ফেসবুক স্ক্রল করসিলাম। হঠাট আন্দন্দ বাজার পত্রিকার একটি নিউজে থমকে গেলাম।নিউজটির শিরোনাম ব্লগে শেয়ার করার মতো না মনে হলো। নিউজ লিংক যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। তাই এখানে কপি পেস্টের গন্ধ নেই। সৃষ্টিকর্তা যাকে যেভাবে সৃষ্টি করেছেন সে সেরকম। সকালে ব্লগার অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য ভাই এর পোস্টে মন্তব্য করেছিলাম - ফর্সা হলেই সুন্দর হয় এমন নয়। সুন্দর কালো হয়, শ্যামলা হয়,বেটে হয়, লম্বা হয়, মোটা হয় চিকন হয়।আমার চোখে সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে সে, যে বন্ধুত্বকে সম্মান দিতে পারে। যার সাথে মিশে আমি কমফোর্ট। একটা কালো মেয়ে বন্ধু আমার সাথে সিগারেট শেয়ার করে টানে, এক কাপ চায়ের অর্ধেক আমি খাই বাকি অর্ধেক সে পিরিচে ঢেলে খায়। সে আমার কাছে অনেক সুন্দর মেয়ে। আমি একবার হসপিটালে ভর্তি ছিলাম। ৮-৯ দিন ছিলাম। সে প্রতিদিন এসে বসে থাকত। ফুটস কেটে খাওয়াতো। ওর সম্বন্ধে বিস্তারিত লিখলে মন্তব্য পোস্টের চেয়ে বড় হয়ে যাবে।
তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা ঠিক না। সবাই মানুষ। জনাবা তসলিমা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, 'ফেসবুকের একটি পোস্টে তিনি লিখেছেন,‘সুগোল সুডোল ফার্ম স্তন দেখতে আমার খুব ভাল লাগে। মেয়েরা স্তন দেখানো, ক্লিভেজ দেখানো জামা পরলে বেশ লাগে দেখতে। সুদর্শন পুরুষদের যেমন শর্টস পরলে বা সুঠাম বাইসেপ দেখানো স্লিভলেস টিশার্ট, বুকের লোম দেখানো ডীপ ভি নেক টিশার্ট পরলে দেখতে ভাল লাগে, তেমন মেয়েদের কিছুটা নিতম্ব ঝিলিক দেওয়া সুগঠিত পা দেখানো মিনি শর্টস পরলে, ক্লিভেজ বা অর্ধেক স্তন দেখানো, পেট এবং নাভি দেখানো ছোট টপ পরলে দেখতে বেশ লাগে’।পোস্টটি অবশ্য এখানেই শেষ হয়নি। তিনি বাকি পোস্ট জুড়ে আরও যা যা মন্তব্য করলেন, সেই দেখেই বেজায় চটেছেন নেটাগরিকরা! তসলিমা লেখেন, ‘কিন্তু আজকাল কী যে হয়েছে, যার স্তন দেখতে ভাল নয়, স্যাগিং, বা প্রায় ফ্ল্যাট, তারাও, বিশেষ করে সাংস্কৃতিক জগতের সেলেব্রিটিরা ডীপ ভি নেক ড্রেস পরেন। কেন যে পরেন, কী দেখাতে, বুঝি না। আর বিশাল বপুর কুচ্ছিত পুরুষগুলোও আঁটসাঁট জামা পরে চললেন। চোখ সরাতে পারলে বাঁচি’!
যখন হিজড়াদের হিজড়া বলা হয় তখন তসলিমারা অপমানিত হন । কিন্তু নিজেরা যা ইচ্ছা বলতে পারেন, করতে পারেন, লিখতে পারেন। অন্যকে হেয় করা এক প্রকার মানসিক অসুস্থতা। এমন বক্তব্য দেয়া অনেকে হীনমন্যতায় ভোগেন এবং ব্যক্তি জীবনে খুব অসুখী।তসলিমা দেখতে কেমন তা নিয়ে মন্তব্য করা যেমন ঠিক না , অন্যের বডি নিয়ে বাজে মন্তব্য করাও ঠিক না। সবাই মানুষ তো। যারা দেখতে সুন্দর নন তাদের যদি বডি শেমিং করা হয় অপমানে আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে পারে অনেকে। একজন জনপ্রিয় লেখিকার এরকম স্ট্যাটাস তার জনপ্রিয়তা কমানোর পাশাপাশি তাঁকে একজন বর্ণবাদি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিবে।
আমি সুশীল আমি সুশীল করলেই কেউ সুশীল হয়না। সুশীল হতে হলে ধর্ম বর্ণ সাদা কালো নির্বিশেষে সকলের প্রতি সম্মান দেখাতে হয়।যে যেরকম পোশাক পড়ে কমফোর্ট সে তাই পড়বে। আপনার ভালো না লাগলে কিছু করার নেই। আপনাকে দেখতে কেমন লাগে তা বললে আপনিও কষ্ট পাবেন।
একজন মানুষের সৌন্দর্য তার মানসিকতায়, পোশাকে নয়। সর্বশেষ জনাবা তসলিমাদের Vivienne Westwood এর একটি বাণী মনে করিয়ে দিয়ে পোস্টটি শেষ করছি। "If you love something, wear it all the time... Find things that suit you. That's how you look extraordinary."
ছবি ছোট বোন সাইরা। তুলেছেন জিয়াউল হক রাজু।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০২২ রাত ১২:৩৮