অর্থাৎ উনবিংশ শতাব্দীতে। ইংরেজদের মাধম্যে ভারতবর্ষে রেঁনেসার সূচনা- কথাটির সাথে দ্বিমত থাকলেও আশা করি একেবারে অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু যাদের হাত ধরে ভারতবর্ষে নবজাগরণের সূচনা তাঁদের নানান সীমাবদ্ধতার ( বিশেষত: সা¯প্রদায়িকতা) কারণে সেই রেঁনেসা প্রকৃতঅর্থে ভারতবাসীর জন্য কতখানি সুখকর ছিল তা আজও প্রশ্নবিদ্ধ। উপরন্তু, পূর্ববাংলায় ( বর্তমান বাংলাদেশ) সেই রেঁনেসা এসেছিল আরও অনেক পরে। এরজন্য অবশ্য ইংরেজদেরকে তেমন দায়ী না করে বরং কলকাতার উদিয়মান বাবুশ্রেণীকে দোষ দিলে আশা করি অত্যুক্তি হবে না।

ব্যাপারটাকে আরো স্পষ্ঠ করা যেতে পারে। “ রামমোহন-ডিরোজিওঃ মূল্যায়ন” নামক বইতে উল্লেখ করা হয়েছে , “দাস ব্যবসায়ের অনাবৃত কুৎসিতরুপ প্রত্য করেছেন যেমন আঠারো বছরের তরুণ ডিরোজিও, তেমনি দেখেছেন পূর্ণবয়স্ক রামমোহন-দ্বারকানাথ-প্রসন্নকুমার প্রমুখ সেকালের সংস্কার আন্দোলনের নায়করা, যারাঁ ইউরোপীয় ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, অথচ মনুষ্যত্বের চূড়ান্ত লাঞ্চনার কোন প্রতিবাদ তাঁদের কন্ঠে ধ্বনিত হয়ন্ ি”।

এই বাবুশ্রেণীর সাম্প্রদায়িক মানসিকতার জন্য পূর্বভঙ্গকে যে দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তা বঙ্গভক্স্গের প্রোপট আলোচনা দ্বারা আরো পরিষ্কারভাবে বোঝা সম্ভব।

যাই হোক, হিন্দু-মুসলমান সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগ হল কিন্তু পূর্ববাংলার মুসলমানদেরকে এর সুফল পেতে আবার দীর্ঘদিন অপো করতে হল। অর্থাৎ, ৪৭ এর দেশবিভাগ যদি হয় কলকাতার বাবুশ্রেণীর রেঁনেসার ফসল, তবে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববাঙলার মানুষের রেঁনেসার বিষয়টিকে প্রতিয়মান করে।
বিষয়টিকে আরো একটু স্পষ্ঠ করা যেতে পারে। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রাতারাতি বিকশিত হয়নি। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল শিতি-বুদ্ধিজীবী শ্রেণির মধ্যে পাকিস্তান আন্দোলন চেতনা বিকাশিত হয়েছিল, তাঁদেরই কিছু সংখ্যক শিক-বুদ্ধিজীবী পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ধারাকে বিকশিত করেন। অবশ্য কিছু সংখ্যক শিক-বুদ্ধিজীবী তাঁদের ব্যত্তিগত ও যৌক্তিক অবস্থান থেকে পাকিস্তান ভঙ্গের বিপে ছিলেন। কিন্তু বাংলার নবজাগরণে এনাদের অবদানকেও খাটো করা কোন যৌক্তিকতা নেই।

আমরা ছোটবেলা থেকেই নবজাগরণ বলতে ব্রিটিশ শাসন আমলের কলকাতার উদীয়মান বাবু শ্রেণীদের ইতিহাস ও অবদান পড়েছি। রাজা রামমোহন রায়ের হাত ধরে ভারতবর্ষে যে নবজাগরণের সূচনা হয়েছিল তা ৪৭ এর পরে থেমে থাকে নি। কিন্তু আমাদের শিাব্যবস্থা আমাদেরকে রাম মোহন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজনারায়ন বসু, কালীপ্রসন্ন, প্যারীচাদঁ, মাইকেল মধুসূধন প্রমূখ মহান ব্যক্তিবর্গের ইতিহাসই কেবল জানিয়েছেন, অথচ যাদের চিন্তা চেতনার মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতিসত্বার বিকাশ ঘটেছে, দেশের মানুষ ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছে, অন্যায় ও বৈষম্যের বিরোদ্ধে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তয়ী সংগ্রামে জয় লাভ করেছে সেই চিন্তাবিদদের ইতিহাস হতে আমাদের বঞ্চিত করেছে। উদাহরণস্বরূপ প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাকের কথা বলা যেতে পারে যিনি একইসাথে পাকিস্তান আন্দোলন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন চিন্তা চেতনার অন্যতম পুরোধা। দুঃখের বিষয় বাংলাদের ল ল শিার্থীর কাছে এমন রাষ্ট্র-চিন্তা নায়কেরা আজো অপরিচিত রয়ে গেলেন। উপরন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক-শিার্থীর কাছেও এ মহান নবজাগরণ-নেতারা খুব বেশি পরিচিত বলে মনে হয়না। আমার দুই বছরের ছাত্রজীবনের অভিজ্ঞতা অন্তত তাই বলে।

এখন প্রশ্ন আসে, তাহলে আমরা তো আমাদের মহান নেতাদের অবদানের কথা পড়েছি!!! হ্যাঁ, আমাদের মহান নেতারাই রাজনীতি করে এদেশের মানুষকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। শহীদ সরওয়ার্দী, ফজলুল হক, ভাসানীর হাত ধরে যার সূচনা হয়েছিল তা পূর্ণতা পেয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাতে। কিন্তু, একটি বিষয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে যে, রাজনীতিবিদরা স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন যদিও সেই স্বপ্নের স্রষ্ঠা ছিলেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক ও বুদ্ধিজীবীমহল।

এই যদি আমাদের চিন্তা-পুরুষদের নবজাগরণের স্বীকৃতি, তবে আমাদের ভবিষৎ প্রজন্ম কিভাবে পাড়ি দিবে আগামী দিনের কঠিন দুঃসময়? সেই চিন্তা নয়কদের ধারা কি বাংলাদেশে এখনো অব্যাহত আছে???
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×