স্রষ্টা বলেছেন, "নামাজ মানুষকে সকল প্রকার অশ্লীলতা এবং গর্হিত কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখে।" অথচ আমরা নামাজ শেষ করে মসজিদ থেকে বের হতে হতে পাশের বন্ধুকে বলি 'দোস্ত দেখনা! মেয়েটা কী জটিল।" তাহলে ভাবনা জাগে নামাজতো মানুষকে অশ্লীলতা থেকে বাঁচাতে পারলোনা।
স্রষ্টা সকল দুর্বলতার উর্ধ্বে। তিনি অহেতুক বুলি প্রসব করেননা। তাহলে তিনি কোন নামাজের কথা বলেছেন, যা মানুষকে, যাবতীয় অশ্লীলতা থেকে বাঁচিয়ে রাখে..? হ্যা! নামাজের মতো নামাজই কেবল সকল পাপ থেকে মানুষকে আগলে রাখতে পারে। তাহলে নামাজের মতো নামাজ কিভাবে পড়তে হয়..?
হাদিসের পরিভাষায় খুশু খুজু তথা একাগ্রতার নামাজই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য। সাধারণত আমরা সিংহভাগ মুসল্লিই যা থেকে বিমুখ। রমজান মাসে ইমাম সাহেব যখন বিতরের নামাজ জামায়াতের সাথে পড়ান, তখন তা স্পষ্ট ভাবেই বুজা যায়। সেদিনতো নামাজের মধ্যেই অবাক হলাম। ইমাম সাহেব বিতরের নামাজের তৃতীয় রাকাতে তাকবীর দিলেন। অমনি প্রায় সব মুসল্লি রুকুতে গিয়ে হাজির। কী বাজে অবস্থা আমাদের!
যাই হোক। হাদিসের আলোকে নামাজে একাগ্রতা সৃষ্টির কিছু উপায় নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করলাম। ছোট মাথায় ছোট প্রয়াস। ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
১.নামাজের জন্য পূর্বায়োজন ও পূর্ণপ্রস্তুতি গ্রহণ করা। আমি এক্ষেত্রে পবিত্রতা তথা অজুকে বেশি প্রাধান্য দিই। অজু করার ক্ষেত্রে যদি আপনি একাগ্রতা আনতে না পারেন, তবে নামাজেও আনা অসম্ভব। "অজু এবং নামাজ" একটি আরেকটির সহায়ক। অজুর ক্ষেত্রে হাদিসের কিছু পরিভাষা উল্লেখ করা হলো। প্রতিটি রোকন ধীরস্থির এবং স্বাবলীল ভাবে আদায় করতে হবে। এর কিছু নিয়ম নিম্নরূপঃ
ক. আপনি যখন অজু করতে বসবেন, তখন নিজে নিজে বলুন। খোদা! আমি শুধু শারীরিক পবিত্রতার জন্য নয়, আমার আত্মার পবিত্রতা এবং পরিশুদ্ধতার জন্য বসছি। তুমি আমার আত্মাকেও পবিত্র করে দাও!
খ. আপনি বিসমিল্লাহ বলে কুলি করছেন। আর ভাবুন! এই মুখ দ্বারা আমার যত পাপ হয়েছে, সব ধুয়ে পানির সাথে বেরিয়ে যাচ্ছে। আপনি মুখের পানির গড়িয়ে পরার সাথে আপনার পাপ গুলোকেও দেখছেন গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে। এভাবে মুখ ধৌত করছেন, হাত ধৌত করছেন, মাথা মাসেহ করছেন অবশেষে পা ধুচ্ছেন। আর ভাবতে থাকুন, আমার দেহের প্রতিটি অঙ্গ দ্বারা যত পাপ সংগঠিত হয়েছে সব ধুয়ে-মুছে খোদা দূর করে দিয়েছেন। তিনি রাহমানুর রাহীম! তিনি সব পারেন।
২. নামাজের মধ্যে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা। এক সাহাবী যথার্থভাবে নামাজ আদায় করছিল না। তাকে সতর্ক করতে গিয়ে হজরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হাদিসে বলেছেন, "অতঃপর তুমি রুকু কর ধীর ও শান্তভাবে, তারপর সোজা হয়ে দাঁড়াও। এরপর সেজদা কর ধীর ও শান্তভাবে।" (বুখারি ও মুসলিম।)
এখানে রাসুল সাঃ বুজিয়েছেন, আপনি রুকুতে যতক্ষন থাকবেন রুকু থেকে দাঁড়িয়ে ঠিক ততক্ষণ অপেক্ষা করুন। তারপর সেজদায় যান। সেজদায় যতক্ষন থাকবেন, সেজদা থেকে উঠে ঠিক ততক্ষন বসুন। তারপর আবার ২য় সেজদা। অর্থ্যাত, রুকু-সেজদায় যতক্ষণ থাকবেন রুকু হতে দাঁড়িয়ে এবং দু'সেজদার মাঝামাঝি সময়টা ততটাই দীর্ঘ করতে হবে। নামাজে এই তারতিল হতে আমরা সাধারণত সিংহভাগ মুসল্লিই বিমুখ বলা গেলে চলে। আশ্চর্যের বিষয়! এলাকার একটা মসজিদের ইমামকেও এই আমলটুকু করতে দেখিনি। তাহলে মানুষ নামাজের মধুর স্বাদ কিভাবে আস্বাদন করবে!
৩. খোদার কাছে নিজেকে পূর্ণরূপে সমর্পণ করা।
ক. আল্লাহু আকবার বলে হাত তুলে আপনি নামাজে দাঁড়িয়ে গিয়েছেন। এবার একটু ভাবুনতো। দুনিয়ার কোনো আদালতের কাঠগড়ায় যদি আপনাকে হাজির করা হয়, তখন আপনার ভেতরের অবস্থা কেমন হবে..? আপনার সকল নিয়ন্ত্রণ তখন কালো গাউন পরিহিত সেই জজের হাতে। তার সামনে আপনি অসহায়।
আপনি এখন দাঁড়িয়ে আছেন জগত স্রষ্টার দরবারে। কত জঘন্য পাপইনা আপনি করেছেন। তিনি তার সবটাই জানেন। তিলসম পাপও আপনি লুকোতে পারবেননা।
খ. আমার রবের কুদরতি পায়ে রুকুতে নুয়ে গিয়েছেন। এবার আপনার পাপের স্বীকৃতি দিন। খোদা! আমিতো পাপী। তোমার কাছে স্বীকার না করলে আর কার কাছেইবা করবো!
গ. রুকু থেকে উঠে সোজা দাঁড়িয়েছেন। এবার স্রষ্টার কাছে নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার ঘোষনা নিন। আপনার পাপের ফলে যারা আর্থিক বা শারীরিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের যতটুকু আপনার পক্ষে সম্ভব ক্ষতিটা মিটিয়ে দেয়ার ওয়াদা করুন।
ঘ. এইবার সেজদা। ভাবুন আপনি আপনার মাথা খোদার কুদরতি পায়ে ঠেকিয়ে দিয়েছেন। হৃদয়ের সকল আকুতি দিয়ে খোদার কাছে মাফ চান। তিনি রাহমানুর রাহীম। অতীব ক্ষমাশীল!
৪. নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় হৃদয়ে কঠোরচিত্তে বিশ্বাস করতে হবে খোদা আপনাকে দেখছেন। আপনার প্রতিটি কথা তিনি গুরুত্ব নিয়ে শুনছেন। আপনার প্রতিটি আকুতি তিনি বিবেচনায় রাখছেন।
আর লিখতে পারছিনা। আঙ্গুল গুলো ব্যথা করছে। একবার এই নির্দেশনা গুলো আমল করে দেখুনইনা। নামাজ পড়ে অন্যরকম এক তৃপ্তি পাবেন। যে নামাজ আপনাকে খোদার কাছাকাছি পৌঁছে দিবে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০২৩ রাত ৮:৪৯