.
ব্যাচ বলে কিছু নেই। যে আসছে তাকেই বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে খেতে।
এক মহিলা ব্যাপক সচেতন। মাস্ক নামিয়ে ফিস ফ্রাইয়ে কামড় দিয়েই ফের মাস্ক তুলে দিয়ে ফিস ফ্রাই চিবাচ্ছেন। আবার নামাচ্ছেন আবার তুলছেন। গোলাপি মাস্ক তেল ঝোল মেখে সোনালি হয়ে গেছে।
আবার উল্টো ছবিও আছে। এক খুব বয়স্ক লোক মাস্ক না পরেই এসেছেন। ভজহরিদা তাঁকে জিগ্যেস করলেন, "কী দাদু শরীর ঠিক আছে তো?"
বুড়ো বললেন, "একদম ফাসক্লাস। সান্যাল আমাকে একা নেমন্তন্ন করে খুব ভাল করেছে, বুঝলে? ছেলে-বৌমা থাকলে এখন, 'এটা খেও না ওটা খেও' না করে মটকা গরম করে দিত। অনেক দিন পর শান্তিতে খেতে পারব।"
.
বিয়ে বাড়িতে এক আধজন এমন পাব্লিক থাকবেই, যে কিছু না কিছু নিয়ে অভিযোগ করবে।
এইরকম এক লোক খাওয়া শেষে যেতে যেতে থমকে দাঁড়িয়ে বললেন, "সব আইটেমগুলোই ঠিকঠাক ছিল শুধু পনিরটা খুব একটা গরম ছিল না। এই সময় বুঝতেই পারছেন ঠান্ডা কিছু খাওয়া হেভি রিস্কি। তাই পনিরটা খাইনি।"
ভজহরিদা বললেন, "মিষ্টি? মিষ্টি খেয়েছেন?"
উনি বললেন, "হ্যাঁ তা খেয়েছি খান কতক। ওহ্ কলাকাঁদটা মার্ভেলাস ছিল।"
ভজহরিদা বলল, "বেশ বেশ। মিষ্টিগুলো তাহলে গরমই ছিল!"
লোকটা ভজহরিদার গুগলিতে বোল্ড হয়ে গিয়ে বললেন, "না মানে... মিষ্টি তো ঠান্ডাই ছিল।"
লোকটা চলে যেতে ভজহরিদা বলল, "শালা কবজি ডুবিয়ে খেল আর যাওয়ার সময় ভাবল ঠান্ডা ফান্ডা বলে একটু চুলকে দিয়ে যাই। নিন্দে না করলে কিছু লোকের হজমের প্রবলেম হয়!"
.
নিমন্ত্রিতদের খাওয়া শেষ। বাড়ির লোকেদের সঙ্গে বসে আমরাও খেয়ে নিলাম। খেয়ে নিয়ে বাইরে বেরোলাম। দেখি মলিন পোশাক পরা দুটো ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। বয়স বছর ষোলো-সতেরো হবে।
একটা ছেলে বলল, "কীগো খাবার বাঁচেনি? পাব না কিছু? কদ্দিন ভাল খাবার খাইনি।"
অল্প লোকের জন্য খাবারের আয়োজন। কিছুই তেমন বাঁচেনি।
ভজহরিদা আমাকে বলল, "একটা হাঁড়িতে বিরিয়ানি সরানো ছিল না?"
আমি বললাম, "হ্যাঁ। বাড়ির লোকেরা কাল খাবে বলে আগেই তুলে রেখেছে।"
ভজহরিদা বলল, "দাঁড়া হাঁড়িটা নিয়ে আসি। আজ তো সবাই গলা অবধি খেলো, আর কাল খেয়ে কাজ নেই।"
হাঁড়ি, প্লেট এনে ভজহরিদা এক পাশে জায়গা করে ওদের দুজনকে বসাল। প্লেটে ঢেলে দিল বিরিয়ানি।
.
সান্যালদা, যাঁর মেয়ের বিয়ে, এসে সব দেখে বললেন, "বড় জামাই ভেবেছিল ওই সরিয়ে রাখা বিরিয়ানিটা কাল খাবে। আর তোরা এদের খাইয়ে দিলি?"
ভজহরিদা বলল, "এসে এমন করে চাইল, তাই ভাবলাম খাক। দেখো সবচেয়ে তৃপ্তি করে ওরাই খাচ্ছে কিন্তু!"
বড় জামাইয়ের সরিয়ে রাখা বিরিয়ানি দুই হাভাতেকে খাইয়ে দেওয়ার ফলে বড় জামাইয়ের বাসি বিরিয়ানি খাওয়ার সাধ ঘচাং হয়ে যাওয়ায় সান্যালদা যে খুবই বিরক্ত হয়েছেন সেটা তাঁর আর কোনও কথা না বলে দুম দুম করে চলে যাওয়ায় বোঝা গেল।
আমার খারাপ লাগল। ভজহরিদা নির্বিকার। মুগ্ধ হয়ে ছেলেগুলোর খাওয়া দেখছে আর প্লেট খালি হলেই হাঁড়ি থেকে প্লেটে বিরিয়ানি ঢেলে দিচ্ছে।
.
দুই কিশোর মিলে পরমানন্দে এক হাঁড়ি মানে প্রায় চার-পাঁচজনের বিরিয়ানি সাল্টে দিল।
ওদের খাওয়া আর ওদের খাইয়ে ভজহরিদার উৎফুল্ল মুখটা দেখতে দেখতে আমার মনে হল, পাড়ায় পাড়ায় এখনও আছে ভজহরিদার মতো কিছু বেহায়া, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো পরোপকারী মানুষ... যারা সমাজকে অবিরত স্যানিটাইজ করে চলেছে স্বার্থপরতা-ভাইরাস থেকে...
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১:০৩