পারু আপা বোধ হয় ঘুমুচ্ছিলেন। আকিবকে নিয়ে পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই তার ঘুম ভাঙল। পারু আপা এক কালে রূপবতী ছিলেন কি ছিলেন না আজ তার কিছুই বোঝার উপায় নেই। কুৎসিত চেহারা। মাথায় কোনো চুল নেই। মুখের চামড়া শুকিয়ে হাড়ের সঙ্গে লেগে গেছে। একটা জীবন্ত মানুষ, পড়ে আছে শুকনো মাংশের দলার মত। প্রকৃতি এর সব কিছু কেড়ে নিয়েছে, কি ভয়াবহ নিষ্ঠুরতা!
কিন্তু প্রকৃতি কি সব নিতে পেরেছে...? আমি পারু আপার চোখের দিকে তাকিয়ে চমকে গেলাম। কি সুন্দর চোখ! শুধু পৃথিবী নয় অনন্ত নক্ষত্রবীথির সমগ্র সৌন্দর্য এই দু'চোখে ছায়া ফেলেছে। এত সুন্দর চোখ কোন মানবীর হতে পারে না।
আমি তার চোখের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে বললাম, পারু আপা কেমন আছেন...?
পারু আপা হাসলেন। আশ্চর্য! যে মানুষটি মৃত্যুর বিছানায় শুয়ে ওপারের জগতটাকে চোখের সামনে পরিষ্কার দেখছেন তিনিও এতো সুন্দর করে হাসতে পারেন। আগেতো জানা ছিলনা। তার সেই হাসি মুখে ধরা পড়ল না, চোখে ধরা পড়ল। ঝিকমিক করে উঠল চোখ।
আমি বললাম, পারু আপা, আপনার চোখ এতো সুন্দর কেনো বলুনতো...? এত সুন্দর চোখ মানুষের থাকা উচিৎ না। এটা অন্যায়।
পারু আপা অনেক সময় নিয়ে কিছু বলতে চেষ্টা করছেন। অস্পষ্ট গলায় বললেন-
'হাবিব ভাইয়া, কেমন আছ তুমি...?'
আমি বললাম, আমি ভালো আছি। আপনিও কিন্তু ভালো আছেন। আমি আপনার চোখ দেখে বুঝতে পারছি। শারিরীক কষ্ট আপনি জয় করেছেন।
তার চোখ ভিজে উঠল। বাঁ চোখ থেকে এক ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়তে গিয়েও পড়তে পারছেনা। দীর্ঘ আখিপল্লবের কোণায় মুক্তার মত জমে আছে।
পারু আপার মুখ দিয়ে আর কথা বেরুচ্ছেনা। লক্ষ্য করলাম তার চোখ কথা বলছে। পারু আপার চোখ খুব সুন্দর করে আমাকে বলল, ভাই, আমি সারাক্ষণ একা থাকি। এইটাই আমার কষ্ট, অন্য কোনো কষ্ট নেই। তুমি কি জানো আমি যেখানে যাচ্ছি সেখানেও কি আমাকে একা থাকতে হবে...?
আমি নিচু গলায় বললাম, আমি জানিনা, কিচ্ছু জানিনা। আপনি ওপারের জগতে গিয়ে আমায় জানিয়ে দিবেন কিন্তু!
তিনি হাসলেন, তার চোখ ঝিকমিক করে উঠল।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৫০