রক্তের বিকল্প উদ্ভাবনের মতো যুগান্তকারী আবিষ্কারের এ খবরটি প্রকাশিত হয় ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্সের প্রসিডিংসে, তাদের ২০০৪ সালের ১৯ এপ্রিলের অনলাইন সংস্করণে। ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের অনুদানে পরিচালিত প্রকল্পটির গবেষক দলের প্রধান ছিলেন পাটের জিনোমের নেতৃত্বদানকারী গবেষক ড. মাকসুদুল আলম। মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক মাকসুদুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, 'তার দল আদি অণুজীবের মধ্যে প্রটোগ্গ্নোবলিন বা অক্সিজেনবাহী প্রোটিন আবিষ্কার করেছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, আবিষ্কৃত এ প্রোটিনই মানব দেহস্থিত হিমোগ্গ্নোবিনের পূর্বসূরি। হিমোগ্গ্নোবিন হলো রক্তের মধ্যকার এক প্রকার প্রোটিন, যা ফুসফুস থেকে অক্সিজেন শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে পেঁৗছে দেয়। সম্ভবত আদিতে হিমোগ্গ্নোবিন কেবল মারাত্মক বিষাক্ত গ্যাসগুলোকেই শোধন করত এবং ক্রমেই তা মানবদেহে অক্সিজেন সংবাহকের ভূমিকা নেয়।'
আদি অণুজীবে অক্সিজেনবাহী প্রোটিনের উপস্থিতি
গবেষক দল দুটি ভিন্ন প্রজাতির আর্চিয়ার মধ্যে দুটি আদি প্রটোগ্গ্নোবলিনের সন্ধান পেয়েছে। আর্চিয়া হলো এক বিশেষ অণুজীবের দল। তাদের বংশোদ্ভূত হয়েছে অনেক আগে_ সেই একই পূর্বসূরি ব্যাকটেরিয়া এবং ইউকারিওটিক থেকে। এই ইউকারিওটিক হলো এমন ধরনের কোষ যারা নিউক্লিয়াসের মধ্যে ডিএনএ ধারণ করে। আমরাসহ আধুনিক জীবদের উদ্ভব ঘটেছে এর থেকে। বহু প্রজাতির আর্চিয়াও এদের মধ্যে রয়েছে। এমনকি গ্রহের সবচেয়ে রূঢ়, সবচেয়ে উষ্ণ এবং অক্সিজেন-স্বল্প পরিবেশেও আর্চিয়ার উপস্থিতি লক্ষণীয়। এদের কিছু কিছু অক্সিজেন ব্যবহারেও সক্ষম।
আবিষ্কৃত দুটি প্রটোগ্গ্নোবলিনের একটি হলো অবৎড়ঢ়যুৎঁস ঢ়বৎহরী, যার কাজ অক্সিজেননির্ভর শ্বসন প্রক্রিয়াতেই সীমাবদ্ধ। প্রায় ফুটন্ত তাপমাত্রার লোনা পানিতেই এর স্বচ্ছন্দ বাস। অন্যটি গবঃযধহড়ংধৎপরহধ ধপবঃরাড়ৎধহং, যা মিথেন গ্যাস তৈরি করে, এমনকি অক্সিজেনমুক্ত বিপাকীয় কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে কাজ করায়। এর বাস জলাশয়ের তলানি, পাতাগুল্ম পচা, এমনকি মানুষের পাকস্থলীতেও। ঘঋঝ গড়ষবপঁষধৎ ধহফ ঈবষষঁষধৎ ইরড়-ঝপরবহপব বিভাগের এলিজাবেথ হুড বলেন, পৃথিবীতে আদি জীবের উদ্ভবের সময় বায়ুমণ্ডলে নাইট্রিক অক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইডসহ অসংখ্য বিষাক্ত অণুর উপস্থিতি ছিল। খুব সম্ভবত এই বিষাক্ত গ্যাসগুলোকে শোধনেই আদি হিমোগ্গ্নোবিনের উদ্ভব ঘটে। যখন অক্সিজেন বায়ুমণ্ডলের একটি উপাদান হিসেবে আবির্ভূত হলো তখন তাও ছিল বিষাক্ত। সে সময় আদি অণুজীব বা এককোষী আর্চিয়ার মধ্যে বিশেষ এক ধরনের প্রোটিনের উদ্ভব ঘটে, যা আণবিক অক্সিজেনকে বহন করে। হুডের মতে, পৃথিবীর আদি অণুজীবে আদি হিমোগ্গ্নোবিনের সন্ধানলাভ, জীবের ক্রমবিবর্তনে এদের বিশেষ ভূমিকার কথাই প্রমাণ করে। প্রকাশিত গবেষণাপত্রের মুখ্য লেখক ও দলের অন্যতম গবেষক ট্রেসি ফ্রেইটাস, যিনি সাত বছর ধরে ড.আলমের সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি বলেন, আগে বিশ্বাস করা হতো এককোষী জীব আর্চিয়ার মধ্যে অক্সিজেন ধরে রাখার মতো কোনো প্রোটিন নেই। আমরা দেখিয়েছি আসলে সেখানেও প্রোটিন আছে এবং অক্সিজেননির্ভর অণুজীবের বিকাশে এর ভূমিকাও রয়েছে। প্রচলিত ধারণায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেনবাহী প্রোটিনেরও উদ্ভব হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক ধারণায় দেখা যায়, অক্সিজেন নির্ভর ও অক্সিজেন ছাড়া প্রাণীদের শেষ পূর্বপুরুষ খটঈঅ (খধংঃ টহরাবৎংধষ ঈড়সসড়হ অহপবংঃড়ৎ)-এর মধ্যে বরাবরই প্রোটিনের অস্তিত্ব ছিল এবং অক্সিজেন ব্যবহারের মাধ্যমে শক্তি উৎপাদনে তা ভূমিকা রাখত। হয়তো এতে খুব সামান্য পরিমাণ অক্সিজেনই ব্যবহৃত হতো।
ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (এনএসএফ) এই আবিষ্কারের ঘোষণায় বলে, জীববৈচিত্র্যের এই যে বিস্তৃতি তা সম্ভব হয়েছে শ্বসন প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন ব্যবহারের ক্ষমতা অর্জনের মধ্য দিয়েই; জীবের যে যুগান্তকারী ক্রমবিবর্তন সাধিত হয়েছে সাগর থেকে ভূমিতে, ভূমি থেকে বায়ুতে_ এ প্রক্রিয়ায় এর একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে যদিও তা খুব নাটকীয় নয়। এই আবিষ্কারের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় আলম বলেন, 'দলের সাফল্যের স্বীকৃতিতে আমরা সবাই উদ্দীপিত। চার বছর ধরে ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (এনএসএফ) অর্ধ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক অনুদানে আমাদের গবেষণা প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।
আলম বলেন, আদি অণুজীবের মধ্যে মানবদেহের হিমোগ্গ্নোবিনের অনুরূপ প্রোটিন সন্ধানের ধারণাটি আমাদের মধ্যে পাকা হয় ১৯৯৯ সালে, যখন আমরা এ বিষয়ে ল্যাবরেটরিতে বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং কিছু উপাত্ত নিয়েও বিচার-বিশ্লেষণ করছিলাম, তখনই। আমরা মনে করি, একইভাবে একই ধরনের প্রোটিন, অন্যান্য টিস্যু এবং মাইক্রো অর্গানিজমেও পাওয়া যাবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, রক্তের বিকল্প খুঁজে পেতে ঠিক কত সময় লাগতে পারে, তা এখনি বলে দেওয়া কঠিন। তবে সবকিছু ঠিকমতো এগোলে এখানে (আমেরিকায়) ল্যাবরেটরি গবেষণা থেকে হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্যন্ত পুরো প্রকল্পটি শেষ করতে ৮ থেকে ১০ বছর লেগে যাবে। তবে কোনো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভব এ সময়কে উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েও আনতে পারে।
রক্তের বিকল্প উদ্ভাবনের মতো যুগান্তকারী আবিষ্কারের এ খবরটি প্রকাশিত হয় ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্সের প্রসিডিংসে, তাদের ২০০৪ সালের ১৯ এপ্রিলের অনলাইন সংস্করণে। ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের অনুদানে পরিচালিত প্রকল্পটির গবেষক দলের প্রধান ছিলেন পাটের জিনোমের নেতৃত্বদানকারী গবেষক ড. মাকসুদুল আলম। মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক মাকসুদুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, 'তার দল আদি অণুজীবের মধ্যে প্রটোগ্গ্নোবলিন বা অক্সিজেনবাহী প্রোটিন আবিষ্কার করেছে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, আবিষ্কৃত এ প্রোটিনই মানব দেহস্থিত হিমোগ্গ্নোবিনের পূর্বসূরি। হিমোগ্গ্নোবিন হলো রক্তের মধ্যকার এক প্রকার প্রোটিন, যা ফুসফুস থেকে অক্সিজেন শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে পেঁৗছে দেয়। সম্ভবত আদিতে হিমোগ্গ্নোবিন কেবল মারাত্মক বিষাক্ত গ্যাসগুলোকেই শোধন করত এবং ক্রমেই তা মানবদেহে অক্সিজেন সংবাহকের ভূমিকা নেয়।'
আদি অণুজীবে অক্সিজেনবাহী প্রোটিনের উপস্থিতি
গবেষক দল দুটি ভিন্ন প্রজাতির আর্চিয়ার মধ্যে দুটি আদি প্রটোগ্গ্নোবলিনের সন্ধান পেয়েছে। আর্চিয়া হলো এক বিশেষ অণুজীবের দল। তাদের বংশোদ্ভূত হয়েছে অনেক আগে_ সেই একই পূর্বসূরি ব্যাকটেরিয়া এবং ইউকারিওটিক থেকে। এই ইউকারিওটিক হলো এমন ধরনের কোষ যারা নিউক্লিয়াসের মধ্যে ডিএনএ ধারণ করে। আমরাসহ আধুনিক জীবদের উদ্ভব ঘটেছে এর থেকে। বহু প্রজাতির আর্চিয়াও এদের মধ্যে রয়েছে। এমনকি গ্রহের সবচেয়ে রূঢ়, সবচেয়ে উষ্ণ এবং অক্সিজেন-স্বল্প পরিবেশেও আর্চিয়ার উপস্থিতি লক্ষণীয়। এদের কিছু কিছু অক্সিজেন ব্যবহারেও সক্ষম।
আবিষ্কৃত দুটি প্রটোগ্গ্নোবলিনের একটি হলো অবৎড়ঢ়যুৎঁস ঢ়বৎহরী, যার কাজ অক্সিজেননির্ভর শ্বসন প্রক্রিয়াতেই সীমাবদ্ধ। প্রায় ফুটন্ত তাপমাত্রার লোনা পানিতেই এর স্বচ্ছন্দ বাস। অন্যটি গবঃযধহড়ংধৎপরহধ ধপবঃরাড়ৎধহং, যা মিথেন গ্যাস তৈরি করে, এমনকি অক্সিজেনমুক্ত বিপাকীয় কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে কাজ করায়। এর বাস জলাশয়ের তলানি, পাতাগুল্ম পচা, এমনকি মানুষের পাকস্থলীতেও। ঘঋঝ গড়ষবপঁষধৎ ধহফ ঈবষষঁষধৎ ইরড়-ঝপরবহপব বিভাগের এলিজাবেথ হুড বলেন, পৃথিবীতে আদি জীবের উদ্ভবের সময় বায়ুমণ্ডলে নাইট্রিক অক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইডসহ অসংখ্য বিষাক্ত অণুর উপস্থিতি ছিল। খুব সম্ভবত এই বিষাক্ত গ্যাসগুলোকে শোধনেই আদি হিমোগ্গ্নোবিনের উদ্ভব ঘটে। যখন অক্সিজেন বায়ুমণ্ডলের একটি উপাদান হিসেবে আবির্ভূত হলো তখন তাও ছিল বিষাক্ত। সে সময় আদি অণুজীব বা এককোষী আর্চিয়ার মধ্যে বিশেষ এক ধরনের প্রোটিনের উদ্ভব ঘটে, যা আণবিক অক্সিজেনকে বহন করে। হুডের মতে, পৃথিবীর আদি অণুজীবে আদি হিমোগ্গ্নোবিনের সন্ধানলাভ, জীবের ক্রমবিবর্তনে এদের বিশেষ ভূমিকার কথাই প্রমাণ করে। প্রকাশিত গবেষণাপত্রের মুখ্য লেখক ও দলের অন্যতম গবেষক ট্রেসি ফ্রেইটাস, যিনি সাত বছর ধরে ড.আলমের সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি বলেন, আগে বিশ্বাস করা হতো এককোষী জীব আর্চিয়ার মধ্যে অক্সিজেন ধরে রাখার মতো কোনো প্রোটিন নেই। আমরা দেখিয়েছি আসলে সেখানেও প্রোটিন আছে এবং অক্সিজেননির্ভর অণুজীবের বিকাশে এর ভূমিকাও রয়েছে। প্রচলিত ধারণায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেনবাহী প্রোটিনেরও উদ্ভব হয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক ধারণায় দেখা যায়, অক্সিজেন নির্ভর ও অক্সিজেন ছাড়া প্রাণীদের শেষ পূর্বপুরুষ খটঈঅ (খধংঃ টহরাবৎংধষ ঈড়সসড়হ অহপবংঃড়ৎ)-এর মধ্যে বরাবরই প্রোটিনের অস্তিত্ব ছিল এবং অক্সিজেন ব্যবহারের মাধ্যমে শক্তি উৎপাদনে তা ভূমিকা রাখত। হয়তো এতে খুব সামান্য পরিমাণ অক্সিজেনই ব্যবহৃত হতো।
ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (এনএসএফ) এই আবিষ্কারের ঘোষণায় বলে, জীববৈচিত্র্যের এই যে বিস্তৃতি তা সম্ভব হয়েছে শ্বসন প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন ব্যবহারের ক্ষমতা অর্জনের মধ্য দিয়েই; জীবের যে যুগান্তকারী ক্রমবিবর্তন সাধিত হয়েছে সাগর থেকে ভূমিতে, ভূমি থেকে বায়ুতে_ এ প্রক্রিয়ায় এর একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে যদিও তা খুব নাটকীয় নয়। এই আবিষ্কারের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় আলম বলেন, 'দলের সাফল্যের স্বীকৃতিতে আমরা সবাই উদ্দীপিত। চার বছর ধরে ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন (এনএসএফ) অর্ধ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক অনুদানে আমাদের গবেষণা প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে।
আলম বলেন, আদি অণুজীবের মধ্যে মানবদেহের হিমোগ্গ্নোবিনের অনুরূপ প্রোটিন সন্ধানের ধারণাটি আমাদের মধ্যে পাকা হয় ১৯৯৯ সালে, যখন আমরা এ বিষয়ে ল্যাবরেটরিতে বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং কিছু উপাত্ত নিয়েও বিচার-বিশ্লেষণ করছিলাম, তখনই। আমরা মনে করি, একইভাবে একই ধরনের প্রোটিন, অন্যান্য টিস্যু এবং মাইক্রো অর্গানিজমেও পাওয়া যাবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, রক্তের বিকল্প খুঁজে পেতে ঠিক কত সময় লাগতে পারে, তা এখনি বলে দেওয়া কঠিন। তবে সবকিছু ঠিকমতো এগোলে এখানে (আমেরিকায়) ল্যাবরেটরি গবেষণা থেকে হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্যন্ত পুরো প্রকল্পটি শেষ করতে ৮ থেকে ১০ বছর লেগে যাবে। তবে কোনো অত্যাধুনিক প্রযুক্তির উদ্ভব এ সময়কে উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়েও আনতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১০ সকাল ৯:০৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



