somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী: একা চলার বিবেক-বুদ্ধি নেই? // ময়ূরী বড়ুয়া প্রজ্ঞা

০২ রা মে, ২০১৭ সকাল ১১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাদের নারীদের ব্যক্তিত্ব ও একলা চলার স্বাধীনতা কতটুকু তা লক্ষ্য করলে বুঝা যায়, অধিকাংশ নারী স্বাধীন নয়, অন্যের ছায়া হয়ে আছে। অন্যের ছায়া হয়ে অল্পবিস্তর বিচরণ করে। একজন পুরুষ সাবলীল ভাবে চলাফেরা করতে পারে নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করতে পারে, তাহলে একজন নারী কেন সেরূপ চলাফেরা করতে পারবে না,? কেনো নিজের ইচ্ছেমতো কাজ করতে পারবে না? কেনো সবসময় তাকে মন ছোট করে থাকতে হবে? কেনো সবসময় তার স্বাধীনতায় ও তার ইচ্ছের উপর হস্তক্ষেপ করা হবে? নারী কী স্বতন্ত্র ব্যক্তি নয়? একলা পথ চলার বিবেক বুদ্ধি কী তার নেই? তাকে কেনো বাচ্চাদের মত পাহারায় রাখা হবে? খুব সন্দেহজনক নারী? জ্ঞানবিজ্ঞান, তথ্যপ্রবাহের উন্মুক্ত যুগে এসেও কীভাবে নারীর উপর টিকে থাকে পশ্চাৎপদ শিকলের টান? এ যে মানুষ হিসেবে নারীর ব্যক্তিসত্ত্বার অপমান। এই অপমান মেনে নেয়ার মাঝে ফুটে উঠে আমাদের চারপাশের নারীর প্রথাগত শুদ্ধতা, এমনটা ভাবতে অভ্যস্ত সমাজ, তাই চতুর্দিকে ভয় সৃষ্টি করে রেখেছে নারীর জন্য। সমাজসৃষ্ট এই ভয়কে জয় করে নারী পরিপূর্ণ ব্যক্তিমানুষের ভূমিকা অবতীর্ণ হোক, কেউ না চাইলেও নারী নিজেকে মূল্যায়ন করতে শিখুক। নিজেকে নিজে উদ্ধার করুক, নিজেই নিজের মাঝে আশ্রয় গড়ুক।

আমাদের দেশে বহু শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত নারী আছে, তাদেরকে চোখেও পড়ে খুব, কিন্তু ব্যক্তি হিশেবে পরিপূর্ণ স্বাধীন নারীর দেখা হাতেগোনা। এর কারণ কী? নারী বিধিনিষেধের চার দেয়ালে ছোট থেকে বড় হয়। নারী তাই হতে পারে, যা তাকে হতে দেয়া হয়। নারী নিজের ইচ্ছেমতো তেমন কিছুই হতে পারে না। ইচ্ছেমতো কিছু হবার আয়োজনে, অধিকারে সে আজো প্রতিনিধিত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে নি। কিছু-কিছু ক্ষেত্রে নারী বিধি-নিষেধ ডিঙ্গিয়ে যোগ্য হয়ে উঠলেও থাকে পিছিয়ে। পিছিয়ে থাকার কারণ নারীর গড়ে উঠার শুরু থেকে যে বাধা ও ভয় দেখিয়ে তাকে মানসিকভাবে দমন করা হয়, সেই দমিত মনের জড়তা কাটিয়ে উঠতে না পারা। শুধু তাই নয় আমাদের পরিবার-সমাজ-রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রগুলোতে নারীর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব প্রকট।
সবার আগে মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। সমাজের পরিবর্তন মানুষের মানসিকতার উপর নির্ভর করে। বেশিভাগ মানুষের চিন্তা সুন্দর হলে প্রতিষ্ঠিত হয় সুন্দর সমাজ। বেশিভাগ মানুষের চিন্তার অসুন্দর হলে সমাজ অসুন্দর হয়। আমাদের সবার সুন্দরের চর্চা করা উচিৎ। সুন্দরের চর্চাই হতে পারে অনুসরণীয় ধম্ম ও সমাজনির্মাণ।
আমাদের দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পুরুষের চেয়ে নারীর অংশগ্রহণ বেশী। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, সংসদের স্পিকার সবাই নারী, তবুও নারীবান্ধব নয় আমাদের চারপাশ, কারণ নারী গুরুত্বপূর্ণপদে থাকলেও প্রতিষ্ঠানসমূহে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতারই চর্চা হয়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সমস্ত মানুষকে শুধু মানুষ হিশেবে এবং যোগ্যতা অনুসারে দেখতে হবে, এভাবে দেখার অভাব বা বিপরীত চর্চাকেই আমি পুরুষতান্ত্রিকতা বলছি।

পৃথিবীতে কেউ পরাধীন হয়ে জন্মগ্রহণ করে না। হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান হয়েও জন্মগ্রহণ করে না, নারী- পুরুষ আলাদা দর্শন নিয়েও জন্মগ্রহণ করে না। জন্মের পরেই আমাদের এসবে অভ্যস্ত করা হয় মাত্র। আমরা প্রত্যেকেই স্বাধীন হয়েই জন্ম জন্মগ্রহণ করি, জন্মের পরে আমাদেরকে পরাধীন করা হয় বিভিন্ন সংস্কার-মতাদর্শ মাথায় ঢুকিয়ে। এথেকে মুক্তি অবশ্যই আসবে যদি মানুষ সুদৃঢ়ভাবে নিজেকে উন্মুক্ত করে এবং প্রথাবদ্ধ নিরাপদভাবনায় আবদ্ধ না থেকে নিজের প্রচেষ্টায় দায়িত্ব নিয়ে বের হয়ে আসে জীবন আর জিজ্ঞাসার পথে।

মানুষকে ইচ্ছাকৃতভাবে পরাধীন করে রাখা হয়েছে৷ কিন্তু মানুষ স্বাধীন হয়েই জন্মগ্রহণ করে। স্বাধীনতার অর্থ হল স্ব-অধীন, অর্থাৎ আমি অপর কারো অধীন বা বাধ্যগত নই। আমরা কেউ কারো অধীন বা বাধ্যগত নই। এই সহজ সত্য অনুধাবন করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে মৈত্রীপূর্ণ পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রেখে। মানুষ একে অন্যের ক্ষতি চিন্তা ছেঁড়ে দিলেই হয় নিরাপদন সুন্দর সমাজ। নিরাপদ সুন্দর সমাজ গড়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা সবাইকে সমমানুষ হিশেবে দেখার দৃষ্টি অর্জন না করা। এব্যাপারে সবার সুভাবনা প্রত্যাশা করছি। বিশেষভাবে নারীদের, শুধু পারিবারিক ও ধর্মীয় প্রচলিত রীতিতে নয় নিজের চোখে দুনিয়া দেখুন, নিজের কণ্ঠে বলুন কথা।

সকল প্রাণী সুখী হউক।
মানুষের মুক্তির লড়াইয়ে গৌতমী সাময়িকী’র অভিযাত্রা অব্যাহত থাকুক।

লেখাটি গৌতমী সাময়িকী 'সপ্তম সংখ্যা' থেকে নেয়া।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৭ সকাল ১১:৫৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×