যে কোনও বন্ধ দরজা খোলা বেন্টুর বাঁ হাতের খেল। দোতলার ওপর ছাদ ঘর। দরজাটা খুলতে পারলেই কেল্লা ফতে। এ বাড়ি বন্ধ আছে কদিন। দিনের বেলা রেইকি করে দেখেছে বেন্টু। বাড়ির সবাই ঘরে তালা বন্ধ করে কোথাও বাইরে গেছে। শহরের এক প্রান্তে এই বাড়িটা কোনো পয়সাওয়ালা লোকের। আজ বেশ বড়ো দাঁও মারা যাবে। ব্যাগের যন্ত্রপাতি বের করে পাঁচ মিনিটেই ছাদের দরজা খুলে বাড়িতে ঢুকে পড়ল বেন্টু। অনেকগুলো ঘর। অন্ধকারে টর্চ জ্বেলে। আরও কয়েকটা ঘরের দরজা খুলে ফেলল। কেউ নেই ঘরে।
.
কী কী নেওয়া যায়, ভাবতে ভাবতে নীচে নামল। হঠাৎ একতলার প্যাসেজে একটা কিছু পায়ে লাগল বেন্টুর। টর্চ মেরেই অজ্ঞান হয়ে যায় আর কি! একটা বাচ্চা মেয়ে মেঝেতে পড়ে আছে।
.
সি পি ঘোষ বড়ই ভ্রমণপ্রিয় মানুষ। একটি বেসরকারি সংস্থায় উচ্চপদস্থ অফিসার। প্রতি বছর নিয়ম করে সপরিবারে বেড়াতে যান অন্তত দুবার। এবার এসেছেন কাশ্মীর। আজই অনেকক্ষণ ধরে ডাল লেকে শিকারায় করে ভেসে বেড়িয়েছেন। চশমা-শাহিতে অনেকটা সময় কাটিয়েছেন। সে এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা! আজ শরীর শ্রান্ত কিন্ত মন তৃপ্ত। হঠাৎ বাড়ির কথা মনে পড়ে গেল। সব ঠিকঠাক আছে তো? নতুন কাজের বাচ্চা মেয়েটাকে ঘরে তালাবন্ধ করে এসেছেন। তবে প্রচুর খাবার রেখে এসেছেন। সমস্যা একটাই, মেয়েটা বড় ভীতু। ভয় পেয়ে কিছু....?..না না এসব অলুক্ষুণে কথা কেন ভাবছেন তিনি!
.
একটু ধাতস্থ হয়ে বেন্টু মেয়েটাকে দেখল। মরে গেছে নাকি? নাহ্ বেঁচে আছে মনে হয়। খুব ধীরে ধীরে শ্বাস বইছে।
দেখে মনে হচ্ছে কাজের মেয়ে। একে ঘরে বন্ধ করে মালদারেরা বোধহয় বেড়ু করতে চলে গেছে। শাল্লা। এরকম আগেও শুনেছে। কাগজে পড়েছে।
.
মালপত্র হাতিয়ে তাড়াতাড়ি কেটে পড়তে হবে।
আর একবার মেয়েটার মুখে টর্চ ফেলল বেন্টু। মনে হচ্ছে মেয়েটা অনেকদিন খায়-ফায়নি। একা ঘরে ওইটুকুন মেয়ে থাকতে পারে? শালা ভয়েই তো পটল তোলার কথা। আচ্ছা, বেন্টু না হয় চোর, কিন্তু এরা তো কত্ত পড়ালিখা করা ইমানদার লোক । এরা এমন কাজ করে কী করে?
.
কেন কে জানে, হঠাৎ চড়াক করে মাথাটা গরম হয়ে গেল বেন্টুর। যে শালারা ওই অতটুকুন বাচ্চা মেয়েকে ফেলে বেড়াতে যেতে পারে তাদেরকে একটু সবক্ শেখাতে হবে। হব্বেই। আর মেয়েটাকে যদি বাঁচানো যায়..
শোবার ঘর থেকে ঝটপট অনেকগুলো বালিশ বিছানা নিয়ে ছাদে রেখে এলো বেন্টু। নীচে নেমে ল্যান্ডফোন থেকে থানায় ফোন করল। থানার নম্বর বেন্টুর মুখস্থ। ফায়ার ব্রিগেডে ওরাই জানিয়ে দেবে। তারপর বিছানায় দেশলাই মেরে আগুন জ্বালিয়ে, বাড়ির পেছন দিক দিয়ে নেমে রাস্তায় বেরিয়ে এলো।
কয়েক মিনিটের মধ্যে হুটার- ঘন্টা বাজিয়ে দমকলের ইঞ্জিন চলে এলো।
.
... পাড়ায় শোরগোল পড়ে গেছে। সবাই বাড়ির সামনে এসে জড়ো হল। ছাদে বিছানা-বালিশ দাউদাউ করে জ্বলছে।
দমকলের লোকেরা দরজা ভেঙে আগুন নেবাল। তারপর সবাইকে তাজ্জব করে দিয়ে বাচ্চাটাকে বের করে আনল। পুলিশ এল। বাচ্চাটাকে হাসপাতালে পাঠানো হল। বাড়ি সীল করে দিল তারা।
.
বেন্টু ভিড়ের মধ্যে মিশে সব দেখল। তারপর একটা বিড়ি ধরিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিল। ধুর আজ রাতটা বেকার গেল।
তক্ষুনি বাচ্চা মেয়েটার মুখটা ভেসে উঠল। নাহ্ বেকার যায়নি...
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১:৪৩