আমার প্রিয় বড়ভাই মিজান উদ্দীন খান বাবুর মারফতে জানতে পারলাম, সাহিত্যে "চোঙ্গাগল্প" নামে একটা বিশেষ ধারার আবির্ভাব ঘটেছিল আমাদের চট্টগ্রাম থেকেই।
বাবু ভাইয়ের অনুমতি ব্যতিরেখেই চোঙ্গা গল্প সর্ম্পকিত তাঁর লেখার কিছু অংশ এবং আমার কিছু কথামালা তুলো ধরলাম। আমার বন্ধুমহলে "চোঙ্গাগল্পের" প্রসার প্রসার বাড়ানোর নিমিত্তেই এই ক্ষুদ্র প্রয়াষ।
চৌধুরী জহরুল হক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। তিনিই ছিলেন চোঙ্গা গল্পের পথপ্রদর্শক। লেখকের সহধর্মিনী নিলুফা জহুর এনায়েত বাজার মহিলা কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন। দু’জনই ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত হাসিখুশি প্রাণবন্ত মজার এবং রসের মানুষ ছিলেন।
চৌধুরী জহুরুল হকের মায়ের বাড়ী চুনতী ডেপুটি বাড়ী, আমার বাড়ির নিকটবর্তী হওয়ায় এবং ঘটনাচত্রে লেখক আমার আত্নীয় বনে যাওয়ায় সাহিত্যের এই বিশেষ ধারাটি নিয়ে নতুন করে বেশ উৎসাগ জেগে উঠেছে।
লেখক ছাত্র অবস্থাতেই চোঙ্গা গল্পের সূচনা করেছিলেন। ষাট দশকের শেষের দিকে চোঙ্গাগল্প অসাধারণ প্রিয়তা অর্জন করে- এই প্রিয়তা তুঙ্গে উঠে ঊনসত্তরের দিকে। এই সময়টাই- ছেষট্টি থেকে ঊনসত্তর- ছিল চোঙ্গা গল্পের স্বর্ণপ্রসূ সৃজনকাল।
চোঙ্গা কি?
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় আমরা যাকে বলি ‘ফু দেঅনি চুঁয়া’ (ফু দেয়ার চোঁঙ্গা)। মাটির চুলায় আগুন ধরানোর জন্য, আগুনকে প্রজ্জলিত করার জন্য চোঙ্গা ব্যবহারের প্রচলন এখনো গ্রাম বাংলায় দেখা যায়। এখান থেকেই "চোঙ্গাগল্প"।
"চোঙ্গাগল্প" সম্পর্কে লেখকের কথা:
১. চোঙ্গার মধ্য থেকে উদ্দিষ্ট বস্তুকে দেখতে হলে এক চোখেই দেখতে হয় আর সে দেখাটা হয় তীক্ষ্ম লক্ষ্যমুখী এবং তাতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে বিশেষ বৈশিষ্যের রূপ-প্রকৃতি। ‘চোঙ্গাগল্প’ হবে সমাজের এ জাতীয় নানা অসংগতি-ভান-ভন্ডামি-মূঢ়তা আর স্ববিরোধিতার খন্ড বৈশিষ্ট্যের পর্যবেক্ষণ-প্রত্যক্ষণের শিল্পত রূপায়ণ।
২. চোঙ্গা ঝিমিয়ে পড়া আগুনকে তাতিয়ে তোলার জন্য ব্যবহৃত হয়। ভেবেছিলাম, চোঙ্গাগল্পের কাজ হবে, সাহিত্যের বেদনা-ভারাক্রান্ত স্যাঁতসেঁতে আবেগ ও ভাবপ্রবণ সমাজভাবনাকে আঘাতে আঘাতে চকিত রা, তাতিয়ে তোলা- চাঙ্গা করা।
৩. মাইকেল বহুল প্রচলনের আগে ‘চোঙ’ বা ‘চোঙ্গা’ ছিল বক্তব্যকে দূরে পৌছে দেবার বাহন। মনে করেছিলাম, চোঙ্গা গল্প হবে হাস্য-রঙ্গ-ব্যঙ্গ প্রবণ বক্তব্যবাহক কথাসাহিত্যের একটি নব আঙ্গিক।
৪. ‘চোঙ’ বা ‘চোঙ্গা’ কখনো কখনো ম্যাজিশিয়ানদের ম্যাজিকের বাহনও হয়। সেই ক্ষেত্রে ‘চোঙ’ বা ‘চোঙ্গা’ হয় রহস্যময় এক নাটকীয় চমকের আধার। অতএব, চোঙ্গাগল্প হবে কৌতূহল উদ্দীপক নাট্যকীয় চমক সৃজনের গল্প।
৫. টেডী অর্থে যা বোঝায় চোঙ্গা গল্প হবে অনেকটা সে ধরনের- টাইট টাইট মূলের উপর সামান্য মাত্র ভাষা এবং ভাব-ভাবনার প্রলেপ।
‘চোঙ্গা গল্প’ আকৃতিতে ক্ষুদ্র এবং প্রকৃতিতে হাস্যব্যঙ্গ প্রধান- “চোঙ্গা গল্পের বিষয়বস্তু হবে সাধারণত হালকা কৌতুকপ্রদ অথবা ব্যঙ্গাত্মক”।
চোঙ্গা এবং ব্যঙ্গ উভয় শব্দে ‘ঙ্গ’- বদ্ধাক্ষরের উপস্থিতি নিতান্ত কাকতালীয় হলেও সম্ভবত এখনও পর্যন্ত বিশেষ ধরনের আঙ্গিক ও বিষয়ের সম্মিলনে সৃষ্ট এ-মাধ্যমটির উক্ত অভিধা নির্বিকল্পই থেকে গেছে। আবির্ভাবকালে এর নামকরণ সম্পর্কিত প্রর্তক স্মরণযোগ্য।
কথাসাহিত্যিক মাহবুব-উল-আলম স্পষ্টভাবে তাঁর পক্ষপাত ব্যক্ত করেন, “আমার মনে হয়, এই নামটিই চালু হয়ে যাবে”। সাহিত্যিক আবুল ফজলের মন্তব্য থেকে পক্ষ-বিপক্ষতা ততটা স্পষ্ট হয় না কিন্তু চোঙ্গা গল্পের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে তারুণ্যের প্রতি প্রশ্রয়পূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিই পরিস্ফুট।
চৌধুরী জহুরুল হকের কয়েকটি চোঙ্গাগল্প :
(না পড়লে মিস করবেন)
* রসবোধ *
করমর্দনের পরপরেই আতিক সাহেবের সাদা ধবধবে হাতের কব্জির উপরের তিলটার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন সালাম সাহেব: এটা তো আগে দেখি নি। এটা আবার এখানে কেন?
: কীসের কথা বলছেন? আতিক সাহেবের কন্ঠে বিস্ময়।
সহজ স্বাভাবিকভাবে হেসে বললেন সালাম সাহেব: আপনার হাতের কব্জিতে একটা সুন্দর তিল দেখছি। জানতে চাচ্ছি এটা এখানে কেন?
আতিক সাহেব এবার বুঝলেন। হেসে বললেন: তাহলে কোথায় থাকবে?
সালাম সাহেব হেসে বললেন: ভাবির মুখেই তো থাকার কথা।
* একাল-সেকাল *
প্রথম পর্ব
“খোকন আমার, খোকন আমার, মুক্তো আমার হীরে”
প্রথম সন্তানকে কোলে নিয়ে সুর করে কবিতা আবৃ্ত্তি করেছিলেন জরিনা বেগম।
শেষ পর্ব
: হারামজাদা, শুয়োরের বাচ্চা, তোরা আমায় জ্বালিয়ে মারলি।
অষ্টম সন্তানকে হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে বললেন ভদ্র মহিলা।
শ্রদ্ধেয় লায়লা মমতাজ, যিনি আমার শিক্ষক, তিনি ও বেশ কিছু চ্ঙ্গো লিখেছেন। তারঁ লেখা ২ টি চোঙ্গা...
*রাজনীতি*
এক মহতী জনসভায় নেতা জনগণকে উদ্দেশ্য করে বললেন ঃ আপনারা কি চান?
জনগণ সমস্বরে বললো ঃ শান্তি ।
নেতার মাথা নুয়ে পড়লো , করুণ স্বরে তিন বললেন ঃ এটা তো সম্ভব না ।
জনগণ জানতে চাইলো ঃ কেন?
নেতা উত্তর দিলেন ঃ এটা করতে হলে দেশ থেকে হয় নেতাদেরকে চলে যেতে হবে , নতুবা জনগণকেই চলে যেতে হবে।
*পটল চেরা চোখ*
ভুমিকা -
পটল যতক্ষণ না তোলা হয় ততক্ষণ এর মধ্যে খারাপ কিছু নাই।বরং কখনো কখনো বেশ ভালো কিছু ো মিলে ।যেমন, যদি হয় পটল চেরা চোখ-
১.
নতুন বউ শাড়ি গয়নায় রঙে রূপে ষ্টেজ আলো করে বসে আছে । মেয়ের বাবার টাকা ,বিউটি পার্লারের তিন ঘণ্টা আর কনেসহ কনের দুই বান্ধবীর আট ঘণ্টার প্রাণ পণ শ্রমের সুফল - ।কমিউনিটি সেন্টার ভরটি লোকজন নায়িকা- মূর্তি কনের রুপের ঝলকে ঝলসে যাবার ভয়ে তার দিকে তাকাতে পর্যন্ত পারছে না ।কনে একফোঁটা চোখের পানিও ফেলতে পারছে না ।মেকআপ নষ্ট হবার দুশ্চিন্তায় বেচারীর কান্না আসছেও না।কাবিন-নামায় লেখা বিরাট অংকের মোহরানার সুখ ও গুণ গুণ করছে মনের ভিতর - ক্ষণে ক্ষণে ক্যামেরার ফ্ল্যাশে ঝিলিক দিচ্ছে তার আইলাইনারে আঁকা দুই পটলচেরা চোখ (!) ..................
আজ তার বিয়ে !
সংবর্ধনা
বিশেষ সভাটির বিশেষ আসনে বসে তিনি দ্রুত হিসাব করলেন । আধা ঘন্টা এই চেয়ারে বসার জন্য দাম এসেছে তাঁর পিছনের বেয়াল্লিশ বছর এবং সারা জীবনের অর্জন ।
সাংবাদিকদের ক্যামেরায় হাসি উপহার দিতে দিতে তিনি আরেকবার তাকালেন শূন্য চেয়ারটার দিকে যেটাতে তিনি যে বসেছিলেন তা' তিনি ছাড়া আর সবাই ভুলে যাবে এই অনুষ্ঠান শেষে সবাই বের হয়ে যাবার পর।এবং তাঁর ও আসলে মনে রাখা বা না রাখায় কিছু আসবে যাবে না।
দ্বীপ
মানুষ এমন একটা দ্বীপ যার চারদিকে অথই সমুদ্র ।সেই সমুদ্রের অন্য কিনারা শুধু কল্পনা করা যায় , দেখা যায় না।এই দ্বীপের উপরে যে আকাশ - তা' ও খুব সুন্দর একটা দেখার ভুল মাত্র ।আর কিছু নয় ।
আরো আরো চোঙ্গাগল্প পরে আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করার প্রত্যাশায় রইলাম। আপনারা ও লিখে শেয়ার করতে পারেন। জানাতে পারেন।