somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙালি’র সাংস্কৃতিক দরিদ্রতার উৎস সন্ধানে ... ০১

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৮:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাঙালি’র সাংস্কৃতিক দরিদ্রতার উৎস সন্ধানে ... ০১

বাঙালির দরিদ্রতার কারণ অনুসন্ধান চারটিখানি কথা নয়। দেশের প্রথিতযশা অর্থনীতিবীদগণও বিষয়টি নিয়ে অনেক ভেবেছেন। সমাজবিজ্ঞানীগণও বিভিন্ন সময়ে দারিদ্রের সমাজতাত্ত্বিক কারণসমূহ চিহ্নিত করার প্রয়াস পেয়েছেন। তাই, এ বিষয়টি আমার মৌলিক কোন ভাবনা নয় বরং এ পর্যন্ত সময়ের গবেষণাগুলো সর্ম্পকে আমার ব্যক্তিগত কিছু অভিমত।
এতটা দুঃসাহস না দেখালেও পারতাম কিন্তু বরাবরেরমত ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার অভ্যাসবশত: কিছু অপরিণত ও অপরিপক্ক কথামালা রচনার লোভ সম্বরণ করতে পারলাম না। সে যাই হোক, আমার বক্তব্যের তীব্র সমালোচনার জন্য আমি প্রস্তুত এবং গঠনমূলক সমালোচনা প্রাপ্তির আশা রাখছি।

কবি নজরুল বলেছিলেন, হে দারিদ্র,
তুমি মোরে করেছ মহান... ... ...
দুখু মিয়া দুঃখকে ভালবেসে না পাওয়ার কষ্ঠ ভুলতে চেয়েছিলেন নাকি প্রকৃতই আগুনে পুড়ে পুড়ে খাটি সোনা হতে চেয়েছিলেন সে প্রসঙ্গে না গেলে ও একটি কথা স্বীকার করতে দোষ নেই যে, এই দুটি লাইন বাঙালি জাতিকে একটি দারিদ্রের ছকে আবদ্ধ করেছে।

কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতই এত মহান একজন দার্শনিক ছিলেন যে, বাঙালির স্বভাব, চিন্তা-চেতনার সীমা তাঁর নজর এড়ায় নি। তিনি তৎকালিন বিখ্যাত সোমপ্রকাশ পত্রিকায় লিখেছিলেন,
“বাঙালি অনাহারে ঘরে পড়িয়া মরিবে তথাপি আহার অšে¦ষণ করিবে না।”
শুধু কবিগুরু নন, সুদূর অতীতে বঙ্গদেশে আগত ভ্রমণকারীর দলও এমন মন্তব্য করে গেছেন বাঙালিদের নিয়ে।

এবারে দারিদ্রতার সংস্কৃতি বিষয়টির দিকে খানিকটা অলোকপাত করছি। সংস্কৃতির সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা দিয়েছেন নৃবিজ্ঞানী টেইলর। তাঁর মতে, সমাজে বসবাসের কারণে মানুষ যুগ যুগ ধরে যা কিছু অর্র্জন করে তাই হল সংস্কৃতি। এখানে একটি বিষয় বলা রাখা ভালো যে, তিনি অর্জন করা শব্দটি ব্যবহার করেছেন এবং এ থেকে বোঝা যায় সংস্কৃতি জিনগত সূত্রে উত্তরাধিকার স্বরূপ প্রাপ্ত মূর্ত বা বিমূর্ত কোন বিষয় নয়।
তাহলে স্বভাবতই যে প্রশ্নটি মনে উকি দেয় তা হল, বাঙালি কি নিজেই জাতি হিসাবে দারিদ্রকে উপভোগ করে?
আমার মতে, না।
ইতিহাস পর্যালোচনা করতে গেলেই আমরা ১৭৫৭ সাল অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসন থেকেই শুরু করে একটা দিকনির্দেশ লাভের চেষ্টা করি। কিন্তু ১৭৫৭ পূর্ববর্তী সময়েও আমরা স্বাধীন ছিলাম না। সামাজ্যবাদী শক্তি হিসাবে কেবলমাত্র ব্রিটিশ ও পাকিস্তানিদের দোষ দেয়ার সংস্কৃতিটি আমরা পেয়েছি ইতিহাসের চরম পক্ষপাতিত্ত্বের কারণে।
স্বাধিনতা, পরাধিনতা বিষয়গুলো আসলেই আমরা গদগদ মুখস্ত বলে ফেলি, “১৭৫৭ সালে সিরাজউদ্দোল্লার পতনের মাধ্যমে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য ২০০ বছরের জন্য নিভে যায়। প্রকৃতঅর্থে এ পরাজয় বাঙালি জাতির পরাজয় ছিলনা বরং একটি সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কাছে অন্য একটি সাম্রাজ্যবাদী রাজ পরিবারের পরাজয় নিশ্চিত হয়েছিল।
আর এখনো পর্যন্ত যে মিরজাফর নামটি আমরা প্রতারক অর্থে ব্যবহার করি তাও ইতিহাসের পক্ষপাত। বরং বর্তমান সময়ে আমরা অবাঙালি মিরজাফরের পরিবর্তে প্রতারক অর্থে খন্দকার মোশতাক নামটি ব্যবহার করতে পারি। তাহলে অন্তত বাঙালির চরিত্রে
কিছুমাত্রায় অন্যায়, নেমকহারামি আর প্রতারণার দায়টি হালকা হবে। শুধুশুধু অবাঙালি মীরজাফরের সাথে আমাদের চারিত্রিক তুলনার কারণে হয়ত এখনো বাঙালির বোধদোয় হচ্ছে না।
ঘোলাভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছের ইতিহাস আমরা পার করে এসেছি। কিন্তু, এত ঐশ্বর্যের পরে ও আমরা কখনোই স্বাধীন ছিলাম না। মোগল, তুর্কি, পাঠানরা সুদূর মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসে আমাদের শাসন করে গেছে। এমনকি তাদের ক্রয়কৃত আফ্রিকান হাবশি গোলামরাও ক্ষমতা পেয়েছিল এবং শাসন করেছিল আমাদের।

এত ইতিহাস আলোচনার পর সরলরৈখিক একটি সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, বাঙালি চিরকাল (১৯৭১ পূর্ব পর্যন্ত) শাসিত হয়েছে। তাহলে কি বাঙালি নিজেই মর্ষকামিদের মত অন্যের শাসনে সুখ পেয়েছিল? সম্ভবত না। তবে দীর্ঘদিনের এ শাসন ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে বাঙালিকে মনস্তাত্ত্বিক পরাধিনতার শৃঙ্খলে বন্দি করে রেখেছিল।
এ শাসনের সাথে যখনই শোষণ যোগ হয়েছে কেবলমাত্র তখনই বাঙালির চরিত্রে শ্রেণী সংগ্রাম ও প্রতিবাদী মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে যেখানে আমরা আবার একটি নতুন সংস্কৃতির উৎসমূল আবিষ্কার করি।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৮:৪১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×