somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষের উপর নারীকে অগ্রাধিকার দিয়েছে ইসলাম:

০৫ ই মার্চ, ২০১২ দুপুর ১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পূর্বের লেখা: একমাত্র ইসলামই দিয়েছে ‌'নারীর সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার'
সম্মান ও মর্যাদায় নারী-পুরুষকে সমান ঘোষণা করেছে ইসলাম:

পূর্ব প্রকাশের পর:
অনেক ক্ষেত্রেই পুরুষের উপর নারীকে অগ্রাধিকার দিয়েছে ইসলাম:
পিতা-মাতার সম্মান ও মর্যাদা বর্ণনার ক্ষেত্রেও ইসলাম নারীদেরকে অগ্রাধিকার ও অধিক সম্মান দিয়েছে। পিতার থেকে মাতার সম্মান ও মর্যাদা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। নিম্নোক্ত হাদীস থেকে যা পরিস্কারভাবে ফুটে উঠেছে।
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال : جاء رجل إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال : يا رسول الله من أحق الناس بحسن صحابتي ؟ قال : أمك ,, قال : ثم من ؟ قال : أمك, قال : ثم من ؟ قال : أمك, قال : ثم من ؟ قال : أبوك . (متفق عليه)
অর্থ: “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে একবার জিজ্ঞাসা করা হলো যে ইয়া রাসূলাল্লাহ! পিতা-মাতার মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি সম্মান ও মর্যাদার হকদার কে?
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, তোমার মা।
সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে?
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, তোমার মা।
সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে?
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, তোমার মা।
এরপর সাহাবী চতুর্থ বার যখন জিজ্ঞেস করলেন যে, তারপর কে?
তখন প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, তোমার বাবা।” (বুখারী ও মুসলিম)
এই হাদীসের দ্বারা এটা পরিস্কার হয়ে গেলো যে, নারী জাতিকে ইসলাম মাতৃত্বের উচ্চাসনে বসিয়েছে। তাদেরকে সম্মান ও মর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন করেছে।

এছাড়াও অনেক হাদীস আছে যেখানে শুধু মাতার কথাই বলা হয়েছে। যেমন এক হাদীসে রাসূল সা. বলেন,
عن معاوية بن جاهمة أنه جاء النبي صلى الله عليه وسلم فقال : يا رسول الله أردت أن أغزو، وجئت أستشيرك ؟ فقال: "هل لك من أم"؟ قال نعم: قال: "فالزمها فإن الجنة تحت رجليها" رواه النسائي ( ৩১০৪ )
অর্থ: হযরত মুয়াবিয়া বিনতে জাহিমা নবীজীর সা. এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যুদ্ধে যেতে চাচ্ছি। আপনার কাছে পরামর্শের জন্য এসেছি। তিনি বললেন, তোমার মা আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে তাঁকে সঙ্গ দাও। কেননা জান্নাত তাঁর দুই পায়ের নিচে।” (সুনানে নাসাঈ, হাদীস নং ৩১০৪)

সমাজে কেউ যেনো নারী জাতির অবমাননা করতে না পারে সেটিও ইসলাম নিশ্চিত করেছে। অন্যায়ভাবে কেউ কোনো নারীকে অপবাদ দিলে তার জন্য শাস্তির বিধান দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে,
وَالَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ ثُمَّ لَمْ يَأْتُوا بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ فَاجْلِدُوهُمْ ثَمَانِينَ جَلْدَةً وَلَا تَقْبَلُوا لَهُمْ شَهَادَةً أَبَدًا وَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ.
অর্থ: “আর যারা সচ্চরিত্র নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে, তারপর তারা চারজন সাক্ষী নিয়ে আসে না, তবে তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত কর এবং তোমরা কখনই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করো না। আর এরাই হলো ফাসিক।” (সুরা আন-নূর: আয়াত ৪)

আমল ও সওয়াবের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষকে সমান করেছে ইসলাম:
এভাবে নারীদেরকে দুনিয়ার জীবনে নিশ্চিত, নিরাপদ করার পর পরকালীন জীবনেও তাদের জন্য কল্যাণ ও মঙ্গলের কথা ঘোষণা করেছে। এক্ষেত্রে পুরুষ-নারী বলে কাউকে আলাদা করা হয় নি। ইরশাদ হয়েছে,
مَنْ عَمِلَ صَالِحًا مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَلَنُحْيِيَنَّهُ حَيَاةً طَيِّبَةً وَلَنَجْزِيَنَّهُمْ أَجْرَهُمْ بِأَحْسَنِ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ.
অর্থ: “যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তারা যা করত তার তুলনায় অবশ্যই আমি তাদেরকে উত্তম প্রতিদান দেব।” (সুরা আন-নাহল: আয়াত ৯৭)
আরো ইরশাদ হয়েছে,
وَمَنْ يَعْمَلْ مِنَ الصَّالِحَاتِ مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى وَهُوَ مُؤْمِنٌ فَأُولَئِكَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ وَلَا يُظْلَمُونَ نَقِيرًا.
অর্থ: “আর পুরুষ কিংবা নারীর মধ্য থেকে যে নেককাজ করবে এমতাবস্থায় যে, সে মুমিন, তাহলে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তাদের প্রতি খেজুরবীচির আবরণ পরিমাণ যুল্মও করা হবে না।” (সুরা নিসা: আয়াত ১২৪)

অন্যত্র আরো ইরশাদ হয়েছে,
أَنِّي لَا أُضِيعُ عَمَلَ عَامِلٍ مِنْكُمْ مِنْ ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى بَعْضُكُمْ مِنْ بَعْضٍ.
অর্থ:- ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের কোন পুরুষ অথবা মহিলা আমলকারীর আমল নষ্ট করব না। তোমাদের একে অপরের অংশ। (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ১৯৫)
সুরা আল আহযাব এর ৩৫নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِينَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِينَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِ وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ أَعَدَّ اللَّهُ لَهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا.
অর্থ: “নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, সিয়ামপালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী পুরুষ ও নারী, আল্ল¬াহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্ল¬াহ মাগফিরাত ও মহান প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন।” (সুরা আহযাব: আয়াত ৩৫)

নারীর অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ও নিশ্চয়তা দিয়েছে ইসলাম সম্মান:
নারী জীবনের প্রত্যেক পর্যায় সম্পর্কে উপরে বর্ণিত সুন্দর ও সুনিপুন ব্যবস্থাপনা দিয়ে ইসলাম নারী জাতির পুরো জীবনটিকেই একেবারে সহজ, সুন্দর, নিরাপদ ও নির্ভাবনার করে দিয়েছে। কন্যা সন্তানের জন্য বিবাহের আগ পর্যন্ত যাবতীয় ব্যবস্থাপনা ইসলাম তার পিতার উপর ন্যস্ত করেছে। বিবাহের মাধ্যমে তার দায়িত্ব অর্পন করেছে স্বামীর উপর। এরপর মাতা হিসেবে তার দায়িত্ব দিয়েছে সন্তানের উপর।
এমন সুন্দর ব্যবস্থা কারো ক্ষেত্রে কোনো পর্যায়ে বিঘিœত হলে সেজন্য আগে থেকেই রিজার্ভ ফান্ডেরও ব্যবস্থা রেখেছে পিতা-মাতার কাছ থেকে ওয়ারিশ হিসেবে প্রাপ্ত সম্পদ, স্বামীর কাছ থেকে প্রাপ্য মোহরানা এবং নিজের উপার্জিত যাবতীয় সম্পদ স্বাধীনভাবে ব্যবহারের অধিকার দিয়েছে। স্বামীদের উপর নিজ স্ত্রীদের জন্য মহরানা প্রদান বাধ্যতামূলক করে ঘোষণা করেছে,
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً.
অর্থ: “আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও।” (সূরা নিসা: আয়াত ৪)
ইসলাম নারীর আর্থিক স্বাবলম্বীতা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ প্রয়োজনে শরীয়তের সীমা ঠিক রেখে নারীকে কর্মস্থলে যাওয়ারও অনুমতি দিয়েছে। ইসলাম নারীর নিজের প্রয়োজন পূরণের দায়িত্ব পিতা, স্বামী, সন্তানের উপর ন্যস্ত করলেও; নারীর নিজের আয়, নিজের সম্পত্তি কোনো ব্যবসায় বিনিয়োগ করে সেখান থেকে অর্জিত মুনাফা ইত্যাদির উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও স্বাধীনতা দিয়েছে নারীর হাতে। এক্ষেত্রে জোর করে অন্য কারো জন্য সম্পদ গ্রাস করাকেও হারাম করেছে।

চলবে...
পরবর্তী পর্ব: পৈত্রিক সম্পত্তিতেও নারীর অধিকার নিশ্চিত করেছে ইসলাম
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×