'এই তোর নাম কি?'
'মহাপুরুষ'
'কি মহাপুরুষ! মহাপুরুষ আবার কারো নাম হয় নাকি? ফাইজলামি কর?'
'আমি মহাপুরুষ স্যার'
'এই নাম কি তোর বাবায় রেখেছে?'
'না, আমিই রেখেছি।'
'নিজের নাম কেউ নিজে রাখে?'
'জানিনা স্যার। কিন্তু আমি রেখেছি। '
'কিন্তু সাধারন মানুষ কি কখনো মহাপুরুষ হতে পারে? '
'পারে। কেউ অসাধারন হয়ে জন্মায় না স্যার। চাইলেই হওয়া যায়।'
'যাও বসো।'
সোবহান স্যারের সাথে কেউ কখনো এভাবে কথা বলার সাহস পায়নি। কিন্তু নতুন ছেলেটা ক্লাসে এসেই সবাইকে কেমন ভড়কে দিলো। আমি কেমন যেন মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মহাপুরুষ -এ আবার কেমন নাম। এই শব্দের যে কতটা ওজন তা কি ও জানে। আমি একটু মুগ্ধ হলেও অনেকটাই ঈর্ষান্বিত। এটা আমাদের একটা স্বভাব বটে। অন্যের প্রতিভাকে হঠাত করে স্বীকার করে নিতে চাইনা। অথচ নিজে কিছুই পারিনা।
কয়েক দিনের মধ্যেই ছেলেটা সবার মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে গেল। ও খুব মজা করে গল্প করতে পারে। মজার কিছুই নেই এরকম একটা নিরস গল্প বলেও সব্বাইকে হাসাতে পারে। কারণ ওর কথা বলবার সুন্দর ধরন।
সেদিন অংক স্যার অসুস্থতার জন্য স্কুলে আসেনি। আমদের আনন্দ দেখে কে! ক্লাসে এলেন বাংলা স্যার। নানান গল্প শোনাচ্ছেন। হঠাত স্যার সবাইকে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করা শুরু করলেন, কে কি হতে চায়? একেক জনের একেক রকম ইচ্ছা। কেউ ডাক্তার তো কেউ ইঞ্জিয়ার। কেউবা সহজ সরল মাস্টার। অনেকে তো লজ্জায় কিছুই বলতে পারলনা। আমি তো বুক উঁচিয়ে বললাম, পাইলট হব স্যার। ক্লাসে একমাত্র আমিই পাইলট হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করায় স্যারও খুশি। এরই মধ্যে মহাপুরুষ বলে উঠলেন,আমি জোনাকির ব্যাবসা করব স্যার। সবারই কয়েক মুহূর্ত সময় লাগল বিষয়টা বুঝতে। তারপর গোটা ঘরময় হাসির রোল পড়ে গেল। স্যার সবাইকে থামিয়ে অবাক চোখে প্রশ্ন করলেন, কেন তুমি জোনাক পোকার ব্যাবসা করতে চাও। আরও তো অনেক ব্যাবসা আছে সেগুলি নয় কেন? উত্তরে সে বলেছিল, জোনাকির আলোয় আমরা হারিয়ে যাবার সপ্ন দেখি সবাই। প্রেয়সীর কপালে দিতে চাই জোনাকির টিপ। ড্রিম লাইটের আলোর বদলে ঘরময় চাই জোনাকির ছুটোছুটি। কিন্তু ব্যস্ততায় হোক আর আলস্যতার কারণেই হোক এ সপ্ন আমরা কেউ পূরণ করতে পারিনি। আমি তাই একজন মানুষ হয়ে মানুষের কাছে নিয়ে যেতে চাই তার নিত্যদিনের স্বপ্নটাকে। তার হাতে এক দঙ্গল জোনাকি তুলে দিয়ে বলতে চাই, নিন স্বপ্ন এবার সত্যি করুন।
আমরা সবাই হা করে গিলছিলাম ওকে। এমন কথা কেউ কখনো শোনেনি। স্যার কেবল তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, একদিন অনেক বড় হবে তুমি। অনেক বড় মানুষ হবে। আর আমি মনে মনে বলেছিলাম, তুই সত্যিই একটা মহাপুরুষ।
এরপর কিছুদিন কেটে গেছে। ও আমাদের মহাপুরুষ বানানোর ব্রিথা চেষ্টা করছে। আমরাও কিছুটা মানুষ হচ্ছি। কিন্তু হঠাতই একদিন সে অন্যত্র চলে গেল। ঠিক কোথায় গেল জানতে পারিনি। অনেক খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি। আমি আজ পাইলট না হলেও ভালো ব্যাবসা করি। পরে যদিওবা মনে হয়েছিল জোনাকির ব্যাবসা করা যায়, কিন্তু আমি যে মহাপুরুষ হতে পারিনি। আমি কি করে পারব? এতো কেবল মহাপুরুষের পক্ষেই সম্ভব। ওর সাথে আমাদের কারোরই দেখা হয়নি কখনো। তাই আমরা কখনোই জানতে পারিনি, ও জোনাকির ব্যাবসা করতে পেরেছে কিনা!
আমার একটু মাথা ঝিমঝিম করছিল। তাই মাথাটা নাড়ছিলাম চারপাশে। কিন্ত হঠাতই মনে হল কে যেন বলছে, 'জোনাকি লাগবে, জোনাকি।'
আমি অবচেতেই রাস্তার দিকে ছুটতে লাগলাম......

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



