বিবৃতি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশী হামলার প্রতিবাদ
গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপর ফ্যাসিবাদী দমন-নিপীড়ন বন্ধ কর!
অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের দাবী মেনে মিথ্যা মামলা তুলে নাও! গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দাও
আমরা অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে লক্ষ করছি, বর্ধিত ফি প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবীতে চলমান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ দফায় দফায় নির্মমভাবে লাঠিচার্য করেছে। প্রশাসনের নির্দেশে পুলিশ এ পর্যন্ত ২৮৬জনকে আটক করেছে। ইতপূর্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্দোলনকারী ১১জন নেতাসহ আরও ২৫ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের এবং ১ জন ছাত্রকে বহিষ্কার করেছে। এখন শতশত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা ও বহিস্কারের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলেঅর ইতিহাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর প্রশাসনের এমন স্বৈরাচারী ও দমন-নিপীড়নের ইতিহাস নজিরবিহীন! এ ঘটনা ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়ের জন্ম দিল। আমরা পুলিশ ও প্রশাসন কর্তৃক শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপর দমন-নিপীড়নের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। সেই সাথে অবিলম্বে শিক্ষার্থীদের দাবী মেনে নিয়ে গ্রেফতারকৃত আন্দোলনকারীদের মুক্তি এবং মিথ্যা মামলা ও বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়ার দাবী জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য উচ্চ শিক্ষার ২০ বছর মেয়াদী কৌশলপত্রসহ শিক্ষার সাম্রাজ্যবাদী পুনর্বিন্যাসের কারণে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ফি বৃদ্ধি, করারোপসহ নানা গণ বিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কেবল ন্যায়সঙ্গতই নয়, অনিবার্যও বটে। তাই এই সাম্রাজ্যবাদী কৌশলপত্র অনুসারে শিক্ষাঙ্গণে শৃঙ্খলাবিধির নামে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের কণ্ঠরোধ করার পদক্ষেপও নেয়া হচ্ছে। ফলে একদিকে সারাদেশে প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বর্ধিত ফি প্রত্যাহারসহ নানা দাবীতে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হচ্ছে। অন্যদিকে আন্দোলনকারীদের উপর চলছে দমন-নিপীড়ন। আমরা দেখেছি ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবীতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলনের উপরও পুলিশ হিংস্র আক্রমণ চালিয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে প্রশাসন ও সরকার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রশাসনিক দমন-পীড়নের পাশাপাশি ন্যাক্কারজনকভাবে পুলিশ লেলিয়ে দিচ্ছে। এসব ঘটনায় সরকারের তাবেদারী ও ফ্যাসিবাদী চরিত্র উন্মোচিত হয়ে পড়ছে। প্রকাশিত হয়ে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দালাল ও ফ্যাসিবাদী চরিত্র।
বলাবাহুল্য উল্লিখিত পদক্ষেপ বাস্তবায়নে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দেখা গেছে সবচেয়ে বেশী তৎপর। দ্বিগুণেরও অধিক ফি বৃদ্ধির পাশাপাশি শৃঙ্খলা রক্ষার নামে তারা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উপর আড়াই বছর যাবৎ নিষেধাজ্ঞা জারি করে রেখেছে। চলমান আন্দোলনের ক্ষেত্রে তারা সম্পূর্ণ উদাসীনতা প্রদর্শন করেছে, তার দায়িত্ব গ্রহণে একগুঁয়ের মত অস্বীকার করছে এবং স্বৈরাচারী শাসকের মত আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে এবং আরও কঠোর শাস্তি প্রদানের হুঙ্কার ছাড়ছে। এই ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন যে দায়িত্বজ্ঞানহীন উদ্ধত বক্তব্য, ফ্যাসিবাদী আচরণ ও মানসিকতার পরিচয় দিচ্ছেÑআমরা তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীদের এই বীরোচিত প্রতিরোধকে জানাই লাল সালাম। আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত, আটক ও হামলা-মামলা শিকার নির্যাতিত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাকদের প্রতি সমমর্মীতা প্রকাশ করছি। একই সাথে সারাদেশে ছাত্র, শিক্ষক ও আপামর জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি আসুন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত প্রতিরোধের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানাই, সোচ্চার হই! স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার দাবীতে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তাবেদারী নীতি ও ফ্যাসীকরণের বিরুদ্ধে, সরকারের তাবেদারী ও ফ্যাসিবাদী তৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই!
বিবৃতিদাতা
মাসুদ খান
আহবায়ক
রাতুল বারী
সদস্য সচিব
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১০ রাত ১:০৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




