somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রম্য : ফুলসজ্জা ও গ্যামাক্সিন

২৩ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এমন জাঁকজমকের বিয়ে দেখেনি অনেকে। বিয়ে নয় আসলে বউভাতের রিসেপশান। প্রতীকের বাবার কোল্ড স্টোরেজ আছে। দেদার পয়সা। প্রতীকের বউভাতে তাক লাগিয়ে দিলেন সবাইকে। বিশাল লজকে একটা জাহাজ বানানো হয়েছে ফুল আর আলো দিয়ে। ওপরে একটা রিমোট কন্ট্রোল হেলিকপ্টার চক্কর মারছে ফুলের পাপড়ি ফেলতে ফেলতে। ডিজে, আতসবাজি, গোটা কুড়িক বিভিন্ন লোভনীয় খাবারের স্টল। আর খাওয়া -দাওয়ার তো তুলনা নেই।
.
খাওয়ার পাট চুকতে চুকতে রাত একটা বেজে গেল। তারপর চলল ফটো সেশান। আর প্রতীক অপেক্ষা করছে কখন তার প্রকৃত ফুলশয্যা শুরু হবে। কত রকম নিয়ম কানুন, সব চুকতে চুকতে আরও আধ ঘন্টা গেল। লজে গোটা চারেক বড় ঘর। তাতে সব আত্মীয়স্বজনের জন্য ঢালাও বিছানা পাতা আছে। তারা সব শুয়ে পড়ল। তারপর বহু প্রতীক্ষিত সেই সময় এসে গেল। প্রতীক ফুলশয্যার ঘরে গিয়ে ছিটকিনি তুলে দিল।
.
প্রতীকের বাবা বাড়ি চলে গেছেন আগেই। বাড়ি লজ থেকে বেশ খানিকটা দূরে। তাই অনেক আগেই চলে গেছেন । আজ বড় তৃপ্ত তিনি। সবাই ব্যবস্থাপনা দেখে, আড়ম্বর দেখে ধন্য ধন্য করছে।
.
প্রতীক একটু পরেই দরজা খুলে বেরোল। লজের ম্যানেজারের ঘর নীচের তলায়। সেখানে গিয়ে ম্যানেজারকে ডাকল। ম্যানেজার অঘোরে ঘুমাচ্ছিল। সময় লাগল তাকে তুলতে।
বরকে দেখেই ম্যানেজার ঘাবড়ে গিয়ে বলল, "কী হয়েছে স্যার?"
রাগে অগ্নিশর্মা প্রতীক চেঁচিয়ে উঠল, "শালা থার্ডক্লাস লজ।"
ম্যানেজার বলল, "কেন স্যার? আমাদের লজ নিয়ে আজ পর্যন্ত কেউ কোনও কমপ্লেন তো করেনি স্যার।"
-- "আমি করছি। লজ পিঁপড়েতে ভর্তি। লজ নয় আমার ফুলশয্যার খাট।"
ম্যানেজার হাই তুলে বলল, "সে স্যার লজের কোনো দোষ নেই। কিছু কিছু ফুলে মধু থাকে, খুব মিষ্টি হয় স্যার। আপনাদের ফুলেই পিঁপড়ে ছিল মনে হচ্ছে। ওরে বাপরে বাপ, ফুল বলে ফুল। এত ফুল দিয়ে খাট সাজাতে আমি জন্মেও দেখিনি স্যার।"
-- "লেকচার থামিয়ে, একটা পিঁপড়ে মারার স্প্রে- ফ্রে দিন। হিট আছে?"
-- "হিট মানে কালা হিট লাল হিট তো? কোনওটাই নেই স্যার। আর এই রাত দুটোয় দোকান তো খোলা পাওয়া যাবে না যে আনিয়ে দেব। মশার ধূপ আছে।"
প্রতীকের গলা আরও চড়ল, "ইয়ারকি পেয়েছেন? মশার ধূপে পিঁপড়ে যাবে? যা হোক ব্যবস্থা করুন। আমার নতুন বউ দাঁড়িয়ে আছে। সারা বিছানা লাল পিঁপড়েতে থিকথিক করছে।"
.
ম্যানেজার জানে এরা খুব বড়লোক পার্টি। এমন এলাহি আয়োজন, এমন পয়সা উড়াতে সে আগে দেখেনি।
বলল, "আপনার ফুলশয্যার খাটটা যা সাজিয়ে ছিল না? সিনেমার মতো। আমি একবার গিয়ে দেখে এসেছি। আহা এমন ঘটা করে বউভাত এ লজে আগে কখনও হয়নি স্যার।"
--" এসব ক্যালানে মার্কা কথা ছাড়ুন তো। লজে কি গ্যামাক্সিনও নেই?"
মাথা চুলকে ম্যানেজার বলল, "না স্যার গ্যামাক্সিন নেই।"
প্রতীক রাগে ফেটে পড়ল। বলল, "তাহলে এই ফুলশয্যার রাতটা আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাটিয়ে দেব?"
ম্যানেজার বলল, "হুম, সব ঘরেই তো আপনাদের লোকেরা আছে। খাওয়ার ঘরে বা হলঘরে চেয়ার পাতা আছে কিন্তু বিছানা তো নেই। এক কাজ করতে পারেন স্যার। আমার ঘরটা ছেড়ে দিচ্ছি। এখানেই আপনারা ওই ফুলশয্যাটা সেরে ফেলুন।"
প্রতীক তাকিয়ে দেখল, একটা সিঙ্গল নড়বড়ে খাট, তারওপর একটা তেলচিটে বহুকাল না ধোওয়া চাদর পাতা। এখানে ফুলশয্যা? ইম্পসিবল।
কিন্তু বউ ওদিকে একা দাঁড়িয়ে আছে। এছাড়া আর কোন উপায়ও নেই। সব আত্মীয়রা টের পেয়ে গেলে আর এক কেলো হয়ে যাবে। সবাই এমন ধুমধাম কস্মিনকালেও দেখেনি বলে কত আলোচনা করছে। তখন হাসাহাসি করবে।
অগত্যা ম্যানেজারের বিছানাতেই ফুলশয্যার রাতটা কাটিয়ে, ভোর হওয়ার আগে ওপরের ঘরে চলে যেতে হবে।
এত খরচা, এত জাঁকজমক সব বেকার হয়ে গেল শুধুমাত্র একটা হিট বা গ্যামাক্সিনের জন্য।
গজরাতে গজরাতে প্রতীক ওপরে গেল নববধূকে নীচে নিয়ে আসতে...
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:৩৮
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×