কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে ভাষাসৈনিক অলি আহাদের জানাজার নামাজ পড়া নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। শহীদমিনারের মতো অসম্প্রদায়িক মিলনস্থলে জানাজার নামাজ পড়ার বিষয়টিকে জাতীয় ‘মূল্যবোধ বিরোধী’ বলে মনে করছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। এর পেছনে ‘সাম্প্রদায়িক শক্তির হাত’ রয়েছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন তারা।
গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রনায়ক ভাষাসৈনিক অলি আহাদ। শনিবার বাদ জোহর কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে তার প্রথম নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাদ আসর জাতীয় মসজিদ বাইতুল মোকাররমে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।
শহীদমিনারে অলি আহাদের জানাজার নামাজ পড়ার বিষয়টিকে ভালভাবে নেননি দেশের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, দেশের সরকার যখন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে ঠিক সেই মুহূর্তে এ ধরনের কার্যক্রম জাতীয় ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করেছে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকার মধ্যে হওয়ার কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠানের আগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয়। অথচ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আগে থেকে কিছু জানতো না বলে জানানো হয়।
এ ব্যাপারে এক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক দেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে বলেন, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কোন সভা-সমাবেশ করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতির প্রয়োজন হয়। অথচ ভাষাসৈনিক অলি আহাদের মরদেহ শহীদমিনারে নেওয়ার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কিছু জানানো হয়নি। সেখানে তার জানাজার নামাজ পড়ার বিষয়টিও আমরা অবগত ছিলাম না।
শহীদ মিনারে জানাজা অনুষ্ঠানকে ‘জাতীয় মূল্যবোধ বিরোধী’ উল্লেখ করে ঢাবি ভিসি বলেন, শহীদ মিনার পবিত্রস্থান। অসম্প্রাদায়িক মিলনস্থল। এটি সকলের জন্য। এখানে জানাজার নামাজ পড়া কোনভাবেই ঠিক হয়নি।
এ ঘটনায় শহীদমিনারের নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয় কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে ড. আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এ ঘটনায় শহীদমিনারের নিরাপত্তায় কোনো ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি না। এটি একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা। আমি অনুরোধ করবো ভবিষ্যতে কেউ যেন এমনটি না করেন।
এদিকে এ ঘটনাকে ‘সাম্প্রদায়িক শক্তির ষড়যন্ত্রের’ অংশ বলে অভিযোগ করেছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসূফ বাচ্চু। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এটা নিশ্চিত যে শহীদমিনার জানাজার জায়গা নয়। এটি সাম্প্রদায়িক শক্তির ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ। শহীদমিনারের পবিত্রতা নষ্ট করতে তারা এটি ঘটিয়েছে।
ভাষাসৈনিক হিসেবে অলি আহাদের জানাজা শহীদমিনারে হওয়াকে কতটুকু যৌক্তিক বলে মনে করেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বিশিষ্ট এ সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বলেন, আমি এটিকে একেবারেই যৌক্তিক বলে মনে করছি না। এ ঘটনায় শহীদমিনারের রক্ষণাবেক্ষণ প্রশ্নের মুখে পড়ে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
প্রতিবেদনটি ঢাকা টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


