somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবীটা আসলে কারা চালায় ?

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিল্পপতিরা ভাবেন তারা এই পৃথিবী চালান, অন্যদিকে রাজনীতিবিদরা, আর্মির জেনারেলরা, বৈজ্ঞানিকরা, ধর্মগুরুরা ভাবেন তারাই এই পৃথিবী চালান। ভাবতেই পারেন। কিন্তু একটা মজার কথা আছে। সেটা হল এই দুনিয়া চালায় স্পাইরা আর সিক্রেট সার্ভিসেসের লোকেরা।
অবাক হবেন না। একটু অন্যরকম ভাবে বলি। আমরা জানি অ্যামেরিকা পৃথিবীর সবচাইতে বড় শক্তিধর একটি দেশ। কিন্তু কেন অ্যামেরিকা এত শক্তিশালী দেশ? কেউ বলবেন ব্যবসা, আর্থিক ক্ষমতা, কেউ বলবেন মিলিটারি পাওয়ার, কেউ বলবেন সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। সবকটা কথাই আংশিক ভাবে সত্যি হলেও, অ্যামেরিকার আসল শক্তি সিক্রেট সার্ভিসের ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্টে।
পেন্টাগনে, সিআইএর সিক্রেট ডিজিট্যাল আর্কাইভে লাখ লাখ পেটাবাইটে সযত্নে সাজানো রয়েছে এই পৃথিবীর প্রায় প্রতিটা দেশের রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, মিলিটারী লিডার, বিজ্ঞানী, ব্যুরোক্রেসির, অ্যাকামেডিশিয়ানদের যত রাজ্যের গোপন তথ্য। টেলিফোনে কথার ট্রান্সক্রিপ্ট, হোটেল রুম ভিডিও, বেডরুম-ইন্টিমেসি শটস, ফাইন্যান্সিয়াল ট্র্যাঞ্জ্যাকশন ডিটেইলস, আউটডোর মিটিং ভিডিও, ফটোগ্রাফ, হোটেল রেজিষ্টার রেকর্ডস। আরো কত কিছু, তা বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু এত কিছু কেন? উত্তর - আনলিমিটেড হিউম্যান কন্ট্রোল এর জন্য।
আপনি রাজনীতির লোক হন বা সাধুসন্ত, আপনি কিন্তু সমাজবদ্ধ জীব। হয়ত আপনার জীবনে কিছু দুর্বল জায়গা আছে বা ছিল। বা আপনি কোন অন্যায় করেছিলেন কোনদিন, বা এখনও করে চলেছেন। তার সাথে আপনার সোশ্যাল ইমেজ আছে, ফলোয়ার আছে, ফ্যামিলি আছে, রেপুটেশন আছে। একটি ছোট চ্যাট, একটি তিরিশ সেকেন্ডের ভিডিও বা টেলিফোন কনর্ভার্সেশনের অডিও আপনাকে আপনার অরবিট থেকে ছুঁড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে পারে এক মুহুর্তে। তাই কোটি টাকার ঘুষ যা করতে পারবে না, এরকম একটি ফাইল আপনাকে মুহূর্তে এক অদৃশ্য হাতের কাঠপুতলি বানিয়ে দেবে।
এই ধরুন এক দেশের মহিলা প্রধানমন্ত্রী, সিঙ্গেল। কিন্তু তিনি শারীরিক ভাবে অন্তরঙ্গ তাঁর ফিটনেস ইন্সট্রাক্টর বা যোগা গুরুর সঙ্গে। আর তাঁদের এক অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও তুলিয়ে নিল সিআইএ বা কেজিবি। কারুর সাথে ইন্টিমেট হওয়া ব্যাপারটি মোটেই কোন ক্রাইম নয়। কিন্তু এর সোশ্যাল আর পলিটিক্যাল ইম্প্যাক্ট সাংঘাতিক। তাই এরপর যতদিন উনি ক্ষমতায় থাকবেন, ওই দেশের পলিসি মেকিং এর ওপর পুরো কন্ট্রোল থাকবে যাদের হতে ওই ভিডিওটি আছে।
এই সব সিক্রেট ফাইল, ইনফরমেশন আবার ট্রেডিং ও হয়। সিআইএ আর এম আই সিক্স এর মধ্যে চুক্তি আছে। চুক্তি আছে "ফাইভ আইস" এর মধ্যেও। এরা একে অপরকে সাহায্য করে নিজদের মধ্যে নানা তথ্য আদান প্রদান করে। বার্টার সিস্টেম চলে। আমি এটা দিলাম তো ওটা পেলাম। "সিস্টেম অফ গ্রাতিস" ও চলে, একে অপরকে বিপদে সাহায্য করে থাকে। সিক্রেট সার্ভিসের লোকেরা আন-অফিসিয়ালিও একজন অন্যজনকে হেল্প করে।
ভারতের পলিটিক্যাল, অ্যাকাডেমিক, মিডিয়া আর ব্যুরোক্রেসির সার্কেল অনেকদিন ধরেই সাংঘাতিক ভাবে কম্প্রোমাইজড। সবাই অবশ্যই কম্প্রোমাইজড নন, তবে একটা বড় অংশ তো বটেই। এই অদৃশ্য হাতের কারসাজিতেই ভারতে ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিন আবিষ্কার হবার আগেই তার আবিষ্কর্তা জেলে চলে যান, একটি বিশেষ দেশ ভারত থেকে জলের দরে চা পাতা কিনে যায় বছরের পর বছর, চাঁদে রকেট পাঠানো ভারতে একটিও ভাল অ্যাসল্ট রাইফেল তৈরী হয় না, ক্যানাবিস এর ওপর মেডিক্যাল অ্যাপ্লিকেশন এর রিসার্চ বন্ধ করে ক্যানাবিস কে নার্কটিক সাবস্টান্স এর লিস্টে ঢোকানো হয়। লিস্ট এন্ডেলস। কত আর বলব?
কিন্তু যেন একটু একটু করে বদল দেখা যাচ্ছে। এই দু দিন আগেই ইউএনজএ'র জেনারেল অ্যাসেম্বলি সেশনে জয়শঙ্কর এর বক্তৃতাটা শুনে দেখুন একটি বার। জাস্ট ধুয়ে দিয়েছেন। জি টোয়েন্টিতে আফ্রিকান নেশন্স এর প্রতিনিধিত্ব একেবারেই চায়নি গোরারা। কিন্তু ভারত চেয়েছিল, তাই আফ্রিকা এসেছে। সাহেবরা চোয়াল চেপে, মুখে প্ল্যাস্টিক হাসি এনে হ্যাঁ বলেছে। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা তো আছেই। মোদীজি আর ওঁর টিম প্রায় রোজই কেউটের লেজ দিয়ে কান চুলকাচ্ছেন আজকাল, কেউটে তাও চুপ করেই আছে, কামড়াচ্ছে না। চীনের কথা টানবেন না, কারণ চীন ফ্যাক্টর হলেও এতটা নয়।
এর একটা বড় কারণ মোদীজি একজন স্বাধীন মানুষ। নিজের দেশের স্বার্থে কোনদিন কারুর সাথে কোন আপস করেন না। এই মানুষটির পিছুটান তো নেইই, ওঁর যে ফাইল সিআইএ মেইটেইন করে সেখানেও "জিরো বাইট" পড়ে রয়েছে। যোগী আদিত্যনাথেরও একই রকম, "জিরো বাইট" ফাইল। এঁদের কন্ট্রোল করা যায় না, কারণ এরা কেউই কম্প্রোমাইজড নন।
নিউ রিপাবলিক পত্রিকার এডিটর লিও উইসেলটিয়ারের একটি কোট আমার খুব প্রিয়। সেটি হল - "Incorruptibility by money is the old story... Now it's incorruptibility by media." সেটা ওঁরা পেরেছেন। এঁদের একজন গেরুয়া পরেন, অন্যজন পরেন না। কিন্তু গেরুয়া যাঁর অন্তরে, যিনি সর্বত্যাগী, শুধু দেশকে নিজের হৃদয়ে স্থাপন করে নিঃশঙ্ক চিত্তে কাজ করে চলেছেন, তিনি বাইরে কি পরলেন তাতে কি খুব একটা এসে যায়? এঁরা যে আছেন, একজন সাধারন নাগরিক হিসেবে একে ঈশ্বরের আশীর্বাদ ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না।

(লিখেছেন আমার বন্ধু শান্তনু সোম)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১:০৩
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কবিতাঃ হে বলবান

লিখেছেন ইসিয়াক, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৪০

কে আছিস বলবান!
হ্ আগুয়ান।
দে সাড়া দে ত্বরা।
ধরতে হবে হাল,বাইতে হবে তরী, অবস্থা বেসামাল।

জ্বলছে দেখ প্রাণের স্বদেশ
বিপর্যস্ত আমার প্রিয় বাংলাদেশ।
মানবিকতা, মূল্যবোধ, কৃষ্টি, সভ্যতা, সংস্কৃতির বাতিঘর।
সর্বত্র আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুলাইয়ের তথাকথিত আন্দোলন পুরোটা ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:১৬

জুলাইয়ের তথাকথিত আন্দোলনের পুরোটা ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন

লালবদর নীলা ইস্রাফিল এখন বলছেন ও স্বীকার করছেন যে—
জুলাইয়ের সবকিছুই ছিল মেটিকিউলাস ডিজাইন।
মুগ্ধের হত্যাও সেই ডিজাইনের অংশ।

অভিনন্দন।
এই বোধোদয় পেতে দেড় বছর লাগলো?

আমরা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

তারেক ৩০০০ কোটী টাকার লোভেই দেশে ফিরেছে

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১০



তারেক এসেছে, বলেছে, I have a plan; তারেকের প্ল্যানটা কি? এই মহুর্তে তার প্ল্যান হতে পারে, নমিনেশন বাণিজ্য করে কমপক্ষে ৩০০০ কোটি টাকা আয়। ৩০০ সীটে গড়ে ১০... ...বাকিটুকু পড়ুন

বই : টক অব দ্য টাউন

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:০৮

বই : টক অব দ্য টাউন



একটি বই হঠাৎ করে এতটা আলোচনায় আসবে আমরা কি ভাবতে পেরেছি ?
বাংলাদেশের মানুষ অতি আবেগপ্রবন , বর্তমান রাজনৈতিক অস্হিরতার মধ্যে ও
বাঙালীর স্বভাবসুলভ অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×