somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাং হারঙ্গ হোরঙ্গ

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কনকনে শীত! এমন শীতের দুপুর ঘরে শুয়ে-বসেই কাটিয়ে দিতে চেয়ে ছিলাম। হুটহাট কোথাও বেড়ানোটা আমার কাছে ভাবনার উপর লাগাম পরিয়ে দেয়ার মতো বিষয়। তবু যেতে হবে! ঘরের কাছে মিথ হয়ে যাওয়া এই সুরঙ্গ পথটি যে আমি এখনও দেখিনি! হয্রত বিনয় ভদ্রের অমন্ত্রনে দুপুর দুইটার দিকে জড়ো হতে থাকি আম্বরখানা পয়েন্টে। নাজমুল আলবাব অপু, হয্রত বিনয় ভদ্র, জামান তাপাদার, রাজিব রাসেল, লিটন চৌধুরী, ফজলুর রহমান নোমান, এহসান রাসেল ও ওয়াহিদ সহ দশ জনের দল। পাঁচটি মোটরসাইকেল যোগে আমাদের দল ছুটছে হারঙ্গ হোরঙ্গ সুরঙ্গ পথ দেখার জন্য। অপু ভাইয়ের কূট উপদেশ শুনতে শুনতে আমাদের মোটরসাইকেল বহর এগিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বিমানবন্দর রোডের দিকে।

হুরং মানে সুরঙ্গ , এই অঞ্চলের আঞ্চলিক উচ্চারণে তাই এর নাম হারং সুরঙ্গ । লাক্কাতুরা চা বাগান ছেড়ে বিমানবন্দর রোডে একটু সামনে গেলেই মালনিছড়া চা বাগান। ১৮৫৪ সালে ইংরেজ লর্ড হার্ডসন সাহেবের হাত ধরে এই চা বাগানের জন্ম। সবচেয়ে বৃহৎ আর পুরনো এই চা বাগানের প্রবেশদারে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ এক চা বাগান কর্মকর্তার স্মৃতিস্তম্ভ। দুই মিনিট দাঁড়িয়ে নেই এখানে তারপর আবার হারঙ্গ হোরঙ্গ যাত্রা। এক- দেড় কি.মি. পরেই বাগানের বালুময় পথের শুরু। দুপাশে নাতিউচ্চ টিলায় সুবিন্যস্ত চায়ের বাগান , তার মাঝে সোজা আকাশের দিকে উঠে যাওয়া শেড গাছ মিলে আশ্চর্য এক সবুজের ধারা তৈরি করেছে, এখানে ঠান্ডা বেশি । কাজেই বিনয় ভদ্রের সৎপরামর্শ প্রত্যাখ্যান করার কুফল এইবার আরিক অর্থেই হাড়ে হাড়ে টের পেলাম । মাংস ভেদ করে চা বাগানের শীত ঢুকে যাচ্ছিলো হাড়ে, এইখানে সাবধান । খুব সাবধান । শীতের কাপড় নিয়ে যাবেন।

আঁকাবাকা, উচুনিচু মেঠো পথ পাড়ি দিতে দিতে কানে বাঁজবে ঝর্ণার শব্দ। ঝর্ণা বলতে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসা বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট ছোট ছোট খাল দিয়ে প্রবাহিত জলের আবেশী স্বচ্ছ্ব স্রোত। টলটলে জলের স্রোত , তার আশেপাশে গাঢ় সবুজ ঝোপ ঝাড়ে দেখতে পাবেন চেনা অচেনা হাজার জাতের বুনো ফুল , হটাৎ করে ল্যান্টানার ঝাড়, কি পিশাচ এর মতো এন্টিবায়োটিক গাছ। মাঝে মধ্যে দু একজন কাঠকুড়ানী চা শ্রমিক । এর মধ্য দিয়ে যেতে যেতে আরো যে সুন্দর থাকতে পারে সেটা ঠিক গুহাটার পাশে না গেলে বিশ্বাস করা যায় না, বর্ণনাও নয়।

বিশাল চা বাগানটি পাড়ি দিতে সময় লাগবে ৩০ মিনিটের মতো । উচুনিচু লালমাটির পাথুরে পাহাড়ী পথ । পাহাড়ের বুকে সবুজের অপূর্ব সমাহার , কানে আসা অপরিচিত বুনো জন্তুর আওয়াজ সুনে মুগ্ধতায় কেটে যাবে যাওয়ার পথটি। ভাগ্য সহায় হলে পেয়ে যেতে পারেন একদল ভিতুর ডিম কাঠবিড়ালী, কি কয়েকটা মহা বেয়াদব বানর দম্পতি। একা গেলে পথ হারাবেন নিশ্চিত , হারানোর মতো এমন পথ খুব কমই আছে ! মাঝে মধ্যে পথ বালুময় । প্রয়োজন গাইড। গাইড হিসেবে যে কোন চা শ্রমিকই হতে পারে আপনার সঙ্গি, তার এই সুন্দর আবাসস্থলটিকে দেখানোর আগ্রহও তার অদম্য । ৫০ থেকে ১০০ টাকা দিলেই আপনকে দেখিয়ে আনবে হারঙ্গ হোরঙ্গ । আন্তরিকতা আর দতার অভাব হবে না, প্রশ্ন করলে জানতে পারবেন এই বুনো পরিবেশ কেবল গা শিরশিরানি ঠান্ডা আর রাতে ঘন অন্ধকার ছাড়াও যোগায় তাদের ুধার খাবার , তৃষ্ণার জল। সে আপনার খুশি ।

কথিত আছে রাজা গৌড় গোবিন্দ এই সুরঙ্গটি তার প্রয়োজনে নির্মান করেছিলেন । ১৩০৩ সালে হযরত শাহজালালের আগমন বার্তা পেয়ে দিশেহারা গৌড় গোবিন্দ জৈন্তিয়া রাজ্যের অভিমুখে পালিয়েছিলেন এই সুরঙ্গ পথ ধরে । এটি ইতিহাস নয় কিংবদন্তি। আজ আর তার সত্যাসত্য যাচাইয়ের হয়তো উপায় নেই , থাকলেও তা প্রতœতাত্বিকের মাথাব্যাথার বিষয়, আমাদের কেবল অপার মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকা এই সুন্দরের দিকে।

সন্ধ্যা নেমে গেলে আমরা ফেরার পথ ধরি। ফিরতি পথে দেখা মিলল মুখপুড়া বানর আর কাঠ বিড়ালির। এটা আশা করিনি, আপ্নিও হয়তো করবেন না, তবু মিলে গেলে উপভোগে কি বাধা। ফেরার পথে প্রকৃতি আরেকটা রূপে ধরা দিল , চমৎকার সবুজ হটাৎ করে দ্রুত শীতল আর নিকষ কালো হতে লাগলো। একবার ফিরে তাকালাম পেছনে, আমরা ছেড়ে যাচ্ছি ঘন অন্ধকারে এক অদ্ভুত সুন্দরকে । ধীরে ধীরে নয় যেনো যতো দ্রুত সম্ভব রাত হওয়াই এখানে রেওয়াজ ।

যাবেন যেভাবেঃ সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজি অটো রিক্সায় যাওয়া যাবে ভাড়া পড়বে ২৫০-৩০০ টাকা (যাওয়া-আসা) ।

ছবিঃ হাসান মোরশেদ
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×