somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

“যাত্রা পালা”

১৬ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“যাত্রা পালা”
আমাদের প্রাচীন সংস্কৃতির একটি উপাদান যাত্রা। এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই যাত্রা মহা সমারহে তার স্বকীয়তা বজায় রেখে চলছে।


ঘটনাঃ আমি তখন ক্লাস টেনে পড়ি। রাজশাহী হতে কি এক ছুটিতে বাড়ি গেছি। গ্রামের বন্ধুদের কাছে শুনলাম আমাদের পাশের গ্রামে যাত্রা হবে। আর আমি তখন পর্যন্ত যাত্রা দেখিনি।তাই এতদিনের বাসনা আর বন্ধুদের কাছে শোনা যাত্রার রুপ রস আর গন্ধ নিতে এক পায়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। যে করেই হোক যাত্রা দেখতে হবে। তো আর যায় কোথায়। মাকে মিথ্যে বলে সন্ধ্যায় বের হয়ে বন্ধুদের সঙ্গে যোগ দিলাম। ১০-১৫ জনের দলে একমাত্র আমিয় নাদান। ওরা এর আগে সকলে বেশ কবার যাত্রা দেখেছে।
আলচনা সমালোচনায় রাতে পথ চলছি, সকলের হাতে সানলাই আর অলেম্পিক ব্যাটারির টর্চ। কে কোথায় কত জমজমাট যাত্রা দেখেছে, এ বলছে না ঐ যাত্রা ভাল ,অন্যজন বলছে না অন্যটা ভাল। এই ভাবে পাশের গ্রামে পৌঁছলাম। আমার মাঝে তো বেশ উৎসাহ, যাত্রা দেখব, রক্তে বেশ উত্তেজনা।
গ্রামের স্টেজ[ গ্রামে বলে পেন্ডেল} খুব বড় না মাঝারি আকারের। লালা সবুজ কাপড়ের মাধ্যমে আকর্ষণীয় করার চেষ্টার ত্রুটি করা হয় নি। বেশ লোক সমাগম হয়েছে। চিৎকার হয় হুল্লতে বেশ জমজমাট। আশেপাশে পান—সিগেরেট ও হালকা পানিয় ও বাদাম জিলেপির দোকানদাররা বেশ বেচা বিক্রয় করছে। মহা হুলুস্থলে কাণ্ড। আমাদের দলের বেশির ভাগ সদস্য কাছ হতে দেখতে একেবারে প্যান্ডেলের কাছ ঘেঁষে বসেছে। পরে আর জায়গা পাওয়া যাবেনা।আর বসার জন্য মাটিতে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে খড়/বিচুলি। আমি আর আমার এক বন্ধু ওদের কাছে না গিয়ে পিছনে দাঁড়িয়ে রয়আলাম। লোকজন চিল্লাচিলি করছে এত দেরি কেন শো সুরু হতে। এই চিল্লাচিল্লির মধ্যেয় ঘোষণা করা হল আর ৫ মিনিটের মধ্যে সুরু হবে আপনাদের কাঙ্খিত যাত্রা। এবারের যাত্রার নাম বরুণ কুমার। তবে সকলকে অনুরধ করবো কেও মাত্রা অতিক্রম করবেন না। কেও নায়িকাকে ধরতে চেষ্টা করবেন না। আর সকলে চুপ থাকবেন। এই সব ভবিষ্যৎ বানি বা সবধান বানীর কারণ কি তখন না বুজলেও পরে বুজেছিলাম।

পিন পতন নিরবতা এক মহিলার আগমনে। পরনে শাহী পোশাক।পরে বুজলাম তিনি বিধবা হয়েছেন, আর তার স্বামী মারা গেছে যুদ্ধে। এই খবর এনেছে তরুণ রাজকুমার, মহিলার ঠাকুর পো বরুণ কুমার। ঘটনা এইখান হতেয় শুরু।
বিধবাঃ ষ্টেজে এসেই করুন শুরে বলে উঠল ঠাকুর পো..................। এমন টানরে ভাই।
বরুণঃ এক যুবকের আগমন, ভাবি ভাবি..............................। এমন ফালতু অভিনয়, গ্রামের এক যুবক অভিনয় করেছে রাজপুত্রের পাটে।
আর পাশের পর্দার আড়াল হতে সংলাপ বলে দিচ্ছে মাস্টার।
দুজনেয় বিচ্ছিরি অভিনয় দিয়ে আমাদের দর্শকদের বিরক্ত উদ্রেগ করেছে ততক্ষণে। লোকজন চিল্লাতে শুরু করেছে।

ফলে ওখানেয় শেষ প্রথম অঙ্ক/ বা দৃশ্য। লোকজনকে শান্ত করতে এবার আসলো আসল মজা। যা গ্রামের যাত্রার প্রধান আকর্ষণ, বর্তমানে যাকে শুদ্ধ ভাষায় বলেন, যা বর্তমানে ছিনেমার প্রধান আকর্ষণ আইটেম সং। আর যাত্রার এই আইটেম সং কে বলে শাবোল।
ও আমার যৌবন জ্বালা.............................................।। নোংরা কথা আর বাজনা ও সুরে সুরু হয়ে গেল এক নর্তকীর বিচিত্র অশ্লীল দেহ ভঙ্গি। যাকে আমরা বলি নাচ।নর্তকী মেয়ের পরনে ছোট ঘাগরা ও উপরে টাইট ব্লাউজ। আর তার তালে তালে ষ্টেজের সামনে বসা যুবক ছেলেদের লাফা লাফি ও নাচ। নর্তকী মেয়ে স্টেজ হতে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে সামনে নাচন কুর্দন রত যুবকদের মাঝে। যে যেমন পাচ্ছে ছুয়ে দিচ্ছে নর্তকীর হাত । কেও খুব বেশি বাড়তে চাইলে বাইম মাছের মত ফিছলে যাচ্ছে অভিঞ নর্তকী। কেও কেও টাকা হাতে নর্তকীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর নর্তকীও এগিয়ে যাচ্ছে , করছে অশ্লীল ভঙ্গি, সুজুগ দিচ্ছে তার ব্লাউজে টাকা গুজে দিতে। এর পর যা শুরু হল তা আরও অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ। প্রথম পর্বের শাবল এখানেই শেষ। এর পর আবার এক ঘেয়ে অভিনয়। আবার দর্শক দের চিৎকার শাবল চাই শাবল।
আবার নতুন এক নর্তকী। নতুন অশ্লীল দেহভঙ্গি।


এই করেই মধ্যরাতের আগমন। এই সময় ঘোষণা এল ষ্টেজে দুই নর্তকীর সঙ্গে নাচতে চাইলে ২০০ টাকা করে দিতে হবে। হই করে উঠল লোকজন। এরকম ৭-৮ জন উঠার পর মারা মারি লেগে গেল দর্শকের মধ্যে ষ্টেজে উঠার সিরিয়াল নিয়ে । দুই নর্তকী ভয়ে পর্দার অন্তরালে পাগারপার। অনেক পর শান্ত হয়ে আয়োজক কমিটি ঘোষণা করল এখানেই শেষ যাত্রা।

তক্ষণে আমার শখ পুরেই মিটে গেছে যাত্রা দেখা।ঐ টিই হল আমার দেখা প্রথম ও শেষ যাত্রা পালা। এই হল আমাদের গ্রামের শাবল যুক্ত যাত্রা পালা।
Click This Link
৭.৪০pm ১৫-৭-১৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×