সেই ১৯৯৫। চাকুরীর সুবাদে ঢাকায় আসা। প্রথমে থেকেছি গুলশান নতুন বাজারে। তবে স্থায়ীত্ব অনেক কম। পরে মিরপুর-১১ তারপর মিরপুর-১০। তার পর বিয়ে এবং নতুন বউকে রেখে কমলাপুরে। সেই সময়কার কথাই বলছি যখন প্রায় প্রতি সপ্তাহেই বাড়ী যেতাম। কোন সপ্তাহ মিস করলে পরের সপ্তাহে আর কোন কথাই নেই। শুক্র শনি দুই দিন বন্ধ। মঙ্গল অথবা বুধ বারে টিকিট করে রাখতাম। বৃহস্পতিবারে অফিস করেই দে ছুট।
তবে কখন রওনা দিচ্ছি, কোথায় আছি তা জানানো তাগিদ অনুভব করতানা। আব্বা মা খোঁজ নিতেন। অনেক সময় হয়ত বাসে ঘমিয়ে পড়েছি আব্বা রিং করেছেন, আমি টের পাইনি ফলে ফোন আর রিসিভ করা হয়নি। ২৫০/৩০০ কিলোমিটারের পথ। আব্বা বার বার খোঁজ নিয়েছেন। অনেক সময় আমি বিরক্ত বোধ করেছি। হয়তো জীবন সংগীনি দু-এক বার ফোন করে ঘুমিয়ে পড়ত।
আড়াইটে তিনটে বেজে গেছে বাড়ী পৌছিতে পৌছিতে। গিয়ে দেখি আব্বা আম্মা গল্প করছেন, জেগে আছেন আমার পৌছার অপেক্ষায় কখন আমি বাড়ী পৌছিব।
আমি বিরক্তির সুরে তাদেরকে বলতাম - আপনারা জেগে আছেন কেন? এই ভেবে বলতাম যে তারা জেগে থেকে কষ্ট পাচ্ছেন। তখন আব্বা আম্মা একই সুরে বলে উঠতেন-না বাবা এমনি জেগে আছি। আমি বুঝতাম না বা বোঝার চেষ্টাও করতাম না তাদের অনুভ’তির কথা।
শনিবার রাত্রে যখন আবার ঢাকায় ফিরে আসতাম তখন তারা মাথায় হাত বুলে দোয়া করতেন যাতে আমি ঢাকায় ভালভাবে পৌছিতে পারি। আর আব্বা আমাকে শিখিয়ে দিতেন বিভিন্ন দো’আ দর–দ যাতে কোন বিপদ আপদ না হয়।
আর বলতেন, বাবা যখন ছেলে মেয়ে হবে তখন বুঝবা আমরা কেন জেগে থাকি। ভাবতাম তখন আর কি বুঝবো?
এর মধ্যে অনেক সময় বয়ে গিয়াছে। এখন আমার দু’টি সšতান। একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। মেয়েটি গত ১৪ জানুয়ারীতে ওর মা-র কোল আলোকিত করেছে। এখন ও একটু একটু বুঝতে শিখছে।
আমি যখন অফিস থেকে বাসায় যাই তখন ও আমার কোলে আসার জন ব্যকুল হয়ে উঠে না দেখলে বিশ্বাস করার মত নয়। আমি পাশ দিয়ে এদিক ওদিক গেলে ও আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকেয়ে থাকে। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে থাকে। ওর নাম আমিই দিয়েছি আরিশা।
তখন আমি আরিশাকে কোলে না দিয়ে থাকতে পারিনা। কোলে নিয়ে যখন বুকে নিই তখন “সে এক অদ্ভুত ভাল লাগা।”
এখন বাবা নেই। বাড়ী গেলাম কি না কেউ খোঁজও রাখেনা। শুধুই মনে পড়ে বাবার সেই কথা - "বাবা যখন ছেলে মেয়ে হবে তখন বুঝবা আমরা কেন জেগে থাকি।"

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


